রাষ্ট্র ব্যবস্থার চলমান সংস্কার কার্যক্রম ও জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি একই সঙ্গে চালিয়ে নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই দুই কাজে প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান দিতে অর্থ বিভাগে পৃথক নির্দেশনা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান। রাষ্ট্র ব্যবস্থার সংস্কার ও একটি গ্রহণযোগ্য সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করাকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ মনে করে বর্তমান সরকার। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য আলাদা অর্থ বরাদ্দ রাখতে হবে। এজন্য নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে চাহিদাপত্রও দিতে বলা হয়েছে। অর্থ বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
জানা গেছে, অর্থ বিভাগ ও নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া পৃথক পৃথক নির্দেশনায় ড. ইউনূস বলেছেন, নির্বাচনের প্রস্তুতির কাজ মূলত নির্বাচন কমিশনের। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন প্রক্রিয়ায় নাগরিকদের সময় দিতে হয় না। কিন্তু রাষ্ট্র ব্যবস্থার সংস্কারের কাজে সব নাগরিককে অংশগ্রহণ করতে হবে। রাষ্ট্র সংস্কারের যে কার্যক্রম চলমান রয়েছে সেটাকে আরও কার্যকর ও ত্বরান্বিত করতে জনসাধারণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ প্রয়োজন বলে তিনি নির্দেশনায় জানান। এ ছাড়া আর্থিক খাতের সংস্কার, সংবিধান সংস্কার, নির্বাচনি ব্যবস্থার সংস্কারসহ অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কার কার্যক্রমের জন্য যেসব কমিশন গঠন করেছে সেসব কমিশনে জনসম্পৃক্ততা ও জনস্বার্থের বিষয়গুলো গুরুত্ব দিতে বলেছেন তিনি। জানুয়ারির শেষ ভাগে সুইজারল্যান্ড সফরের আগে অর্থ বিভাগকে দেওয়া এক নির্দেশায় তিনি বলেছেন, এনবিআরের রাজস্ব আদায় বাড়াতে হবে। জনগণকে কষ্ট না দিয়ে কীভাবে রাজস্ব বাড়ানো যায় তার রাস্তা খোঁজার নির্দেশনাও দিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে অর্থের অভাবে যেন সংস্কার কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত না হয় কিংবা ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করতে যেন আর্থিক কোনো বাধা না আসে সেদিকে দৃষ্টি রাখতে বলা হয়েছে। এজন্য রাজস্ব আদায়ের ব্যাপারে এনবিআরকে আরও যত্নবান হতে বলেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টার দেওয়া নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়, জাতীয় নির্বাচনের ব্যয় সরকারের জন্য একটি অতিরিক্ত ব্যয়ের খাত। কেননা এটা প্রতি পাঁচ বছর পর পর আসে। নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বিপুল অর্থের প্রয়োজন হয়। তবে এ বছর নির্বাচন উপলক্ষে যাতে অতিরিক্ত কোনো ব্যয় না হয় সেদিকে নজর রাখতে বলা হয়েছে। সবশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ হয়েছে। সেটাকে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খরচ বলে মনে করে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। এজন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে বরাদ্দের চাহিদাপত্রও চাওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, সংস্কার কার্যক্রম তো চলমান। এগুলো শেষ করতে যথেষ্ট সময়ের প্রয়োজন। এজন্য তো নির্বাচনি প্রস্তুতির কাজ থেমে থাকতে পারে না। এ ছাড়া সংস্কার কার্যক্রম এবং নির্বাচনি প্রস্তুতির জন্য তো আলাদা আলাদা প্রতিষ্ঠান এবং বিভাগ রয়েছে। এ জন্যই হয়তো সরকার দুটিকেই একসঙ্গে এগিয়ে নিতে চায়।