Image description
জাতীয় সংসদ নির্বাচন » নিষিদ্ধ বা নিষেধাজ্ঞার আওতাধীন দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন — এমন অঙ্গীকার করতে হবে । » সাক্ষী হতে হবে দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বা সমমর্যাদার দুজনকে ।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চাওয়া প্রার্থীদের নিষিদ্ধ কিংবা নিষেধাজ্ঞার আওতাধীন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন — এমন অঙ্গীকার করতে হবে । সঙ্গে দুজন সাক্ষীর সাক্ষ্যও জমা দিতে হবে । নির্বাচনে মনোনয়ন ফরমে এমন বিধান রাখা হয়েছে । নির্বাচন কমিশনের এমন বিধানকে অস্পষ্ট মনে করছেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা ।

তাঁরা বলছেন , গত কয়েক দিনে একাধিক রাজনৈতিক নেতা দল বদল করেছেন । আবার কেউ কেউ দল বিলুপ্ত করে বড় দলে যোগ দিয়েছেন । এ ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ বা নিষেধাজ্ঞার আওতাধীন রাজনৈতিক দলের নেতারা অন্য কোনো দলে যোগ দিলে কী বিধান থাকবে , তা পরিষ্কার করা হয়নি । নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড . মো . আবদুল আলীম আজকের পত্রিকাকে বলেন, “ কেন এবং কী কারণে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে , তা নির্বাচন কমিশনকে পরিষ্কার করতে হবে । যেহেতু এক দল থেকে আরেক দলে যোগদান করা নিষিদ্ধ নয় , এ রকম অনেক উদাহরণ গত কয়েক দিনে হয়েছে । ” জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন , প্রার্থীকে বলতে হবে , তিনি কোনো নিষিদ্ধ বা নিষেধাজ্ঞার আওতাধীন রাজনৈতিক দলের সদস্য নন ।

পরে যদি প্রমাণিত হয় , তাহলে বিষয়টি মিথ্যাচার হিসেবে গণ্য হবে । সে ক্ষেত্রে তিনি মিথ্যাবাদী । কেউ নিষিদ্ধ দলের সঙ্গে জড়িত কি না , ইসি কীভাবে সেটি প্রমাণ করবে , এমন প্রশ্নের জবাবে আখতার আহমেদ বলেন , ‘ আপনারা ( গণমাধ্যম ) জানিয়ে দেবেন , উনি ( প্রার্থী ) মিথ্যা কথা বলছেন ।

এরপর ইসি তদন্ত করে দেখবে , অভিযোগটি সত্য নাকি মিথ্যা । ’সে ক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে— জবাবে ইসি সচিব বলেন , “ সেটা নির্ভর করবে অপরাধের মাত্রার ওপরে । ’ কী কারণে এমন বিধান যুক্ত করা হয়েছে , এমন প্রশ্নের জবাবে আখতার আহমেদ বলেন , কর্তৃপক্ষ মনে করেছে , এবার এমন একটা অঙ্গীকারনামা থাকা ভালো । নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন প্রার্থীরা । যেখানে ২৩ পাতার মনোনয়ন ফরম পূরণ করতে হবে প্রার্থীদের । যার শেষ দুই পাতার তফসিল -১ ও ২ প্রার্থীদের অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করতে হবে । তফসিল -১ অঙ্গীকারনামায় দলীয় প্রার্থী নিষিদ্ধ বা নিষেধাজ্ঞার আওতাধীন কোনো রাজনৈতিক দল কিংবা সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন , দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বা সমমর্যাদার পদধারী এমন দুজনকে স্বাক্ষর দিতে হবে । যেখানে রাজনৈতিক দলের নাম ও নিবন্ধন নম্বর দিতে হবে ।

রাজনৈতিক দলের অঙ্গীকারনামার ক্ষেত্রে বলা আছে, ‘ আমার দল এবং দল মনোনীত সব প্রার্থী সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০২৫ বিধান মেনে চলব । দল বা দল মনোনীত কোনো প্রার্থী এই আচরণ বিধিমালার কোনো বিধান লঙ্ঘন করলে আইন ও বিধিমালার বিধান অনুযায়ী শাস্তি মেনে নিতে বাধ্য থাকব । প্রার্থীর অঙ্গীকারনামায় বলা হয়েছে , ' আমি অঙ্গীকার করেছি , আমি কোনো নিষিদ্ধ বা নিষেধাজ্ঞার আওতাধীন কোনো রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত নই । ' প্রার্থীর স্বাক্ষরের সঙ্গে দুজন সাক্ষীর নাম , স্বাক্ষর ও এনআইডি নম্বর দিতে হবে ।

আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী আইন সংশোধন করে বলা হয়েছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মামলার অভিযোগপত্র গঠিত হলেই নির্বাচনে অযোগ্য হবেন অভিযুক্ত । আর গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে ( আরপিও ) বলা হয়েছে , ফেরারি আসামিরা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না । নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলছেন , ফেরারি আসামিদের নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষণার প্রতিফলন হচ্ছে মনোনয়ন ফরমে নতুন বিধান যুক্ত করা । আর এখন যেহেতু আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ , তাই বিষয়টি বলা হয়েছে । দলটির নেতা-কর্মীদের নির্বাচনের বাইরে রাখতেই এমন বিধান রাখা হয়েছে । নির্বাচন কমিশনের এমন উদ্যোগের সমালোচনা করেছে আওয়ামী লীগের গত তিন সরকারের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ( জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন অংশ ) ।

গতকাল দলের প্রার্থী ঘোষণা উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি অসাংবিধানিক বলে উল্লেখ করেন দলের মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী । সংবাদ সম্মেলনে শামীম হায়দার বলেন , ‘ কার্যক্রম নিষিদ্ধ দলের কর্মীদের মনোনয়ন না দেওয়ার বিধান অসাংবিধানিক । দল নিষিদ্ধ হলে তিনি স্বাভাবিকভাবে অন্য যেকোনো দলে আসতেই পারেন এবং ভোট করতে পারেন । এটা তো সাংবিধানিক অধিকার । তিনি সাজাপ্রাপ্ত ও নির্বাচনে অযোগ্য নন । ইসির এমন তফসিলকে অবিবেচনাপ্রসূত ও অসাংবিধানিক । ”