আসন সমঝোতা নিয়ে জটিলতায় পড়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। ইসলামী আন্দোলনসহ ৮ দলের মধ্যে কে কোন আসনে প্রার্থী হবে, এ প্রশ্নে মতপার্থক্যের কারণে আলোচনা এগোচ্ছে ধীরগতিতে। শরিক দলগুলোর বড় অঙ্কের আসন দাবিই এই অচলাবস্থার মূল কারণ বলে জানা গেছে। তবে দরকষাকষি শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, ৯ থেকে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনটি বিভাগের আসন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠক শেষে বরাবরের মতোই বলা হয়েছে, দুই-তিন দিনের মধ্যে সমাধান হবে। বাস্তবে এখনো সিদ্ধান্ত থেকে অনেক দূরে ৮ দল। দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৮ দলের মধ্যে জামায়াতে ইসলামী বাদে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। দলটি শতাধিক আসন চাইছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ৫০টি আসন চাইলেও শীর্ষ নেতাদের কমপক্ষে ২০টি দিতে হবে বলে জানা গেছে। একই অবস্থানে খেলাফত মজলিসও। তারাও শীর্ষ নেতাসহ ২০টি আসন দাবি করেছে। খেলাফত আন্দোলন ২০টি, নেজামে ইসলাম ১৫টি আসন দাবি করেছে। জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি ৬টি আসন চাইলেও আসন সমঝোতায় ৮ দলের শীর্ষ নেতাদের ওপর ছেড়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি (বিডিপি) ৫টি আসন চাইলেও দলের শীর্ষ দুই নেতাকে মনোনয়ন দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহ-৯ আসনে বিডিপির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম চানের মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়েছে। শীর্ষ নেতারা আরও জানান, প্রতিটি দলই বেশি করে আসনের চাহিদা জানিয়েছে। আলোচনার পর এর সমাধান হবে। সর্বোচ্চ ৮-১০টি আসন নিয়ে একটু সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। তবে সব দলের মধ্যেই সর্বোচ্চ ছাড় দেওয়ার মানসিকতা রয়েছে। এজন্য শেষ পর্যন্ত কোনো ধরনের সমস্যা হবে না বলে তাঁরা জানিয়েছেন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই, আমরা একটি ফর্মুলায় অগ্রসর হচ্ছি। যেখানে যাঁর অবস্থান ভালো, সাংগঠনিক শক্তি ও প্রার্থীর ইমেজ বিবেচনায় আমরা সেখানে তাঁকেই প্রাধান্য দেব। তিনি যে দলেরই হোন না কেন।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। শিগগিরই ৮ দলের সমঝোতার প্রার্থী ঘোষণা হবে।
জামায়াতের নেতারা জানান, সংখ্যা দিয়ে আসন বণ্টন হবে না বরং আসন ধরে প্রার্থী বাছাই হবে। তবে জোটের শীর্ষ নেতারা প্রাধান্য পাবেন। তাঁরা জানান, যেসব আসনে সমঝোতায় প্রার্থী ঘোষণা করা হবে, সেখান থেকে প্রার্থী প্রত্যাহার করবে জামায়াত। জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি ড. হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘কতটা আসন কে নেবেন, কে পাবেন, এটা মুখ্য হবে না। মুখ্য টার্গেট হচ্ছে আমরা যাকে যেখানে দিলে তিনি পাস করবেন, বিজয়ী হবেন, সে ব্যক্তি, সে দল, সেখানে অগ্রাধিকার পাবে। যে দলের যেখানে অবস্থা ভালো, আমরা সে দলকে সেখানেই দেব এবং এক দল একটা আসনেরই থাকবে, বাকিরা আমরা তাঁকে সহযোগিতা করব।’
তিনি বলেন, আগামী সপ্তাহের প্রথম দিকে ৮ দলের প্রাথমিক প্রার্থী ঘোষণা হতে পারে। যে দলের প্রার্থী দেওয়া হবে তাঁকে জয়ী করার জন্য সবাই মাঠে থাকবে। জানা গেছে, ৮ দলের লিয়াজোঁ কমিটি আগামী দুই-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করবে। বৃহত্তর ইসলামি ঐক্যের স্বার্থে সব দলই সর্বোচ্চ ছাড় দেওয়ার মানসিকতা দেখাচ্ছে বলে জোটের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।