একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গণফোরাম থেকে বিজয়ী দুজন সংসদ সদস্যের শপথ নেওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন গণফোরাম সভাপতি ও ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন। তাঁর এই বক্তব্যের পর ফ্রন্টের প্রধান শরিক বিএনপি ও অন্যান্য দল এটিকে ভিন্ন চোখে দেখছে। বিএনপি বলছে, ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটি রয়েছে। তারা যে সিদ্ধান্ত দেবে সেটিই ফ্রন্টের শরিককে মেনে চলতে হবে। না হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ফ্রন্টের অন্য শরিকরা বলছে, এ বিষয় নিয়ে এখনো আলোচনার সুযোগ রয়েছে। ফলে এ নিয়ে ঐক্যফ্রন্টে তৈরি হয়েছে এক ধরনের টানাপড়েন।
জানতে চাইলে ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। দলটির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, বিষয়টি স্পর্শকাতর। বিএনপি মহাসচিব এ বিষয়ে বলবেন।
আর ঐক্যফ্রন্টের সমন্বয়ক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বলেছেন, ‘কে কী সিদ্ধান্ত নিল সেটি বড় নয়। আমরা ঐক্যফ্রন্টের শরিক যারা আছি, তারা সবাই মিলে যে সিদ্ধান্ত নেব সেটিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। সেটি না হলে ব্যবস্থা নিতেই হবে। ব্যক্তিগতভাবে কে শপথ নিল; সেটি আমাদের কাছে ইস্যু নয়।’
গণফোরাম নেতারা যদি স্টিয়ারিং কমিটির সিদ্ধান্ত না মেনে শপথ নেন, সে ক্ষেত্রে কী করবেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেখি ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির নেতারা বসে কী সিদ্ধান্ত নেন। তাঁদের জয়ী দুই প্রার্থীর একজন ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছেন।
সিদ্ধান্ত না মানলে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দেবেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ফ্রন্টের সিদ্ধান্ত যদি আমাদের দলের সিদ্ধান্তের বিপরীত হয় তাহলে তো আমাদের একটি সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। বিএনপি অবশ্যই দলীয় ফোরামে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে।’
ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “ড. কামাল হোসেন গণফোরামের সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সরলভাবেই বলেছেন, শপথ নেওয়ার বিষয়ে তাঁরা ইতিবাচক। কিন্তু তিনি এও বলেছেন, ‘সবার সঙ্গে আলোচনা করে আমরা এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।’ তিনি কিন্তু বলে দেননি, আমাদের জয়ী প্রার্থীরা শপথ নেবেই। তাই আমি মনে করি, বিষয়টি নিয়ে এখনো আলোচনার সুযোগ রয়েছে। আমাদের ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির নেতারা বসবেন, এরপর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে।”
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন বলেন, ‘দেখি এ ব্যাপারে ফ্রন্ট কী সিদ্ধান্ত নেয়। ফ্রন্ট তো এখন পর্যন্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যানের মধ্যেই আছে। প্রত্যাখ্যান পাল্টে তারা (গণফোরাম) শপথ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেবে, নাকি নিষেধ করলে শুনবে, সেটা তো এখন বুঝতে পারছি না।’
বর্ধিত সভায় যোগ দেওয়া গণফোরামের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে জানান, সভায় জয়ী দুই সংসদ সদস্যকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে। দীর্ঘদিন পর গণফোরাম সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেয়েছে। এই সুযোগকে কাজে লাগানোর জন্য সদস্যরা পরামর্শ দিয়েছেন। একই সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যাতে অটুট থাকে সে বিষয়েও তাঁরা বলেছেন।
গতকাল শনিবার বিকেলে গণফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির বর্ধিত সভা শেষে তোপখানা রোডের শিশুকল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট আলোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। তাঁরা প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে নির্বাচিত হয়ে এসেছেন। তাঁরা তো বিরোধী দল থেকে হয়েছেন। এটাকে আমরা বলেছি, এটা তাঁদের অর্জন। আমরা তাঁদের বিষয়ে ইতিবাচকভাবে সিদ্ধান্ত নেব।’
গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে পুনর্নির্বানের দাবি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট তোলার পর তাদের জোট থেকে বিজয়ীদের শপথ নেওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দেয়। গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ তাদের রাজনৈতিক মিত্রদের সবাই সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিলেও উপস্থিত ছিলেন না ঐক্যফ্রন্ট থেকে বিজয়ী বিএনপির পাঁচ এবং গণফোরামের দুজন।
গণফোরাম থেকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে মৌলভীবাজার-২ আসনে জয়ী হয়েছেন সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আর সিলেট-২ আসনে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী হিসেবে জয়ী গণফোরামের মুকাব্বির খান দলীয় প্রতীক উদীয়মান সূর্য নিয়ে নির্বাচন করেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন