সম্প্রতি ১১ বছর বয়সী সুবার নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। অসহায় এক পরিবারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে অনেকেই তার সন্ধানে পোস্ট শেয়ার করেন এবং সহমর্মিতা প্রকাশ করেন। তবে পরে জানা যায়, সুবা স্বেচ্ছায় বাড়ি ছেড়েছিল, যা নিয়ে শুরু হয় নতুন বিতর্ক।
এই ঘটনা একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ইস্যুকে সামনে এনেছে। অনেকেই মনে করছেন, এটি বাল্যবিবাহের পক্ষে একটি নীরব অনুমোদনের ক্ষেত্র তৈরি করতে পারে, যা অত্যন্ত বিভ্রান্তিকর। ১১-১২ বছর বয়স কোনোভাবেই বিবাহের উপযুক্ত সময় নয়। এটি শুধুমাত্র কৈশোরের আবেগপ্রবণতা এবং বাস্তবতার অনুধাবনহীন একটি সিদ্ধান্তের প্রতিফলন। তবে এর মানে এই নয় যে, আমাদের সমাজে শিশু অপহরণ, ইভটিজিং বা সহিংসতা ঘটে না, কিংবা বাবা-মায়ের প্রতি সন্তানের দায়বদ্ধতা নেই।
সুবা ভুল করেছে, কিন্তু সমাজের উচিত তাকে আরেকটি সুযোগ দেওয়া—যাতে সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে। তার পরিবারও কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তাই তাদের প্রতি দয়া ও সহমর্মিতা দেখানো প্রয়োজন। কঠোর সামাজিক সমালোচনার পরিবর্তে সুবার জন্য এমন একটি পরিবেশ তৈরি করা দরকার, যেখানে সে জীবনের প্রকৃত অর্থ বুঝতে পারে এবং দায়িত্বশীল হয়ে ওঠে।
অনেকেই ভাবতে পারেন, সুবাকে খুঁজতে এগিয়ে আসা মানুষগুলো ভুল করেছিলেন। কিন্তু এটি মোটেও সত্য নয়। এটি নিছক কোনো পারিবারিক ঘটনা নয়, বরং মানবিক দায়িত্ববোধের অংশ। যখন একজন শিশু নিখোঁজ হয়, তখন উদ্বিগ্ন হওয়া এবং তাকে খুঁজতে প্রচেষ্টা চালানো স্বাভাবিক ও প্রয়োজনীয়। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনায় পরিবারের অতীত ইতিহাস বা অন্য প্রসঙ্গ টেনে এনে মানবিক উদ্যোগকে প্রশ্নবিদ্ধ না করাই শ্রেয়।
বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়ানোই প্রকৃত মানবতার পরিচয়, এবং আমাদের সমাজ ও ধর্ম সেটিই শেখায়। সুবার ঘটনা শুধুমাত্র তার ব্যক্তিগত জীবনের একটি অধ্যায় নয়, বরং এটি আমাদের সমাজে বাল্যবিবাহ, শিশুদের আবেগগত পরিপক্বতা এবং পরিবার-সমাজের দায়বদ্ধতা নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে।