টানা বৃষ্টিতে রাজধানীর প্রধান সড়কগুলো গেছে তলিয়ে। তাতে ঢেউ ভেঙে যানবাহনের চলাচল জলে ভ্রমণের আমেজ তৈরি করছে, তবে তা নিরানন্দের।
জলমগ্ন সড়কে চলাচলের ভোগান্তির পাশাপাশি নগরীর নিম্নাঞ্চলে ঘরে পানি ঢুকে দুর্দশায় পড়েছেন বহু মানুষ।
বর্ষার ভরা মৌসুমে রোববার রাত থেকে টানা বৃষ্টিতে সোমবার সকালেই ঢাকার বিভিন্ন এলাকার সড়কগুলো তলিয়ে যায়। দিনে কিছুটা বিরতি দিয়ে রাতে আবার বৃষ্টি এবং সকালে তার মাত্রা বাড়ায় রাজধানীর অধিকাংশ সড়কে পানি জমে যায়।
মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত রাজধানীর রামপুরা, মালিবাগ, শান্তিনগর, কাকরাইল, নয়া পল্টন, পুরানা পল্টন, ফকিরেরপুল, রাজারবাগ ও শাহজাহানপুর ঘুরে জলাবদ্ধ সড়কে চলাচলে জনদুর্ভোগের চিত্র দেখা যায়।
ফকিরেরপুল থেকে নয়া পল্টনের সড়কের উপর কোমর পানি ভেঙে প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল চলতে দেখা যায়।
এতে পানিতে ঢেউ খেলার দৃশ্য দেখে সুবিদ আলী নামের একজন বলে ওঠেন, “এটা কোন নদী ভাই?”
পাশের আরেকজন রসিকতার সুরে জবাবে দেন, “এটা পল্টন নদী। এই নদীতে এখন মাছ চাষ করে অর্থ উপার্জন করা যায়।”
পল্টন সড়কটির ফুটপাতেও পানিতে ডুবে গিয়েছিল।
এই সড়কের পাশে থাকা দামি গাড়ির শো রুমগুলোর কাছেও পানির ঢেউ আছড়ে পড়ছিল। পানি ঠেকাতে বস্তা ফেলে দোকানের সামনে দেওয়া হয় বাঁধ।
শুধু নয়া পল্টন নয়, টানা বৃষ্টিপাতে রাজধানীর অধিকাংশ জায়গায় পানি উঠেছে। তবে এই বৃষ্টিবাদলের মধ্যে সড়কে যান চলাচলের কমতি ছিল না।
মতিঝিলসহ বাণিজ্যিক এলাকার ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা রয়েছে। ফলে সেখানে প্রাইভেটকারও রয়েছে কম বেশি।
ধানমন্ডি ২৭ নম্বর সড়ক, সোনারগাঁও ক্রসিং, পান্থপথ, বাড্ডা, কাকরাইল, মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতায় যান চলাচল বিঘ্নিত হওয়ার তথ্য দিয়েছে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা।
কাকরাইলের কাছে দায়িত্বরত একজন ট্রাফিক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বৃষ্টির কারণে অনেক জায়গায় যানজটও হচ্ছে। আমাদের সদস্যরা চেষ্টা করছে এটাকে নিয়ন্ত্রণ করার। কারণ দেখা যায়, হঠাৎ কোথাও পানি ঢুকে সিএনজি থেমে গেছে। একটা গাড়িও বিকল হলে হঠাৎই যানজট সৃষ্টি হয়। এই জট খুলতেও সময় লেগে যায়।”
শান্তিনগরে মোড়ে একটি অ্যাপার্টমেন্টে থাকেন নাদিরা বেগম। সকালে পাশের বেইলি রোডে ব্যাংকে এসে আটকা পড়েন তিনি।
নাদিরা বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চরম ভোগান্তিতে পড়েছি। মেয়েসহ এসেছিলাম ব্যাংকে। দুজন ভিজে গেছি। বৃষ্টির মধ্যে এক ঘণ্টা ধরে কোনো রিকশা পাইনি। শান্তিনগরের রাস্তায় পানি। অপেক্ষায় আছি একটি রিকশার জন্য।”
নিজস্ব যানবাহন নিয়ে রাস্তায় নেমেও অনেককে বিপদে পড়তে হয়েছে। পানি ঢুকে থেমে গেছে গাড়ি। নয়া পল্টনের কাছে ইঞ্জিনে পানি ঢুকে বন্ধ হয়ে যায় একটি সিএনজি অটোরিকশা। যাত্রী নিয়ে বিপাকে পড়েন চালক হামিদ। পরে একটি রিকশা ডেকে যাত্রীদের উঠিয়ে দেন তিনি।
হামিদ বলেন, “এই বৃষ্টিবাদলে কামাই নেই। যা একটা ক্ষ্যাপ ধরলাম কমলাপুর থেকে রামপুরার, সেটাও ভেস্তে গেল। হায়রে নসিব!”
মালিবাগের মৌচাক মার্কেটের কাছে থাকেন হামিদুল্লাহ। রিকশা ভাড়া বেশি দেখে ছাতা মাথায় দিয়ে হেঁটে রওনা হয়েছিলেন গুলিস্তানের উদ্দেশে।
“ভাই বৃষ্টির জন্য দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়া চাচ্ছে সব রিকশাওয়ালা। ৫০ টাকায় মালিবাগ থেকে গুলিস্তানে, আজকে দেড়শ টাকার নিচে রিকশাওয়ালারা কথাই বলছে না।”
বৃষ্টিতে খেটে খাওয়া মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। রাজমিস্ত্রির কাজ করেন আনু মিয়া। শান্তিনগরের কাছে বেলা ১১টা পর্যন্ত থেকে কাজ না পেয়ে রামপু্রায় ফিরে যাচ্ছিলেন তিনি।
আনু মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সকালে আইছি একটা কাম পামু। ভাগ্যে নাই। আইজকা বাজারে যাইয়া বেকুব হইয়া গেছি।
“শাক-সবজির দাম বেশি। চাইছিলাম দুই মোঠা লাল শাক কিনমু। দাম চায় ৭০ টাকা। একদিন আগেও এই দুই মোঠার দাম ছিল ৪০ টাকা।”
মালিবাগ পাশের গুলবাগ, শান্তিবাগ, মোমিনবাগের অলিগলিতে পানি আর পানি। নালা-নদর্মা ও বৃষ্টির পানি একাকার হয়ে গেছে। গুলবাগের অধিকাংশ বাসার নিচতলায় বৃষ্টির পানি জমে আছে।
সেখানকার বাসিন্দা মমিন আহমেদ বলেন, “এক ছেলেকে নিয়ে ছোট একটা টিনের ঘরে ভাড়া থাকি। সেই ঘরে পানি ঢুকেছে। চকির নিচে পানি। নালা-নর্দমার দুর্গন্ধময় পানি। চরম কষ্টে আছি স্যার। এক ঘণ্টা বৃষ্টি হলেই গুলবাগের রাস্তায় পানি উঠে। বৃষ্টি আসলেই মনটা আঁতকে উঠে।”
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন