
ড. ফয়সাল কবীর শুভ
তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের আহ্বানে ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ শিরোনামে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের ৫ টি জেলায় হয়ে গেলো গত সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) থেকে ৪৮ ঘণ্টাব্যাপী এক অবস্থান কর্মসূচি। এই কর্মসূচিতে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, এমনকি লন্ডন থেকে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও ভার্চুয়ালী যোগ দেন। বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের নতজানু ভারত নীতির কারণে তিস্তা পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত উত্তরের জেলাগুলোর ভুক্তভোগী মানুষগুলোর প্রাণের দাবির পক্ষের এই কর্মসূচি বিএনপি এর একটি ভবিষ্যৎমুখী, কল্যাণকর রাজনীতির ভাবমূর্তিই প্রকাশ করে । গত বছরের ৫ ই আগস্ট স্বৈরাচারী হাসিনার পতনের পর রাজনীতির একটা মহল এবং তাদের অনুসারীরা সোশ্যাল মিডিয়াতে চেষ্টা করছে বিএনপি’র কিছু শীর্ষস্থানীয় নেতাকে ভারতপন্থী হিসেবে মনগড়া প্রচার করতে। ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ কর্মসূচি এবং বিএনপি’র শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণ বাংলাদেশের মানুষের বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের মানুষের মধ্যে যে দলটির ব্যাপারে গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে দিয়েছে, তা লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতিই জানিয়ে দেয়। বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এটাই হওয়া উচিত ছিল গত সপ্তাহে মূল আলোচনার বিষয়, অথচ আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে গেলো খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) সংঘটিত রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা।
কুয়েটের এই সংঘর্ষের ঘটনার বিশ্লেষণে বিভিন্ন ন্যারেটিভই সোশ্যাল মিডিয়াতে এসেছে, তবে মোটাদাগে প্রধান মিডিয়াগুলোতে যেটা এসেছে সেটা হলো এই সংঘর্ষ হলো ছাত্রদল ও সাধারণ ছাত্রদের মধ্যে যেখানে বহিরাগত তথা স্থানীয় যুবদল জড়িয়ে গিয়েছিলো। যুবদলের এক স্থানীয় নেতার ধারালো অস্ত্র হাতের ছবি বেশ প্রচার হয়েছে যা সংঘর্ষে স্থানীয় বিএনপি অঙ্গ সংগঠনের জড়িয়ে পড়ার প্রমাণ হিসেবে মিডিয়াতে ছড়িয়ে যায়। পরবর্তীতে যদিও বিভিন্ন ব্যাখ্যায় দেখা যায়, এই সংঘর্ষের সূত্রপাত আসলে জানুয়ারি মাসের ৭ তারিখে ঘোষিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুয়েট শাখার ঘোষিত একটি কমিটিকে কেন্দ্র করে। গত বছরের ৫ ই আগস্টের পর থেকে কুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে প্রথাগত ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে ছিল। তাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটিতে ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সমর্থক কয়েকজন ছিল বলেই সম্ভবত তারা সেই কমিটির বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করলে সেটাকেও বিলুপ্ত ঘোষণা করতে বাধ্য হয়। এমতাবস্থায় ছাত্রদল আগাম ঘোষণা দিয়ে ফর্ম বিলি করার ব্যাপারটাও তারা ভালোভাবে নেয়নি এবং তাদেরকেও বাধা দেয়া হয়। এই বাধা দেবার প্রক্রিয়া হিসেবেই এক সময় সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে বহিরাগত বেশ কয়েকজন ছাত্রদলের পক্ষে ক্যাম্পাসে ঢুকে পরলে সাধারণ ছাত্রদের সাথে সংঘর্ষ শুরু হলে মাননীয় ভিসি মহোদয় ও বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও ছাত্র আহত হোন, যাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। ছাত্রদল থেকে যদিও দাবি করা হয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে বেশ কিছু ছাত্র শিবির ও লীগের সমর্থক আছে, কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় দ্রুত ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়ে এবং ফলশ্রুতিতে বিএনপি’র ইমেজে একটা দাগ পড়ে। এখন স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠেছে, ক্ষমতায় যাবার আগেই যদি বিএনপি’র ছাত্র সংগঠন কুয়েটের মতো ছোট একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে এইরকম ঘটনা ঘটাতে পারে, ক্ষমতায় গেলে এগুলো নিয়ন্ত্রণ করবে কীভাবে?
জাতীয় নির্বাচনের জন্যে বিএনপি যখন প্রস্তুতি নিচ্ছে, জনদাবীর প্রতি সম্মান দেখিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান বিভিন্ন ধরনের সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, কিছুক্ষেত্রে নিজে শ্রুতিমূলক পদবি বাদ দিয়ে উদাহরণ সৃষ্টি করছেন, দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থীদের বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা দ্রুত নিচ্ছে, তিস্তামুখে জনমুখী কর্মসূচি নিচ্ছে, তখন এইরকম একটা ইমেজ নষ্টকারী ঘটনা এড়ানো যেতো কিনা? যদিও ছাত্রদলের পক্ষ থেকে এটাও বলে হয়েছে যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজনীতি করতে পারলে, ছাত্রদল কেনো করতে পারবেনা? এটা অবশ্যই খুবই প্রাসঙ্গিক একটা প্রশ্ন কিন্তু এই প্রশ্নের উত্তরের জন্যে বিএনপি বিরোধী বিভিন্ন গ্রুপের দুরভিসন্ধির পাশাপাশি বিএনপি কে কিছু বাস্তবতা মাথায় রাখা উচিত হবে, যেমনঃ
শিক্ষার্থীদের সামগ্রিক মানসিক অবস্থাঃ
ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আমলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসগুলোতে প্রচণ্ড ধরনের আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করেছিলো। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা পাওয়ার বছরখানেকের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবু বকর হত্যা থেকে শুরু করে, বুয়েটে আবরার ফাহাদকে নৃশংসভাবে হত্যা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বুয়েট/কুয়েট সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগে টর্চার সেলের মর্মান্তিক ঘটনা প্রমাণ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কি পরিমাণ আতঙ্কের মধ্যে তাদের শিক্ষাজীবন কাটিয়েছে। এর মধ্যে জুলাইয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে উৎসারিত ফ্যাসিস্ট বিরোধী গণআন্দোলন নির্মূলে নির্বিচারে ছাত্র-শিশু হত্যা এদেশের সাধারণ মানুষ তো বটেই, সাধারণ শিক্ষার্থীদের এক ধরনের ‘ট্রমাটাইজড’ করে রেখেছে। সেই মানসিক অবস্থা থেকেই তারা প্রথাগত ছাত্র রাজনীতি ক্যাম্পাসে চাইবেনা সেটাই স্বাভাবিক। বিএনপি কে ক্ষমতায় না দেখা জেনারেশন যে আপেলের সাথে আপেলের তুলনা করবে যখন একটা আতঙ্ক তাদের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই কাজ করবে।
এখানে আরেকটা ব্যাপার মনে রাখা উচিত- বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে যখনই বহিরাগতরা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে কোন মাতব্বরি করতে চায়, সাধারণ শিক্ষার্থীদের মনোভাবের পরিবর্তন হয়ে যায়। কুয়েটেও হয়তো প্রথমে এটা ছাত্রদলের কয়েকজনের সাথে বৈছাআ বা ‘গোপনীয়’ শিবির সমর্থকের কথা কাটাকাটি বা ধাক্কাধাক্কি ছিল। কিন্তু সেখানে যখন স্থানীয় বহিরাগত রাজনৈতিক কর্মীরা ঢুকে যায়, তখন হয়তো উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও জড়িয়ে যায়। আমার নিজের অভিজ্ঞতায় মনে পরে- ২০০২-০৩ সালের দিকে একবার পলাশীতে বাস চাপায় ইডেন কলেজের ছাত্রী মারা গেলো। মুহূর্তের মধ্যে রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে সব শিক্ষার্থীরা তখন বকশীবাজার-পলাশী রাস্তা দিয়ে চলা লোকাল বাসের আসা বন্ধ করে দিলো। মুহূর্তের মধ্যে পুরো বুয়েট বনাম লোকাল বাস (৭ নং) ড্রাইভারদের সংঘর্ষে পরিণত হয়ে গেলো।
প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে প্রথাগত ছাত্র রাজনীতির উপযোগীতাঃ
বাংলাদেশের সরকারি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণত আসে তুলনামূলক মেধাবী শিক্ষার্থীরা। একই কথা সত্য অন্যান্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয় নির্ভর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও। এইসব শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার বাহিরে তুলনামূলকভাবে অন্য কিছু নিয়ে আগ্রহী কম হয়। রাজনীতির ব্যাপারে তো আরো আগ্রহ কম থাকে। আমি নিজেও যেহেতু বাংলাদেশের একটা বৃহৎ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম এবং ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলাম, আমি দেখেছি খুবই মুষ্টিমেয় শিক্ষার্থী প্রথাগত ছাত্ররাজনীতির সাথে জড়িত ছিল। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে একজন নেতা বড় দলবল নিয়ে ঘুরছে, ক্যান্টিনে আড্ডা দিচ্ছে, দোকানে বাকী খাচ্ছে- এইগুলা প্রচণ্ডভাবে ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখা হয়। ২০০৯ এর পর থেকে ছাত্রলীগের আচরণ সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই বিরূপ মনোভাব বহুলাংশে বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রসঙ্গত একথা মনে করে দেওয়া প্রয়োজন, বুয়েটে আবরার হত্যার পর ২০১৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত ছাত্রলীগ বিভিন্নভাবে ফিরে আসার চেষ্টা করেছে। শেখ হাসিনার অবারিত ক্ষমতা থাকার পরেও সেটাতে ছাত্রলীগ সফল হতে পারেনি। উল্টো ছাত্রলীগের এলুমনাই সংগঠন থেকেও ১৫ ই আগস্ট পালন করতে এসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে পড়েছিলো। ফ্যাসিস্ট পরবর্তী বাংলাদেশে এই বাস্তবতা রাজনৈতিক দলগুলোর মেনে নেওয়া বাস্তবসম্মত হবে। তাই, এইসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের মতো ছাত্রদলও একটা মাথাব্যথা হয়ে যেতে পারে।
আরেকভাবে যদি আমরা দেখি- বাংলাদেশের বড় ছাত্র সংগঠনগুলোর কেন্দ্রী কমিটির শীর্ষপদে বিজ্ঞান-প্রকৌশল-প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তেমন কাউকে বিবেচনা করা হয় না। আমি জানি না শেষ কবে ছাত্রদল, ছাত্রলীগ, ছাত্রশিবিরের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক বা সাংগঠনিক সম্পাদককে বুয়েট/কুয়েট/চুয়েট/রুয়েট/বাকৃবি ইত্যাদি থেকে কাউকে নিয়োগ দেখা হয়েছিলো। তাই বিএনপি’র ৩১ দফা অনুযায়ী সবক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক নিয়োগ নিশ্চিত করা যায়, একজন হবু প্রকৌশলী বা প্রযুক্তিবিদ বাঁ বিজ্ঞানীর আসলে প্রথাগত ছাত্র রাজনীতি করার কোন কারণ নেই।
বিকল্প নেতৃত্ব বিকাশে ভূমিকা
অনেকে যুক্তি দিতে পারে, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেউ যদি তাহলে রাজনৈতিক নেতৃত্ব দেবার ব্যাপারে উৎসাহী হয়, তারা কি করবে? এখানে উত্তর হলো- তারা গ্র্যাজুয়েট হওয়ার পর তার পছন্দের পেশাজীবী সংগঠনের সাথে জড়িত হয়ে তার রাজনৈতিক নেতৃত্বের স্কিল দেখাতে পারবে। একইসাথে পেশাজীবী সংগঠনে স্টুডেন্ট চ্যাপ্টার খুলতে হবে যেন তারা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে নিয়মিত সৃজনশীল কর্মসূচি করতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়- পেশাদার নগর পরিকল্পনাবিদদের সংগঠন এখন পর্যন্ত রাজনৈতিক ধারা থেকে মুক্ত এবং তারা নিয়মিত বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর পরিকল্পনাবিদ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সেরা থিসিস প্রতিযোগিতা, বিতর্ক/ফটোগ্রাফি/পোস্টার প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। আবার জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন যেমন বিএনপি’র মূল ধারার রাজনীতির সাথে যুক্ত না কিন্তু বিভিন্ন সময়ে সৃজনশীল প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। এইসব প্রতিযোগিতার কলেবর বৃদ্ধির জন্যে বিভিন্ন প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে নিয়মিতভাবে পার্টনারশিপ করলে অরাজনৈতিক ভাবেও ভবিষ্যতে নেতৃত্ব গুণসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের পাওয়া যাবে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও বিভিন্ন অরাজনৈতিক সংগঠন যেমনঃ ড্রামা/ডিবেট/মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত/ পরিবেশ সংক্রান্ত ক্লাবগুলোর মাধ্যমেও নেতৃত্বের হয়, যা পরবর্তীতে জাতীয় পর্যায়ে বিকাশ ঘটবে উপযুক্ত পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে।
ডিজিটালাইজেশন
রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফার ৩০ দফা অনুযায়ী বিএনপি বাংলাদেশের আইসিটি সেক্টরের জন্যে আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে সংস্কার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় যে বিএনপি’র নিজেদের সদস্য সংগ্রহের প্রক্রিয়াটাই এখনো ডিজিটাল হয়নি। যেমন কুয়েটের ঘটনার কথাই উল্লেখ করা যায়। ছাত্রদল সমর্থক কয়েকজন কুয়েট ছাত্র সেদিন কাগজের ফর্ম বিলি শুরু করেছিলো প্রথমে যেটা বাধাপ্রাপ্ত হয় পরে। অবাধ ও উঁচু গতি সম্পন্ন ইন্টারনেট, তুলনামূলক সস্তায় যখন ওয়েব সাইট করা যায়, কেনো এখনো ছাত্রদলকে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম বাদ দিয়ে কাগজের ফর্মে সদস্য সংগ্রহ করতে হবে তা অনেকেরই বোধগম্য হয়নি। এই সদস্য সংগ্রহের প্রক্রিয়াটা দ্রুত ডিজিটালাইজড করা উচিত।
উপর আলোচনা থেকে হয়তো ছাত্রদল সমর্থক কেউ প্রশ্ন করতে পারে, শিবির বা বৈষম্যবিরোধী ছাত্রসংগঠন যদি এইসব বিশ্ববিদ্যালয়ে গোপনে তৎপরতা করে তাহলে ছাত্রদল কি মাঠ ফাঁকা ছেড়ে দিবে? এটার সরাসরি উত্তর হয়তো আমার কাছে নাই তবে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং বর্তমান বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে যেটা বুঝেছি যে ছাত্রলীগের অপরাজনীতি এই জেনারেশনের শিক্ষার্থীদের এতোটাই কৌশলী করে তুলেছে যে কেউ তাদের ব্ল্যাকমেইল করে কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করবে সেই সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ। বিশেষ করে, এখানে ছাত্রদলের মতো বড় সংগঠনকে কৌশলী হতে হবে, দূরদৃষ্টি সম্পন্ন হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে আসলে দীর্ঘমেয়াদে কি করলে বিএনপি তথা দেশের জন্যে মঙ্গল হবে। কোন সুস্পষ্ট তথ্য থাকলে তা প্রধান মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়াতে জানাতে হবে। তবে, কোন কিছু ঘটার পরপরই ছাত্রলীগ তথা ফ্যাসিস্ট রেজিম যেমন বিএনপি-জামাত বা পছন্দমতো ট্যাগিং দিতো, ছাত্রদল বা বিএনপি যদি একই ধারায় যায় সেটা ক্ষনিকের জন্যে কাজে লাগলেও দীর্ঘমেয়াদে তেমন কাজে লাগবেনা । তাই সাধারন শিক্ষার্থীরা আসলে কি চায় সেই তথ্য নির্মোহভাবে সংগ্রহ ও বিশ্লেষন করার ক্ষমতা থাকতে হবে। আমি বরং ছাত্রদলকে বলবো একটা পেশাদার ডাটা এনালাইটিক টিম গঠন করতে যারা একটা নির্দিষ্ট সময় পর পর র্যান্ডম স্যমপ্লিং এর মাধ্যমে কিছু মূল থিমের উপর নির্মোহ তথ্য সরবরাহ করবে এবং যাদের পরিচয় গোপনীয় থাকবে। এর সাথে তারা সোশ্যাল মিডিয়ার ডাটা মাইনিং মিলালে সাধারন শিক্ষার্থীদের চাওয়া-পাওয়ার ব্যাপারে সম্যক ধারনা পেতে পারে। আর এতে করে বিএনপি’র ৩১ দফার সাথে সামঞ্জস্য করে একটা আধুনিক ছাত্র সংগঠন হিসেবে ছাত্রদলকে পেতে পারে।
পরিশেষে শুধু এইটুকু বলবো- ফ্যাসিস্ট পরবর্তী বাংলাদেশে এদেশের আপামর জনসাধারন একটা অর্থবহ সংস্কার চায় সবক্ষেত্রেই। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্ররাজনীতিও তার বাহিরে না। অতীতের মতো, যখন দল ক্ষমতায় তখন একজন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া বয়স পেরুনো ছাত্রনেতার পিছন কয়েকশত শিক্ষার্থী ঘুরবে আবার ক্ষমতার বাহিরে গেলে সেই সংখ্যা ১৫-২০ জন হয়ে যাবে, সেই ছাত্ররাজনীতি থেকে এই জাতি আসলেই কিছু পাবেনা। এই শক্তি প্রদর্শন করা বা সেটা দেখার জন্যে কোন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসেনা। তাই জ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর বাংলাদেশ গড়তে ছাত্ররাজনীতির একটা গুনগত সংস্কার খুবই প্রয়োজন। সেই বিএনপি’র ৩১ দফায় সেটিও হতে পারে একটা গুরূত্বপূর্ন সংযোজন।
লেখক, ড. ফয়সাল কবীর শুভ
সাবেক ছাত্রনেতা ও বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী