Image description

দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সবচেয়ে বড় প্রশ্নগুলোর একটি হলো, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কেন লন্ডনে ১৭ বছরেরও বেশি সময় স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকার পরও দেশে ফিরছেন না। বিশেষ করে যখন আগামী বছরের শুরুতে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা। ২০২৪ সালের আগস্টে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করা গণ-অভ্যুত্থান তারেক রহমানের ফেরার জন্য যেন একটি সুযোগ তৈরি করেছে। ক্ষমতায় থাকাকালে হাসিনা বিএনপি’র ওপর কঠোর দমনপীড়ন চালান। আর তারেক রহমানের বিরুদ্ধে থাকা বহু মামলাকে তার সমর্থকরা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেন। এসব মামলার রায় মে মাসের মধ্যে প্রত্যাহার করা হয়।

সে সময় তারেক রহমানের স্ত্রী জুবাইদা রহমান তার অসুস্থ শাশুড়ি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সেবার জন্য বাংলাদেশে আসেন। আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষণা দেয়, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে, যা তারেক রহমানের সম্ভাব্য প্রত্যাবর্তনের গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে দেয়। এত কিছুর পরও তিনি নীরবই ছিলেন।

অবশেষে গত সপ্তাহে তারেক রহমান বিএনপি’র শীর্ষ নেতাদের জানান যে, তিনি ২৫শে ডিসেম্বর বাংলাদেশে ফিরবেন। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি নির্বাচনের চূড়ান্ত তারিখ ঘোষণার অপেক্ষায় ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার দেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনার টেলিভিশনে দেয়া ভাষণে ১২ই ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন।

খালেদা জিয়ার অবনতিশীল স্বাস্থ্যের অবস্থাও তারেক রহমানকে এখন দেশে ফিরতে প্রভাবিত করে থাকতে পারে। ২৩শে নভেম্বর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখনো ফুসফুসের সংক্রমণ নিয়ে সংকটাপন্ন অবস্থায় আছেন তিনি। তবে দেশে ফিরলে তারেক রহমানের পথ খুব একটা মসৃণ হবে না। বিএনপি’র নেতৃত্ব ও দলের বড় অংশ তাকে উষ্ণভাবে স্বাগত জানালেও, প্রায় দুই দশক দেশের বাইরে থাকার পর তিনি আদৌ নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত- এ বিষয়টি দলের তৃণমূল পর্যায়ে তাকে প্রমাণ করতে হবে। বৃটেনে তুলনামূলক স্বাচ্ছন্দ্যে থাকার সময়, দলের অন্য নেতারা হাসিনার দমনপীড়নের সবচেয়ে কঠিন ধাক্কা সামলেছেন।

যদিও আসন্ন নির্বাচনে বিএনপিকে বড় জয়ী হিসেবে ধরা হচ্ছে, তবু দলটি আত্মতুষ্ট হতে পারে না। ইসলামী দল জামায়াতে ইসলামী, যা একসময় বিএনপি’র নির্বাচনী মিত্র ছিল, সম্প্রতি উল্লেখযোগ্য গতি পেয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসু নির্বাচনে জামায়াতের ছাত্রসংগঠনের বড় জয়- যা বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক ‘বেলওয়েদার’ হিসেবে বিবেচিত, তা এই গতি আরও বাড়িয়েছে।

জামায়াত নিজেকে দুর্নীতিবিরোধী ও সামাজিক কল্যাণকেন্দ্রিক দল হিসেবে তুলে ধরছে। সংস্কারের জন্য জনমানুষের আকাঙক্ষা ও দেশের অর্থনৈতিক চাপের প্রেক্ষাপটে তা বেশ গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠছে। তবে তারেক রহমানের জন্য সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হতে পারে নির্বাচনী সহিংসতার উচ্চ ঝুঁকি। এটা সামগ্রিকভাবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জও হয়ে উঠতে পারে। রাজনৈতিক কার্যক্রম থেকে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নির্বাচন বানচালের হুমকি দিয়েছে। গত মাসে মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার পর দলটির ক্ষোভ আরও বেড়েছে (আওয়ামী লীগ মামলাটিকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বলে প্রত্যাখ্যান করেছে)।

গত শুক্রবার হাসিনাবিরোধী আন্দোলনের ছাত্রনেতা শরীফ ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টা লক্ষ্য করা হয়; তিনি বর্তমানে সংকটাপন্ন। পুলিশ অভিযোগ করেছে, হামলাকারী আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠনের সদস্য। আরেক ছাত্র আন্দোলন নেতা মাহফুজ আলম সতর্ক করে বলেছেন, ‘ওপাশে যদি একটি লাশ পড়ে, আমরা পাল্টা জবাব দিতে ভুলবো না।’

তারেক রহমান তুলনামূলকভাবে কম আক্রমণাত্মক অবস্থান নিয়েছেন, যদিও তিনি নির্বাচন বানচালের একটি ‘ষড়যন্ত্র’-এর কথা বলেছেন। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, এই হত্যাচেষ্টা ভোট আয়োজনকে বাধাগ্রস্ত করবে না। তবু ঘটনাটি নির্বাচনী অস্থিরতা এবং সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ বাড়াবে।

দক্ষিণ এশিয়ায় নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতা নতুন কিছু নয়। তবে বাংলাদেশের আশা- এ ধরনের সহিংসতা যেন প্রচার বা ভোটার উপস্থিতিকে এমনভাবে প্রভাবিত না করে, যাতে নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে পড়ে।