
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) এবং বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) উপাচার্য নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয় গত ৪ জুন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। আবেদনের শেষ তারিখ ছিল ২৬ জুন। গত ২৪ জুলাই কুয়েটে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হলেও এখনও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেনি সরকার। এতে শিক্ষা, গবেষণা ও প্রশাসনিক কাজে গতি আসছে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
গত ১৩ মে শিক্ষার্থীদের ২৯ দিন আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিনকে অব্যাহতি দেয়। এদিন অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তৌফিক আলম। তাকে দিয়েই চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক, কোষাধ্যক্ষ ও অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম।
অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্যের দায়িত্ব হলো, একটি সাময়িক ব্যবস্থা, যিনি পূর্বসূরির পদ খালি থাকা অবস্থায় বা স্থায়ী নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত স্বল্প সময়ের জন্য দায়িত্ব পালন করেন। তার কাজের সীমাবদ্ধতা না থাকলেও তিনি সাধারণত দীর্ঘমেয়াদী কিংবা বড় ধরনের সিদ্ধান্ত নেন না। তার মূল উদ্দেশ্য হলো পরবর্তী পূর্ণকালীন উপাচার্য নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালু রাখা, যেন স্বাভাবিক কার্যক্রমে বিঘ্ন না ঘটে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান-নির্বাহী পদটি কার্যত শূন্য থাকায় স্থবির হয়ে পড়েছে প্রশাসনিক কার্যক্রম। স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ না দেওয়ায় প্রশাসনিক বিভিন্ন পদে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের ভেতরে অনাস্থা বাড়ছে। কেউ কেউ অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্যের অধীনে প্রশাসনিক কাজ করতে অনীহা প্রকাশ করেছেন।
জানা গেছে, অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্যের দায়িত্ব হলো, একটি সাময়িক ব্যবস্থা, যিনি পূর্বসূরির পদ খালি থাকা অবস্থায় বা স্থায়ী নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত স্বল্প সময়ের জন্য দায়িত্ব পালন করেন। তার কাজের সীমাবদ্ধতা না থাকলেও তিনি সাধারণত দীর্ঘমেয়াদী কিংবা বড় ধরনের সিদ্ধান্ত নেন না। তার মূল উদ্দেশ্য হলো পরবর্তী পূর্ণকালীন উপাচার্য নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালু রাখা, যেন স্বাভাবিক কার্যক্রমে বিঘ্ন না ঘটে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পর্যায়ের নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত। সরকারকে সতর্কতার সঙ্গে নিয়োগ দিতে হয়। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রাষ্ট্রের অন্যতম স্পর্শকাতর জায়গা। বাস্তবতা হলো একজন প্রজ্ঞাবান, যোগ্য, সৎ অ্যাকাডেমিশিয়ান খুঁজে বের করে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া সময় সাপেক্ষ। তাই সরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য নিয়োগ দেওয়ার প্রথা প্রচলন চালু করে।
শিক্ষার্থীরা জানান,গত তিন মাস যাবৎ অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য দিয়ে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় একই দিনে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। যার মধ্য তারা একটিতে উপাচার্য দিয়েছে। কিন্তু বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়কে বঞ্চিত রেখেছে। সংশ্লিষ্টদের উচিৎ দ্রুত স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকট নিরসন করা।
গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সিয়াম সাহারিয়ারের ভাষ্য, ‘স্থায়ী উপাচার্য না থাকায় স্থবির আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্যক্রম। স্থায়ী উপাচার্য না থাকায় দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নমূলক কোনও কাজ হচ্ছে না। যেখানে শিক্ষক সংকট তো আছেই। শিক্ষক নিয়োগও বলা যায় স্থবির হয়ে আছে। আশা করি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় আমাদের অতি শিগগিরই স্থায়ী উপাচার্য দেবেন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছেন, উপাচার্য নিয়োগ প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। অনেক সময় নতুন উপাচার্য নিয়োগ দিতে সরকার চার-পাঁচ মাস সময় নেয়, যা অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহীর পদ, অথচ নিয়োগ নিয়ে কর্তৃপক্ষের বা সরকারের প্রস্তুতি, উদ্যোগ ও পদক্ষেপ দেখে মাঝে মাঝে হতাশ হতে হয়।
সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সরকার সময়মতো উপাচার্য নিয়োগ দিচ্ছে না বা দিতে পারছে না। এভাবে বিভিন্ন জটিলতা তৈরি হচ্ছে। একজন রুটিন দায়িত্বের উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ে কি করতে পারবেন আর কি করতে পারবেন না, তা নিয়ে রয়েছে মতপার্থক্য থাকে। প্রকৃতপক্ষে অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্যের সুনির্দিষ্ট কর্মপরিধির বিষয়ে কোনো নির্দেশনা নেই। তাই অনেক উপাচার্য নিজের পছন্দমতো কাজ করেন।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে রুটিন দ্বায়িত্ব থাকা উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে এম মাহবুব হাসানের বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট সভা ছাড়াই সাময়িক বরখাস্ত হওয়া এক কর্মকর্তাকে দায়িত্বে পুনর্বহাল ও পাঁচ কর্মকর্তাকে বদলির অভিযোগ উঠেছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম গতিশীল রাখতে উপাচার্য নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুত করা প্রয়োজন, বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
উপাচার্য নিয়োগে বিলম্ব হওয়ার কারণ জানতে চাইলে জীব বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. হাফিজ আশরাফুল বলেন, ‘এটা সরকারে বিষয়। আমরা সামগ্রিকভাবে যদি পুরো দেশের দিকে তাকাই, সরকার কীভাবে ফাংশন করছে, সেটা আসলে আমরা বুঝতে পারি। সরকার আসলে প্রোঅ্যাক্টিভ না হয়ে রিঅ্যাক্টিভ হচ্ছে।’
তার ভাষ্য, প্রোঅ্যাক্টিভ হলে সরকারের একটা মিশন থাকে ভিশন থাকে। আর রিঅ্যাক্টিভ হলে, যেমন কুয়েটে চলছিল না, যার কারণে ইউজিসি (ভিসি) দিয়ে দিল। আর এখানে একজন অন্তর্বর্তী উপাচার্য দিয়ে রাখছে, চলছে তো, এরকম একটা সিসুয়েশন আসলে। আসলে সরকারের এ বিষয়টি আমার পক্ষে থেকে মন্তব্য করাটা কঠিন।’