Image description

মাহমুদুর রহমান

 

ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিল্লিতে তার প্রভুর কাছে পালিয়েছেন। রাষ্ট্রবিনাশী সেই ধ্বংসযজ্ঞ থেকে সামরিক বাহিনীও রক্ষা পায়নি। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের ইতিহাস পর্যালোচনা করলেই প্রমাণিত হবে, শেখ হাসিনা ও তার পিতা শেখ মুজিব উভয়ই সামরিক বাহিনীর প্রতি যথেষ্ট বিরাগ পোষণ করতেন। শেখ মুজিবুর রহমানের সাংবাদিক বন্ধু অ্যান্থনি মাসকারেনহাস ‘Bangladesh : A Legacy of Blood’ নামে একটি বিখ্যাত বই লিখেছিলেন। শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনকাল, বাকশালের পতন এবং চট্টগ্রামে জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা-সংবলিত আশির দশকের বইটি বাংলাদেশে বহুল পঠিত। মাসকারেনহাস তার বইতে লিখেছেন, পাকিস্তান আমলের বিরূপ অভিজ্ঞতার ফলে শেখ মুজিব বাংলাদেশে কোনো শক্তিশালী সেনাবাহিনী তৈরি করতে চাননি।

ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় মাসকারেনহাসের কাছে শেখ মুজিব বলেছিলেন, ‘Sheikh Mujib told me in February that he was against a powerful military force—I don’t want to create another monster like the one we had in Pakistan.’ (ফেব্রুয়ারি মাসে শেখ মুজিব আমাকে বলেছিলেন, তিনি কোনো শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর বিপক্ষে। তার ভাষ্য ছিল, ‘আমি পাকিস্তানের মতো একটি দানব সৃষ্টি করতে চাই না।’) সেনাবাহিনীকে নিজ নিয়ন্ত্রণে রাখার উদ্দেশ্যেই শেখ মুজিব ১৯৭২ সালের জানুয়ারিতে পাকিস্তান থেকে ফিরেই ভারতের সহায়তায় সমান্তরাল দলীয় বাহিনী হিসেবে বিতর্কিত রক্ষী বাহিনী তৈরি করেছিলেন। প্রসঙ্গক্রমে এটাও উল্লেখ করা আবশ্যক, ভারতের শাসকরাও বাংলাদেশে কোনো কার্যকর সেনাবাহিনী থাকুক, সেটা কোনোদিন চাননি।

১৯৭৫ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর একাংশের অভ্যুত্থানে শেখ মুজিব সপরিবারে নিহত এবং একদলীয় স্বৈরাচারী বাকশাল শাসনব্যবস্থার পতন ঘটলে সেনাবাহিনীর প্রতি শেখ হাসিনার পারিবারিক বিরাগ আরো তীব্র হয়। তার ওপর আওয়ামী লীগের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী দল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা স্বাধীনতার ঘোষক জেনারেল জিয়াউর রহমান নিজে একজন প্রবল জনপ্রিয় সেনাপ্রধান ছিলেন, যে বিষয়টি শেখ হাসিনার সেনাবিদ্বেষের আগুনে সারা জীবন ঘি ঢেলে গেছে।

শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ এবং ভারতপন্থি বুদ্ধিজীবীরা সবসময় বিএনপিকে ক্যান্টনমেন্টে তৈরি দল বলে উপহাস ও অবজ্ঞা করেছেন। শেখ হাসিনা এতটাই সেনাবিদ্বেষী ছিলেন যে, ১৯৯১ সালে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্ব পালনকালে তিনি বাংলাদেশে নিযুক্ত তৎকালীন ভারতীয় হাইকমিশনার কৃষ্ণন শ্রীনিবাসনের কাছে সামরিক বাহিনী সম্পর্কে অত্যন্ত বিরূপ এবং সর্বৈব মিথ্যা মন্তব্য করে তাকে চমকে দিয়েছিলেন। ভারতীয় এই সাবেক কূটনীতিক বাংলাদেশে তার কার্যকাল নিয়ে ‘The Jamdani Revolution’ নামে একটি বই রচনা করেছিলেন। সেই বইতে তিনি লিখেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে ভারতের ইন্ধনে ও সামরিক সহায়তায় পরিচালিত চাকমা বিদ্রোহ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে শেখ হাসিনা উল্টো বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধেই বিষোদ্গার করে তাকে চমকে দিয়েছিলেন।

ভারতীয় হাইকমিশনারকে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, চাকমা বিদ্রোহীরা নয়, বরং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরাই পার্বত্য চট্টগ্রামে যাবতীয় সহিংসতা চালাচ্ছে! শেখ হাসিনার সেই বক্তব্য প্রকাশ্য রাষ্ট্রদ্রোহিতা হলেও বিস্ময়করভাবে আজ পর্যন্ত কোনো সরকার তার বিচার করেনি। সেনাবাহিনীর অভ্যন্তর থেকেও শেখ হাসিনার ভয়ানক দেশ ও সেনাবিরোধী মন্তব্যের কোনো প্রতিবাদ আমার দৃষ্টিতে আসেনি।

২০০৯ সালে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসেই ফেব্রুয়ারিতে ‘প্রথম রাতে বিড়াল মারার’ মতো করে শেখ হাসিনা এবং তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন খোদ রাজধানীতে বীভৎস বিডিআর হত্যাকাণ্ড ঘটতে দিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছিলেন। নিজেদের ভাইদের (Brothers-in-arms) বাঁচাতে অমার্জনীয় ব্যর্থতার মানসিক ভারে এবং নৈতিকভাবে দুর্বল সামরিক বাহিনীকে তিনি এরপর চরম দুর্নীতিবাজ জেনারেল তারিক সিদ্দিকের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে কলুষিত করেছেন এবং নিজের ও দিল্লির স্বার্থে নীতিহীন অফিসারদের ব্যবহার করেছেন।

শেখ হাসিনা তার বাছাই করা সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তাদের ঢালাও দুর্নীতির সুযোগ করে দিয়েছেন, তাদের দিয়ে ভিন্নমতাবলম্বীদের গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যা করিয়ে খুনের মামলার আসামি বানিয়েছেন, বিভিন্ন বাহিনীতে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছেন এবং দেশপ্রেমিক সামরিক বাহিনীকে জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছেন।

অবৈধ ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার কৌশল হিসেবে শেখ হাসিনা সেনাবাহিনীকে এতটাই নিচে নামিয়েছিলেন যে, জেনারেল আজিজ ও জেনারেল শফিউদ্দিনের মতো দুর্নীতিপরায়ণ, অনৈতিক ও অদক্ষ অফিসার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ‘চিফ’ হতে পেরেছিলেন, পুলিশের একজন ওসি প্রদীপ অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মেজর সিনহাকে ভুয়া এনকাউন্টারে হত্যা করে তার লাশে লাথি দেওয়ার সাহস পেয়েছিলেন এবং কক্সবাজারে সেই হত্যাকাণ্ড-সম্পর্কিত সংবাদ সম্মেলনে তৎকালীন পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদ সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজের প্রতি প্রকাশ্যে অবহেলা দেখিয়ে প্রমাণ করেছিলেন, হাসিনার আমলে পুলিশপ্রধান অধিক ক্ষমতাধর। ফ্যাসিস্ট আমলে জনগণ বিশ্বাস করতে আরম্ভ করেছিল, বাংলাদেশের সব ক্যান্টনমেন্ট ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার অবাধ বিচরণ ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। মোটকথা, সামরিক বাহিনীর কোনো সম্মান তিনি আর অবশিষ্ট রাখেননি।

শেখ হাসিনার দুষ্কর্মের ফলে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে জনগণের যে অনাকাঙ্ক্ষিত দূরত্ব এবং ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হয়েছে, সেটি দেশের স্বাধীনতার জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। যে তরুণরা জুলাই বিপ্লবে নেতৃত্ব দিয়েছে, অথবা অংশ নিয়েছে, তাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো জানে না, মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে সৃষ্ট বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর প্রতি একসময় এ দেশের জনগণের কতখানি প্রীতি ও সম্ভ্রম ছিল। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ডাকও এসেছিল একজন সেনা কর্মকর্তার কণ্ঠেই। আজও লিখতে বসে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের একটি দৃশ্য চোখের সামনে ভাসছে। আমরা কয়েকজন বুয়েটের সহপাঠী শাহবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে দেখছিলাম, একটি ট্যাংকের ওপরে জনতা ও সেনাসদস্যরা কোলাকুলি করছেন। উল্লসিত জনতা সেনাসদস্যদের গলায় ফুলের মালা পরিয়ে দিচ্ছিল। একজন সেনা কর্মকর্তা বক্তৃতা করছিলেন, আর উপস্থিত জনতা হাততালিতে ফেটে পড়ছিল। কারণ জনগণ সেদিন বিশ্বাস করেছিল, সেনাবাহিনী অসীম বীরত্বের সঙ্গে খালেদ মোশাররফের ভারত-সমর্থিত পাল্টা অভ্যুত্থান নস্যাৎ করে দেশের স্বাধীনতা রক্ষা করেছে।

১৯৯০ সালে সেনাপ্রধান জেনারেল নুরুদ্দীন খান যেদিন স্বৈরাচারী রাষ্ট্রপতি এরশাদকে জানিয়ে দিয়েছিলেন, সামরিক বাহিনী গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে, সেদিনও জনগণ দেশপ্রেমিক সামরিক বাহিনীকে অভিবাদন জানিয়েছিল। ১৯৯৬ সালেও অনেকটা ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের মতো করেই দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী জেনারেল নাসিমের ভারতপন্থি ক্যু বিফল করে দিয়ে জনগণের শ্রদ্ধার পাত্রে পরিণত হয়েছিল। সেনাবাহিনীর সঙ্গে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছিল ভারতের ইশারায় মইন-মাসুদের এক-এগারোর অভ্যুত্থানের পটভূমিতে। সেই সরকারই ভারতের সঙ্গে যোগসাজশে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল। সেই সময় থেকে দেশের রাজনীতিতে ডিজিএফআইয়ের যে অপতৎপরতা শুরু হয়েছিল, সেটি শেখ হাসিনার পতন পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। জেনারেল আমিন, জেনারেল মামুন খালেদ, জেনারেল আকবর, জেনারেল সাইফুল আবেদিন, জেনারেল হামিদ প্রমুখ সামরিক কর্তারা ব্যক্তিগত লোভ ও স্বার্থসিদ্ধির জন্য রাষ্ট্র এবং সামরিক বাহিনীর অপূরণীয় ক্ষতি করেছেন।

অপরদিকে শেখ হাসিনা নানারকম বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডে সামরিক বাহিনীকে সম্পৃক্ত করে প্রতিষ্ঠান হিসেবে তার নৈতিকতা ধ্বংস করতে চেয়েছেন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সামরিক বাহিনী শেষ পর্যন্ত ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জনগণের পক্ষে অবস্থান নিলেও ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি থেকে প্রায় ১৮ বছরের অব্যাহত জুলুমের সঙ্গে সম্পৃক্ততার ফলে জনগণের সঙ্গে সামরিক বাহিনীর আগের মতো পারস্পরিক আস্থার সম্পর্ক এখন পর্যন্ত তৈরি হতে পারেনি। এটা জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক। আমরা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে আবার ১৯৭১ সাল, ১৯৭৫ সাল, ১৯৯০ সাল এবং ১৯৯৬ সালের মতো করে নির্লোভ, অকুতোভয় ও দেশপ্রেমিক রূপে দেখতে চাই।

অনেকেই তর্ক করে থাকেন, বিদ্যমান সরকারের নির্দেশের বাইরে যাওয়ার কোনো উপায় সেনাবাহিনীর থাকে না এবং সেই কারণেই শেখ হাসিনার প্রায় ১৭ বছরের অপশাসনকালে ফ্যাসিবাদী ও ভারতের প্রতি নতজানু কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানানো বাংলাদেশের কোনো সেনাপ্রধানের পক্ষেই সম্ভব হয়নি। আমার প্রথম যুক্তি হলো, রাষ্ট্র পরিচালনার উপরোক্ত নীতিটি কেবল কোনো বৈধ সরকারের বেলায় প্রযোজ্য। ২০১৪ সালের একদলীয় ভুয়া নির্বাচনের পর যেহেতু শেখ হাসিনা কোনো বৈধ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন না, তাই তার নির্দেশ পালন সেনাবাহিনীসহ শাসনব্যবস্থার কোনো অংশের জন্যই আর বাধ্যতামূলক ছিল না। দ্বিতীয় যুক্তি হলো, কোনো বৈধ শাসকেরও মানবতাবিরোধী আদেশ, যেমন আয়নাঘর প্রতিষ্ঠার নির্দেশ পালন কোনো আইনেই বাধ্যতামূলক হতে পারে না। সুতরাং এর দায় শেখ হাসিনার সঙ্গে সব সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে অবশ্যই নিতে হবে। আমার সর্বশেষ যুক্তি, সামরিক বাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষার প্রধান পাহারাদার হওয়ার ফলে কোনো বৈধ সরকার যদি বিদেশি আধিপত্যের কাছে নতিস্বীকারের মাধ্যমে দেশের স্বার্থহানির কারণ হয়, তাহলে সেই সরকারের নির্দেশ পালন আর বাধ্যতামূলক হতে পারে না।

শেখ হাসিনার দানবীয় শাসনের ভয়ানক অভিজ্ঞতা থেকে রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক শক্তি এবং আপামর জনগোষ্ঠীর প্রয়োজনীয় শিক্ষা নেওয়া আবশ্যক। আমাদের দেশ ভৌগোলিকভাবে এক প্রবল এবং আধিপত্যবাদী প্রতিবেশী দ্বারা বেষ্টিত। সুতরাং দেশের স্বাধীনতা রক্ষা করতে হলে অবশ্যই আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না, রাষ্ট্রের সুরক্ষায় সামরিক বাহিনী এক অতি গুরুত্বপূর্ণ ও অত্যাবশ্যকীয় অংশ। সামরিক বাহিনীর কোনো কর্মকর্তার বিষয়ে জনগণের মনে প্রশ্ন উত্থাপিত হলেও আমরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে সেটিকে দুর্বল কিংবা প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারি না। স্বাধীনতার পর থেকে আমাদের আঞ্চলিক শক্তিধর প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে কোনো শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর উপস্থিতি দেখতে চায়নি। আমার মনে আছে, স্বাধীনতার পর এমন প্রস্তাবও আলোচিত হয়েছিল যে, বাংলাদেশ সুইজারল্যান্ডের মতো হবে, যেখানে কোনো সেনাবাহিনী থাকবে না। দেশের অভ্যন্তরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য কেবল পুলিশের প্রস্তাব করা হয়েছিল। বাংলাদেশকে নিরাপত্তা প্রদানের নামে দিল্লির শাসকশ্রেণি আমাদের দেশকে ভুটানের মতো অঘোষিত উপনিবেশে রূপান্তরিত করার স্বপ্ন দেখেছিল।

বাংলাদেশের ভারতপন্থি বুদ্ধিজীবীরাও অতীতে বিভিন্ন সময় সভা-সেমিনারে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সামরিক বাহিনীর জন্য খরচের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে দরিদ্র দেশে এর উপযোগিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার চেষ্টা করেছেন। আমার বিবেচনায় এসবই দেশবিরোধী বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ। বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ হুমকি মোকাবিলা করার জন্য আমাদের অবশ্যই একটি দক্ষ ও দেশপ্রেমিক সামরিক বাহিনী থাকতে হবে। তবে সেই সেনাবাহিনী যেন ফ্যাসিবাদী আমলের মতো আর কখনো বিদেশি আধিপত্যবাদের অনুগামী হয়ে নিজ দেশের জনগণের ওপর নির্যাতনের হাতিয়ারে পরিণত না হয়, সেটাও নিশ্চিত করা আবশ্যক।

আমার জানামতে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সেনাবাহিনীর সংস্কারের জন্য কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি, যা হতাশাজনক। আগামী নির্বাচনের আগে বর্তমান সরকারের হাতে এই অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজটি নিষ্পন্ন করার আর সুযোগ অথবা সময় নেই। আমি আশা করব, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে সব স্টেকহোল্ডারকে সঙ্গে নিয়ে সেনাবাহিনী সংস্কারের কাজটি গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করবে। ইনশাআল্লাহ, দেশের দেশপ্রেমিক জনগণ এবং সামরিক বাহিনী ঐক্যবদ্ধভাবে স্বাধীনতা ও রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতার বিরুদ্ধে সব হুমকি সফলভাবে মোকাবিলা করবে।