কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে তৈরি করা ভুয়া ছবি, ভিডিও এবং কণ্ঠস্বর (ডিপফেক) দ্রুত ভুল তথ্য ছড়িয়ে ভোটারদের বিভ্রান্ত করতে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট করতে পারে। যার বড় প্রভাব পড়বে ভোটে। ফলে ভোটের আগে এআইতে মহাবিপদের আশঙ্কা করছেন রাজনীতিবিদ এবং প্রযুক্তিবিদরা। তারা বলছেন, বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার এক গুরুতর চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। চ্যাটজিপিটি, ক্লাউড কিংবা জেমিনির এ যুগে কোনো কিছু ফ্রেমে ফেলা কঠিন। ভোটের প্রচারণায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা একদিকে যেমন সম্ভাবনা, অন্যদিকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য ঝুঁকি। এ দুইয়ের মাঝামাঝি শক্ত জায়গা করে নিয়েছে এআই প্রযুক্তি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহতথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক এইচ এম সাইফ আলী খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা নতুন বাংলাদেশ চাই। মিথ্যা অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রমূলক রাজনীতি জনগণ চায় না। সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি অধিদপ্তর ও যেসব মনিটরিং সেল রয়েছে তারা নিশ্চয়ই এ বিষয়ে আন্তরিকভাবে খেয়াল রাখবে। পাশাপাশি আমরাও ভুয়া ঘটনা শনাক্ত করার চেষ্টা করি।
জামায়াতে ইসলামীর মিডিয়া বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ এআই ব্যবহার নিয়ে আইন করেছে। বাংলাদেশের সরকারের উচিত এ বিষয়ে আইন প্রণয়ন করা। আমি বলব, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার উদ্দেশ্যে কাজ না করে নিজের যোগ্যতা দিয়ে নির্বাচনে জয়ী হওয়া উচিত। নির্বাচন কমিশনকেও এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, নির্বাচনের সময় বিশেষ করে ভোটের রাতে এআইর অপব্যবহার নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। এখন এটি বৈশ্বিক সমস্যা। আমরা নির্বাচনে এআইর অপব্যবহার রোধ করতে চাই। মিস ইনফরমেশন ও ডিজ ইনফরমেশন নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি সেল গঠন করব। ভোটের পরিবেশ এআই জেনারেটেড কনটেন্টের প্রভাবমুক্ত রাখতে ২৪ ঘণ্টার মনিটরিং ব্যবস্থা গড়ে তুলব। এদিকে শত আশঙ্কার মধ্যেও গুজব নিয়ন্ত্রণে আশার আলো দেখাচ্ছে বিভিন্ন ফ্যাক্ট চেকার প্রতিষ্ঠান। গুজব ও মিথ্যা তথ্যের সত্যতা এখন যে কেউ নিশ্চিত করতে পারবেন। এর মধ্যে এমন সেবা বিনামূল্যে এনেছে ব্যতিক্রমী ফ্যাক্ট চেকার ‘খোঁজ’। খোঁজ-এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রযুক্তিবিদ মাহাথির আহমেদ তুষার বলেন, আসন্ন নির্বাচন ঘিরে টেক্সট, ছবি, ঐতিহাসিক ঘটনা কিংবা ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়া গুজব, সবকিছুর সত্যতা যাচাই করতে ‘খোঁজ’ হয়ে উঠতে পারে নির্ভরযোগ্য সঙ্গী। ৩০ সেকেন্ডের মধ্যেই খোঁজ ঘেঁটে আনবে ঘটনার আসল উৎস ও বিশ্বাসযোগ্যতা।
প্রযুক্তিবিদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল ফিজিকস অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান খন্দকার সিদ্দিক-ই-রাব্বানী বলেন, এআই দিয়ে তৈরি ভুয়া ছবি শনাক্তের নতুন কৌশল আবিষ্কার করেছেন গবেষকরা। চোখের মণির ওপর আলোর প্রতিফলন পর্যবেক্ষণ করেই ভুয়া ছবি শনাক্ত করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব হালের গবেষকরা। প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধ করতে হবে প্রযুক্তি দিয়েই। এআই নিয়ে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিশেষ টিম কাজ করতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এ বি এম নাজমুস সাকিব বলেন, আমরা জাতিগতভাবে খুব দ্রুত রিঅ্যাক্ট করি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের নজরদারিতে আনতে হবে। এআই কন্টেন্ট বর্তমানে বিশ্বজুড়েই চ্যালেঞ্জ। পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিটকে নির্বাচন ঘিরে খুব সক্রিয় থাকতে হবে। ২০২৩ সালে স্লোভাকিয়ায় ন্যাশনাল কাউন্সিলের নির্বাচনে একটি এআই জেনারেটেড স্পর্শকাতর কথোপকথন নির্বাচনে প্রভাব ফেলেছিল। আর গত বছর ভারতের লোকসভা নির্বাচনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এআই ভিডিও ভোটারদের সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলেছে।