Image description

দীর্ঘ ১৭ বছরের লন্ডনের নির্বাসিত জীবন শেষে আগামী ২৫শে ডিসেম্বর দেশে ফিরবেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বাংলাদেশ বিমানের নিয়মিত ফ্লাইটে স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান ও একমাত্র কন্যা ব্যারিস্টার জাইমা রহমানকে নিয়ে ঢাকা ফিরবেন তিনি। ওইদিন বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে তাকে বহনকারী উড়োজাহাজ ঢাকার হযরত শাহ্‌জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে। তবে তারেক রহমানকে বহনকারী ফ্লাইটটি ঢাকা অবতরণের আগে সিলেট এমএজি ওসমানী বিমানবন্দরে অবতরণ করবে। সেখানে ৫৫ মিনিট যাত্রাবিরতির পর ফের ঢাকার উদ্দেশ্যে উড়বে বিমান। ঢাকায় অবতরণের পর বিমানবন্দরের অদূরে পূর্বাচলের তিনশ’ ফিট সড়কে তাকে সংবর্ধনা দেয়ার পরিকল্পনা করছে বিএনপি। সংবর্ধনায় বিপুল জনসমাগমের প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। তাই রাজধানীবাসীর জনদুর্ভোগ এড়াতে পূর্বাচলের তিনশ’ ফিট সড়ক বেছে নেয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। এদিকে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় তারেক রহমানকে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ)-এর নিরাপত্তা প্রটোকল সরবরাহ করতে পারে সরকার। এছাড়া পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকেও কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হবে। বিএনপি’র স্বেচ্ছাসেবক টিমের সদস্যরা সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করবেন। এদিকে দলটির একটি সূত্র জানিয়েছে, বিমানবন্দর থেকে তিনশ’ ফিটের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষে অসুস্থ মা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ার হাসপাতালে যাবেন তারেক রহমান। মায়ের শয্যাপাশে কিছু সময় কাটাবেন তিনি। সেখান থেকে গুলশানের বাসভবনে উঠবেন তিনি। ২৫শে ডিসেম্বরের আগে ১৯৬ নম্বরের বাসভবন প্রস্তুত না হলে আপাতত মায়ের বাসভবন ফিরোজায়  উঠবেন তিনি।          

দেয়া হবে সংবর্ধনা: এদিকে তারেক রহমানের অভ্যর্থনা কমিটির প্রধান ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, বাংলাদেশ বিমানের নিয়মিত বাণিজ্যক ফ্লাইটে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগামী ২৫শে ডিসেম্বর বাংলাদেশে আসছেন। ওইদিন ফ্লাইটটি ১১টা ৫৫ মিনিটে অবতরণ করবে। তার এই স্বদেশে প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে বিমানবন্দর পরিদর্শন করেছে বিএনপি’র একটি টিম। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি এ সব কথা জানান। সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, নিরাপত্তার টিমের দায়িত্বে থাকা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) একেএম শামছুল ইসলাম, আমি নিজে এবং সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ অন্যরা বিমানবন্দরে গিয়েছি। বিমানবন্দরে তিনি (তারেক রহমান) অবতরণ করার পর গাড়িতে ওঠা এবং যে রাস্তা দিয়ে এভার কেয়ার হাসপাতালে (এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন খালেদা জিয়া) যাবেন, সেখান থেকে গুলশানের বাসায় আসা ও অন্যান্য যেসব অনুষ্ঠান করতে যাচ্ছে বিএনপি; সবগুলো আমরা সরজমিন পরিদর্শন করেছি এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সমন্বয় করতে গিয়েছিলাম। আর নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে আলাদাভাবে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল এবং সব বিভাগীয় প্রধানের সঙ্গে আমাদের নিরাপত্তা টিমের প্রধান সমন্বয় করছেন। তারা বেশ কয়েকবার বৈঠক করেছেন। তারেক রহমানের স্বদেশে ফেরা নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বেশ সহযোগিতা পাচ্ছে জানিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, আমরা আমাদের জেলা-উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাদের নির্দেশনা দিচ্ছি, তারা কীভাবে ২৪শে ডিসেম্বর রাতে কিংবা ২৫ তারিখ সকালের মধ্যে প্রিয় নেতাকে স্বাগত জানাতে ঢাকায় আসবেন। তিনি বলেন, তারেক রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন যেন বিগত ৫৫ বছরের ইতিহাসে যা কিছু দৃষ্টান্ত আছে, তাকে ছাড়িয়ে যায় এবং আগামী ৫৫ বছরের ইতিহাসে যেন এই রকম ঘটনা না হয়। সেই রকম স্মরণীয় করে রাখার জন্য সমস্ত আয়োজন হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন বিএনপি’র এই নেতা। আশা করি সারা দেশের মানুষ সেজন্য অপেক্ষা করছেন।  তিনশ’ ফিটে সংবর্ধনা দেয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন বলেন, আমরা জায়গাগুলো দেখছি। দীর্ঘ ১৭ বছর পর দেশে ফেরায় তারেক রহমানকে সারা দেশের নেতাকর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস কাজ করছে। সারা দেশ থেকে নেতাকর্মীরা আসবেন আমাদের প্রিয় নেতাকে একনজর দেখার জন্য। তাই আমরা এমন একটি জায়গা খুঁজছি মানুষের ভোগান্তি এড়িয়ে সেখানে সবাইকে সংকুলান করতে পারি। নির্দিষ্ট স্পট পরে জানানো হবে।    

সাত রুটে বিশেষ ট্রেন বুকিংয়ের আবেদন: এদিকে তারেক রহমানকে সংবর্ধনায় সারা দেশের নেতাকর্মীদের আসার সুবিধার্ধে সাতটি রুটে বিশেষ ট্রেন বুকিংয়ের জন্য রেলপথ মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছে বিএনপি। গতকাল দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে এ আবেদন করা হয়। এতে বলা হয়, বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগামী ২৫শে ডিসেম্বর যুক্তরাজ্য থেকে ঢাকায় প্রত্যাবর্তন করবেন। তাকে সংবর্ধনা জানানোর জন্য সারা দেশ থেকে বিপুলসংখ্যাক ছাত্র-জনতা ঢাকায় আসবেন। তাদের আসার সুবিধার্থে বিএনপি’র পক্ষ থেকে ২৪শে ডিসেম্বর দিবাগত রাতের বিভিন্ন রুটে রেলগাড়ি রিজার্ভ করতে ইচ্ছুক। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী নির্দিষ্ট ভাড়া পরিশোধ করা হবে। রেলপথ রুটের বিবরণ; ১. কক্সবাজার-ঢাকা, ২. সিলেট-ঢাকা, ৩. জামালপুর-ময়মনসিংহ-ঢাকা, ৪. টাঙ্গাইল-ঢাকা, ৫. চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহী-ঢাকা, ৬. পঞ্চগড়-নিলফামারী-পার্বতীপুর-ঢাকা, ৭. কুড়িগ্রাম-রংপুর-ঢাকা। উল্লেখিত রুটে ১টি করে স্পেশাল ট্রেন/অতিরিক্ত বগি রিজার্ভ করার অনুমতি প্রদানের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।

ব্যাপক জনসমাগমের প্রস্তুতি: এদিকে তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। তার স্বদেশপ্রত্যাবর্তন দিবসটিকে স্মরণীয় করে রাখতে স্মরণকালের বৃহত্তম গণজমায়েতের পরিকল্পনা করছে দলটি। ইতিমধ্যে গুলশান কার্যালয়ে প্রস্তুতি সভা করেছে দলটি। গঠন করা হয়েছে অভ্যর্থনা কমিটিও। তারেক রহমানের নিরাপত্তায় নিয়োগ দেয়া হয়েছে ‘প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা’। কেনা হয়েছে বুলেটপ্রুফ গাড়ি। প্রস্তুতি করা হয়েছে গুলশানের বাসভবন। নতুন করে সাজানো হয়েছে গুলশান ও নয়াপল্টন কার্যালয়ের কক্ষ। বিএনপি’র দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন, স্বৈরাচার হাসিনার রোষানলে পড়ে দীর্ঘদিন লন্ডনে নির্বাসিত জীবন শেষে তারেক রহমানের ঘোষণায় জেলায় জেলায় তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে উচ্ছ্বাস। কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশনার আগেই তৃণমূল নেতাকর্মীরা নিজেরাই যানবাহন ভাড়া করছেন। শুধু ঢাকা নয়, দেশের সবগুলো জেলা, উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পর্যায় থেকে দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ সংবর্ধনায় যোগ দেবেন। তারা বাস, ট্রাক, মাইক্রো, লঞ্চ, ট্রেন ও বিমানযোগে আসবেন। উত্তরাঞ্চলের জেলা উপজেলা থেকে আসা নেতাকর্মীদের গাড়িবহর টঙ্গীর ইজতেমা মাঠে রাখা হবে। সেখান থেকে হেঁটে বিমানবন্দর সড়কে জড়ো হবেন তারা। সাধারণ মানুষের যানজটের ভোগান্তি এড়াতে তারেক রহমানের ফেরার ক্ষণটি বড়দিনের ছুটিকে বেছে নেয়া হয়েছে। বিমানবন্দরে ভিভিআইপি লাউঞ্জে দলের সিনিয়র নেতারা থাকবেন। আর বিমানবন্দরের বাইরে থেকে পূর্বাচলের তিনশ’ ফিট পর্যন্ত বিস্তৃত হবে দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের ঢল। তবে বিমানবন্দর থেকে তারেক রহমানের এভারকেয়ার হাসপাতালে অসুস্থ মা বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে যাওয়ার কথা রয়েছে। সেজন্য বিমানবন্দর থেকে এভারকেয়ার হাসপাতাল পর্যন্ত নেতাকর্মীরা রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে তারেক রহমানকে সংবর্ধনা জানাবেন।

সফরসঙ্গী হিসেবে ফিরবেন ৫ জন: এদিকে লন্ডন থেকে তারেক রহমানের সফরসঙ্গী হিসেবে তার স্ত্রী জুবাইদা রহমান ও কন্যা জাইমা রহমান আসবেন। এ ছাড়া তারেক রহমানের মিডিয়া টিমের প্রধান আবু আবদুল্লাহ সালেহ, পারসোনাল এসিস্ট্যান্ট আব্দুর রহমান সানি ও তাবাসসুম ফারহানা নামে আরেকজন আসবেন বলে জানা গেছে। তবে বিএনপি’র নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, জুবাইদা রহমান বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করলেও ২০শে ডিসেম্বর লন্ডন ফেরার কথা রয়েছে। লন্ডন ফেরার দু’দিন পরই আবার তিনি তারেক রহমানের সঙ্গী হয়ে দেশে ফিরবেন। 

থাকবে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয়: 
এদিকে বিমানববন্দর থেকে এভারকেয়ার হাসপাতাল ও গুলশানের বাসভবন পর্যন্ত তারেক রহমানের যাত্রাপথে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হবে। এসএসএফের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া তার নিরাপত্তা উপলক্ষে মাঠে থাকবে ঢাকা মহানগর পুলিশের সোয়াট টিম, বোম ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা। তার বাসা ও অফিস ডগ স্কোয়াড দিয়ে সুইপিংয়ের মাধ্যমে নিরাপত্তার দায়িত্ব নেবে পুলিশ। গুলশান অ্যাভিনিউয়ের ১৯৬ নম্বর বাসাটি কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলবে পুলিশ। সিসি ক্যামেরায় মোড়ানো থাকবে পুরো বাড়িটি। অনুমোদিত কাউকে এই বাড়ির আশপাশেই ভিড়তে দেয়া হবে না।

তারেক রহমানের দেশে ফেরার সিদ্ধান্তের কথা জানার পর তার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে এক গুরুত্বপূর্ণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে পুলিশপ্রধান বাহারুল আলম, ঢাকার পুলিশ কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীসহ সংশ্লিষ্ট অন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে তারেক রহমানকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেয়ার দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয় সরকারের পক্ষ থেকে। 

ট্রাভেল পাসের আবেদন তারেক রহমানের: 
দেশে ফিরতে ট্রাভেল পাসের জন্য আবেদন করেছেন তারেক রহমান।  বৃহস্পতিবার লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের একটি সূত্র মানবজমিনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। সূত্র জানায়, ট্রাভেল পাসের জন্য ফরম পূরণ করে যুক্তরাজ্য বিএনপি’র সাবেক যুগ্ম সম্পাদক, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন ইউরোপের কো-অর্ডিনেটর কামাল উদ্দিনের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশ হাইকমিশনে পাঠিয়েছেন তারেক রহমান।

জানা যায়, ২০০৭ সালে গ্রেপ্তারের পর ২০০৮ সালে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য লন্ডন যান তারেক রহমান। স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের রোষানলে পড়ে তিনি পাসপোর্ট নবায়ন করতে পারেননি। পট পরিবর্তনের পর আগামী ২৫শে ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন তিনি। সেজন্য ট্রাভেল পাসের আবেদন করেছেন তিনি।