Image description

মাহমুদুর রহমান

 

প্রতি বুধবার প্রকাশিত আমার মন্তব্য প্রতিবেদন পত্রিকায় ছাপা শুরু হয় আগের রাতের দ্বিতীয় প্রহরে। আজ আমার যে লেখা ছাপা হয়েছে, সেটি ৫ আগস্ট লেখা। ঠিক এক বছর আগে এই দিনে ফ্যাসিস্ট হাসিনা বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক জনগণের এক অবিস্মরণীয় ও রক্তাক্ত বিপ্লবে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়ে প্রভুর দেশে পালিয়ে গিয়েছিলেন।

জুলাই বিপ্লবের শহীদদের প্রতি আমার দেশ পরিবারের পক্ষ থেকে এবং ব্যক্তিগতভাবে আমি অসীম শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। দেশকাঁপানো ৩৬ দিনের সব আহত এবং যারা ভাগ্যক্রমে আহত হননি, সেইসব যোদ্ধার প্রতি আমার সালাম, সমবেদনা ও অভিনন্দন।

ছাত্রদের নেতৃত্বে বাংলাদেশের তরুণরা সারা বিশ্বের নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর জন্য সাহস ও আত্মত্যাগের এক অনন্য নজির সৃষ্টি করেছে। সম্পূর্ণ নিরস্ত্র তরুণ বিপ্লবীরা অকুতোভয়ে ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রের মারণাস্ত্রের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা একেকজন বিশ্ববিপ্লবের ইতিহাসের সব নতুন নায়ক।

বিপ্লবোত্তর বাংলাদেশে প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তি নিয়ে নানারকম বিতর্ক রয়েছে। আমি আজ অতীত নয়, বরং বর্তমান ও ভবিষ্যতের দিকে দৃষ্টিপাত করতে চাচ্ছি। আমার বিবেচনায়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দৈনন্দিন সরকার পরিচালনা ছাড়া মোটাদাগে চারটি প্রধান দায়িত্ব ছিল—এক নম্বর, শহীদ পরিবারের পাশে দাঁড়ানো এবং আহত জুলাইযোদ্ধাদের যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা ও পুনর্বাসন; দ্বিতীয়ত, গণহত্যাকারী ও তাদের দোসরদের কৃতকর্মের বিচার শুরু করা; তৃতীয়ত, আর কখনো কোনো ফ্যাসিবাদ যাতে এই দেশে ফিরে আসতে না পারে, সেই লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কারের বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য স্থাপন এবং তদনুসারে ভবিষ্যৎ শাসনব্যবস্থার রূপরেখা প্রণয়ন এবং সর্বশেষ, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় প্রত্যাবর্তন।

আমি মনে করি, উল্লিখিত চারটি লক্ষ্যের মধ্যে শেষেরটি ছাড়া বাকি তিনটি পুরোপুরি সম্পন্ন করে যাওয়া বর্তমান সরকারের পক্ষে সম্ভব হবে না। রিলে রেসের মতো করে ড. ইউনূস তার হাতের শাসনদণ্ডটি আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিজয়ী দলের হাতে অর্পণ করবেন, যাতে সেই দলের গঠিত সরকার অনিষ্পন্ন দায়িত্বগুলো সম্পন্ন করার মাধ্যমে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করে। দুর্ভাগ্যবশত দেখতে পাচ্ছি, বিভিন্ন মহল সেই আকাঙ্ক্ষিত নির্বাচনটি নিয়ে জনমনে অনর্থক এক ধরনের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সন্দেহ উৎপাদনের চেষ্টা করছে, যা পলাতক ফ্যাসিবাদ ও তাদের বিদেশি প্রভুকে বাংলাদেশে মারাত্মক অস্থিতিশীলতা তৈরির সুযোগ করে দিচ্ছে।

গত বছর ৮ আগস্ট ড. ইউনূস ক্ষমতা গ্রহণ করার মুহূর্ত থেকেই দিল্লি সর্বপ্রকারে তার সরকার পরিচালনায় বাধা সৃষ্টির চেষ্টা করে চলেছে। আমাদের পণ্য রপ্তানির ওপর নানারকম শুল্ক ও অশুল্ক বাধা সৃষ্টি, সীমান্তে অব্যাহত বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যা, ভারতের বাঙালি মুসলমানদের জোর করে বাংলাদেশে পুশ ব্যাক, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতীয় এজেন্টদের দিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানো, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ভুয়া সংখ্যালঘু কার্ড ব্যবহার প্রভৃতি নানা উপায়ে ভারতীয় শাসকগোষ্ঠী বাংলাদেশ সরকারকে ব্যর্থ করতে চেয়েছে। তাদের হীন প্রচেষ্টা যে এখন পর্যন্ত সফল হয়নি, এটা মহান আল্লাহ তায়ালার আমাদের প্রতি বিশেষ রহমত।

অথচ হাসিনার পলায়নের পর অতীতের কর্মকাণ্ড বিবেচনায় ড. ইউনূসকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান হিসেবে ভারত সরকারের স্বাগত না জানানোর কোনো যুক্তিসংগত কারণ ছিল না। ড. ইউনূস নামটি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্যে সর্বাধিক পরিচিত। শেখ হাসিনার একটা বিশেষ হিংসা ও ক্রোধের ব্যাপার ছিল যে, বিদেশের অনেক সাধারণ মানুষ শেখ মুজিবকে চেনেন না, অথচ প্রফেসর ইউনূসকে চেনেন। ড. ইউনূসকে কস্মিনকালেও কেউ আমাদের মতো ইসলামপন্থি বলেননি; বরং সারা জীবন তার ওঠাবসা তথাকথিত সেক্যুলারদের সঙ্গেই ছিল।

আমার মনে পড়ছে, ২০০৬ সালে ড. ইউনূস নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর সংবর্ধনা মঞ্চে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতের একনিষ্ঠ সমর্থক ইসলামবিদ্বেষী ড. জাফর ইকবাল তাকে সেই সময় বেশ আবেগের সঙ্গে সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করে দেশ রক্ষার আহ্বান জানিয়েছিলেন। এখন তবে কেন দিল্লি তার ওপর এতটা খাপ্পা হয়ে উঠেছে? আমার ধারণা এই বৈরী ব্যবহারের প্রধান কারণ ভারতের বশ্যতা স্বীকারে ড. ইউনূসের অসম্মতি। সরকারপ্রধান হয়ে তিনি সাহসিকতার সঙ্গে দিল্লির যাবতীয় হুমকি মোকাবিলা করেছেন এবং মোদির চোখে চোখ রেখে কথা বলেছেন। গত এক বছরে ড. ইউনূস ভারতের প্রভাব উপেক্ষা করে দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে বাংলাদেশের জন্য একটি স্বতন্ত্র অবস্থান তৈরি করতে পেরেছেন। ভারত এখন তাই নতুন ষড়যন্ত্র নিয়ে মাঠে নেমেছে।

সম্প্রতি আমরা দেখতে পাচ্ছি, বাংলাদেশের চিহ্নিত ভারতপন্থি মিডিয়া, সুশীল গোষ্ঠী ও ব্যবসায়ী অলিগার্করা ইউনূস সরকারকে সরিয়ে আরেকটি এক-এগারো মার্কা সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছে। ‘আগেই ভালো ছিলাম’ বয়ান ফেরি করে এরা জনগণকে প্রতিনিয়ত উসকানি দেওয়ার চেষ্টা করছে। যারা এই কথা বলে, ধরে নেবেন তারা সবাই প্রকৃতপক্ষে শেখ হাসিনার দানবীয় ফ্যাসিবাদী শাসনের সমর্থক এবং ভারতীয় ‘ডিপ স্টেটের’ সঙ্গে সম্পর্কিত। এক মাস ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের শুল্ক নিয়ে দর কষাকষি চলছিল।

ওয়াশিংটন হুমকি দিয়ে রেখেছিল, বাণিজ্য আলোচনা অসফল হলে সে দেশে আমাদের রপ্তানি পণ্যের ওপর এ বছর ১ আগস্ট থেকে অতিরিক্ত ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ হারে শুল্ক বসানো হবে। সেই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী-ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী নেতারা ওপারের ইঙ্গিতে বলতে শুরু করেছিলেন, বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনায় ‘এমন দুর্দিন’ নাকি গত ৪০ বছরে আর আসেনি। অথচ গত এক বছরে মুদ্রাস্ফীতি কমেছে, রেকর্ড রেমিট্যান্স এসেছে, রেকর্ড রপ্তানি হয়েছে এবং ফ্যাসিবাদের দায়দেনা শোধ করে বিওপিতে (Balance of Payment) রেকর্ড উদ্বৃত্ত হয়েছে। যে ব্যবসায়ী নেতা উপরোক্ত উক্তি করেছেন, তিনি পলাতক ফ্যাসিস্ট শাসকের এতটাই প্রিয় ছিলেন যে, মৃত্যুর পরেও শেখ হাসিনাকে তিনি আগাম চেয়ে রেখেছেন এবং ২০২৪ সালের ‘আমি-ডামি’ নির্বাচনে ভুয়া সংসদ সদস্য হয়েছিলেন।

তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে অন্যান্য সুশীল ও সমগোত্রীয় অর্থনীতিবিদরা ড. ইউনূসকে এখনই ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার দাবি তুলেছেন। কেউ কেউ জরুরি ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন। দুর্ভাগ্যবশত ক্ষমতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েও কতিপয় অর্বাচীন রাজনীতিবিদ এদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে, বুঝে অথবা না বুঝে, টকশোতে ‘আগেই ভালো ছিলাম’ জাতীয় বক্তব্য দিচ্ছেন। এসব ব্যক্তির প্রচারণার সঙ্গে আমরা যদি সম্প্রতি ফাঁস হয়ে যাওয়া একাধিক কর্মরত সেনা কর্মকর্তার রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতার ঘটনা মেলাই, তাহলে বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের অব্যাহত ষড়যন্ত্রের বিষয়টি অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে যাবে। গত এক বছরে ফ্যাসিবাদের ঘাঁটি গোপালগঞ্জে যা ঘটেছে, সেখান থেকে বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক জনগণের বিশেষভাবে সতর্ক হওয়া উচিত। ড. ইউনূস সরকারের অন্যতম ব্যর্থতা হলো, ওই বিশেষ জেলা থেকে গত ১৫ বছরে যেসব ব্যক্তি সরকারি চাকরি, বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন, তাদের চিহ্নিত করতে না পারা। পুলিশ, এনএসআই ও সেনাবাহিনীতে তাদের বিপজ্জনক অনুপ্রবেশ ঘটেছে।

ড. ইউনূসের সঙ্গে তারেক রহমানের লন্ডন বৈঠকে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচনের একটা সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়ার পর আমরা আশা করেছিলাম, গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে সব আশঙ্কা মিটে গেছে এবং সেই সময় পর্যন্ত রাষ্ট্র পরিচালনায় আর কোনো বিঘ্ন ঘটবে না। লন্ডন বৈঠকের পর উপদেষ্টাসহ সরকারের অন্যান্য মুখপাত্র তাদের বক্তব্যে ঘোষিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে ধারাবাহিকভাবে আশ্বস্ত করেছেন। সেই থেকে আমার একাধিক লেখায় মন্তব্য করেছি, দেশে ও বিদেশে ড. ইউনূসের ভাবমূর্তি ধরে রাখতে হলে অবশ্যই ফেব্রুয়ারিতে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হচ্ছে কিনা, বিভিন্ন মহল থেকে এ-জাতীয় প্রশ্নের সম্মুখীন হলে আমি সবসময় বলে থাকি, ড. ইউনূস প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবেন বলেই আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

এ অবস্থায় যে গোষ্ঠী এখন সরকার পরিচালনায় বাধা সৃষ্টি করছে এবং ‘আগেই ভালো ছিলাম’ জাতীয় প্রচারণা চালাচ্ছে, তারাই প্রকৃতপক্ষে নির্বাচনে বিঘ্ন সৃষ্টি করে দেশে এমন এক অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে চায়, যার ফলে ভারতের প্রতি অনুগত একটি তথাকথিত ‘এক-এগারো – দুই’ সরকার প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়। একই গোষ্ঠী ২০০৭ সালে এক-এগারো সরকারের আগমনকে উৎসাহিত করে বাংলাদেশে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা এবং ভারতের নিরঙ্কুশ আধিপত্য বিস্তারের সুযোগ সৃষ্টি করেছিল।

ভারতের ডিপ স্টেট কখনোই বাংলাদেশে কোনো দেশপ্রেমিক ও ব্যক্তিত্ববান শাসককে ক্ষমতাসীন দেখতে চায় না। এজন্যই রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে শহীদ হতে হয়েছে এবং বেগম খালেদা জিয়াকে ভূরাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার হতে হয়েছে। উভয়ই অত্যন্ত ব্যক্তিত্বসম্পন্ন শাসক ছিলেন। গত বছর বিপ্লবের পর ড. ইউনূসকে তার ব্যক্তিত্বের কারণেই সরকারপ্রধান করতে দ্বিধা করা হয়েছিল। শেখ হাসিনার পলায়নের পর দিল্লি চেয়েছিল এমন একজন দুর্বল ব্যক্তি সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করুক, যাকে অতি সহজে হাসিনার মতো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ও ব্যক্তিগত সুখ্যাতির কারণে ড. ইউনূসকে মুষ্টিবদ্ধ করে ভারতের ইচ্ছামতো পরিচালনা করা সম্ভব হবে না—এটা সে দেশের নীতিনির্ধারকরা প্রথম থেকেই বুঝতে পেরেছিলেন।

অতএব ভারতের শাসকশ্রেণি কখনোই চাইবে না—‘একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশে বিতর্কহীন একটি গণতান্ত্রিক সরকার গঠিত হোক।’ সেই আগামী সরকারপ্রধান যে-ই হোন না কেন তাকে বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক জনতার আকাঙ্ক্ষা মেনে নিয়েই সরকার চালাতে হবে। দীর্ঘ ছয় বছর নির্বাসনে থাকার পর দেশে ফিরে আমি যে বাংলাদেশকে চিনেছি—সে দেশের জনগণ ভারতীয় হেজেমনি ও ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা কোনো অবস্থাতেই আর মেনে নেবে না বলেই আমার ধারণা জন্মেছে। ভারতের দাদাগিরির বিষয়ে তরুণ জনগোষ্ঠীর এমন সুদৃঢ়, আপসহীন ও লড়াকু মনোভাব আমি স্বাধীনতার পর অর্ধশতাব্দীর অধিক কালের মধ্যে কখনো দেখিনি।

জীবনের পড়ন্ত লগ্নে বাংলাদেশের তরুণদের অনমনীয় ও নিখাদ দেশপ্রেম আমাকে উজ্জীবিত করে। তাদের নানারকম বিচ্যুতিতে কষ্ট পেলেও আমি জোর গলায় বলে যাব, দেশপ্রেমের পরীক্ষায় তারা উত্তীর্ণ হয়েছে। বিএনপির কার্যত প্রধান নেতা দীর্ঘ ১৮ বছর নির্বাসনে থাকায় বাংলাদেশের জনগণের রাজনৈতিক চিন্তার বৈপ্লবিক পরিবর্তন সম্পর্কে কতটা অবহিত আছেন, তা আমার জানা নেই। দেশে অবস্থানরত বিএনপির নেতারা তাদের নেতাকে কী পরামর্শ দিচ্ছেন, সেটাও আমজনতার জানার কোনো উপায় নেই। তবে ভারত ও ইসলাম প্রশ্নে দলটির কোনো কোনো নেতার বিস্ময়কর বক্তব্যে আমরা যেন পতিত ফ্যাসিবাদের জাতি বিভক্তকারী বয়ানের পুনরাবৃত্তি শুনতে পাচ্ছি।

তারেক রহমান যদি এ-জাতীয় বয়ান দ্বারা প্রভাবিত হন, তাহলে দেশে ফেরার পর তিনি ভয়ংকর সাংস্কৃতিক আঘাতের (Cultural Shock) সম্মুখীন হবেন। একজন বাস্তববাদী নেতা হিসেবে তিনি নিশ্চয়ই মানবেন, তার দলের তরুণ কর্মীরা সারা দেশের তরুণদের ভগ্নাংশ মাত্র। দেশে ফিরে দলীয় গণ্ডির বাইরের তরুণদের মনোভাব তিনি উপলব্ধি করতে পারবেন, এ প্রত্যাশা করি।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে আগামী নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। আমার আশঙ্কা, আগত শাসকদলের নীতিনির্ধারকরা জনগণের নাড়ির স্পন্দন শুনতে ব্যর্থ হলে সেটা দেশের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। যে তরুণ প্রজন্মের রক্তের বিনিময়ে আমরা দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হতে পেরেছি, তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা অবহেলা করার দুর্মতি কোনো ভবিষ্যৎ শাসকের যেন না হয়—এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করে আজকের এই ঐতিহাসিক দিনের লেখা শেষ করছি। বিপ্লব সম্পন্ন হোক, দীর্ঘজীবী হোক।