Image description
 

ময়মনসিংহের ভালুকায় পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যার শিকার পোশাক কারখানার কর্মী দিপু চন্দ্র দাসের পরিবারের পাশে সরকার রয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সি আর আবরার। একই সঙ্গে তিনি এও বলেছেন, দিপু হত্যাকাণ্ড একটি নৃশংস অপরাধ, এটা কোনো অজুহাত রাখে না।

মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) ময়মনসিংহের তারাকান্দার বানিহালা ইউনিয়নের মোকামিয়াকান্দা গ্রামে নিহত দিপু চন্দ্র দাসের বাড়িতে সহমর্মিতা জানাতে এসে শিক্ষা উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে পারস্পরিক সম্মান ও সহাবস্থানের মধ্য দিয়ে বসবাস করে আসছে উল্লেখ করে সি আর আবরার বলেন, ‘একটি রাষ্ট্র ও সমাজ হিসেবে আমরা সব ধর্ম, জাতিগোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের মতপ্রকাশের অধিকারকে সম্মান করি, যতক্ষণ পর্যন্ত তা অন্যের প্রতি সম্মান বজায় রেখে করা হয়। মতের আপত্তির মুহূর্তেও কোনো ব্যক্তি আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার রাখেন না। বাংলাদেশ একটি আইন শাসিত রাষ্ট্র। অভিযোগ তদন্ত করা ও দায় নির্ধারণ করার একমাত্র কর্তৃত্ব রাষ্ট্রের। বিশ্বাস বা মতের পার্থক্য কখনো সহিংসতার কারণ হতে পারে না।’

 

দিপু হত্যাকে নৃশংস অপরাধ উল্লেখ করে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের সমাজে এর কোনো স্থান নেই। বাংলাদেশ সরকার এ সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। অভিযোগ, গুজব বা বিশ্বাসগত পার্থক্য এ ধরনের বর্বরতার অজুহাত হতে পারে না। আইনের শাসন বজায় রাখা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।’

উপদেষ্টা বলেন, ‘বর্তমানে কিছু দুষ্কৃতকারী গোষ্ঠী বিভাজন সৃষ্টি ও অস্থিরতা উসকে দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমাদের এসব অপশক্তির বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে এবং এগুলো সফল হতে দেওয়া যাবে না। আমাদের প্রত্যেকেরই দায়িত্ব নিজ নিজ অবস্থান থেকে যেন সমাজ, কর্মক্ষেত্র ও নেতৃত্ব পর্যায় থেকে ঘৃণা, ভয়ভীতি ও গণহিংসার বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান নেওয়া হয়।’

 

নিহত দিপুর পরিবারের পাশে সরকার সর্বতোভাবে থাকবে বলে জানান সি আর আবরার। তিনি বলেন, ‘দিপু চন্দ্র দাসের পরিবারের পাশে সরকার রয়েছে। এই গভীর শোকে আমরা তাদের আর্থিক ও কল্যাণমূলক সহযোগিতা করব এবং নিয়মিত যোগাযোগ রাখব। তারা যে একা নন সেটাই আমি তাদের নিশ্চিত করেছি।’

এ সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও মন্তব্য করেন শিক্ষা উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সম্পূর্ণভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ। যত রকমের অপচেষ্টাই হোক না কেন, নির্বাচন না করতে কোনো প্রভাব ফেলবে না। কোনো চাপে নতি স্বীকার করবে না সরকার। সব রাজনৈতিক দলও নির্বাচনের বিষয়ে আগ্রহী।’

এর আগে দিপুর বাড়ি পরিদর্শনে আসেন বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। দুপুরে নাগরিক কোয়ালিশনের পক্ষে আলোকচিত্রী ও মানবাধিকার কর্মী শহীদুল আলমের নেতৃত্বে ১৭ জনের একটি প্রতিনিধিদল দিপুর পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। পরিদর্শন শেষে শহীদুল আলম বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমাদের যে প্রত্যাশা ছিল, তা পূরণ হচ্ছে না। বিভিন্ন মবের ঘটনায় রাষ্ট্র ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবহেলা দৃশ্যমান।

দিপু চন্দ্র দাসের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে শ্রীশ্রী জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ বাংলাদেশ। দুপুরে তার বাড়িতে গিয়ে ৫০ হাজার টাকার আর্থিক সহায়তার চেক দেওয়া হয়।

দিপু হত্যার বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে করার দাবি জানিয়ে জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরী সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব দে পার্থ বলেন, ‘ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে পিটিয়ে হত্যা এবং হয়রানির অভিযোগ নতুন নয়। বিভিন্ন সময় মিথ্যা অভিযোগ তুলে অনেক নিরীহ মানুষ জেল খেটেছে। এসব ঘটনার বিচার না হওয়ায় অপরাধীরা আরও বেপরোয়া হয়ে পড়েছে। আর পোশাক শ্রমিক দিপু চন্দ্র দাসের হত্যাকাণ্ড মধ্যযুগীয় বর্বরতাকে হার মানিয়েছে।’