Image description

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, ‘বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম ভিনদেশীদের দাদাগিরি মেনে নেয়নি, নেবে না।’

মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) দুপুরে মহানগরীর হলরুমে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে শহীদ ও আহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির আব্দুস সবুর ফকিরের সভাপতিত্বে এবং মহানগরীর অফিস সম্পাদক কামরুল আহসান হাসানের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি যথাক্রমে মোহাম্মদ কামাল হোসেন ও মুহাম্মদ শামছুর রহমান, মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্য ও বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সভাপতি আব্দুস সালাম, মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্য মুহাম্মদ শরিফুল ইসলাম প্রমুখ। এছাড়াও অনুষ্ঠানে মহানগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, ‘যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ছিনতাই করে নিজেদের স্বাধীনতা দাবি করে তারা আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে না, বিশ্বাস করে না। দীর্ঘ নয় মাস পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে বাংলাদেশের জনগণ। ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের দিনে পাকিস্তানি বাহিনী বাংলাদেশের কাছে আত্মসমর্পণ না করে ভারতীয় বাহিনীর কাছে কেন আত্মসমর্পণ করেছিল? কেন সেদিন মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানীকে সেখানে রাখা হয়নি? এর একমাত্র কারণ ভারত চায়নি এবং চায় না বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক। তারা আমাদের স্বাধীনতা ছিনতাই করে নিয়ে এদেশের সম্পদ লুটপাট করে নিয়েছে। তারা চেয়েছে এবং চায় তাদের সেবাদাস সরকার দ্বারা বাংলাদেশ পরিচালিত হোক। কিন্তু বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম ভিনদেশীদের দাদাগিরি মেনে নেয়নি, নেবে না। যার কারণে চব্বিশের জুলাই বিপ্লবে কেবল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় হারায়নি, বরং আধিপাত্যবাদ পরাজিত হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালে লুট হওয়া আমাদের স্বাধীনতা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতা ফিরিয়ে এনেছে। এজন্য পরাজিত আধিপাত্যবাদের সহযোগিতায় ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ জুলাইযোদ্ধাদের টার্গেট করে হত্যার ছক কষছে। এরই অংশ হিসেবে ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণ করা হয়েছে। ওসমান হাদিকে গুলি করার অর্থ প্রতিটি জুলাইযোদ্ধার মাথায় গুলি করা। বিপ্লবী তরুণরা পরাজিত শক্তির কাছে মাথা নোয়াবে না। আধিপাত্যবাদের দোসর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের কবর রচনা করে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবে। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের মাধ্যমেই জাতি স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ উপভোগ করবে।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘ভারত আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করেছিল নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য। তারা বন্ধু বেশে আমাদেরকে শোষণ করেছে। আমাদের ভূ-খণ্ডের সমস্ত সম্পদ এমনকি রেললাইনের নাট-বল্টু তারা লুট করে নিয়েছিল। যেটি মেজর জলিল নিজের লেখা বইতে উল্লেখ করে গেছেন। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতনের পর আওয়ামী লীগের চেয়েও বেশি মাথা খারাপ হয়ে গেছে আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রের।’

এত উন্নয়ন করলে পালানোর কারণ কী প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘আসলে কোনো উন্নয়ন নয়, বরং দুর্নীতি আর লুটপাটের মহোৎসব চলছিল বিগত ১৫ বছর। পালিয়ে যাওয়া নেতৃত্ব বা দল দেশপ্রেমিক নয় বরং যারা দেশের জন্য জীবন দিয়েছে তারাই দেশপ্রেমিক। জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতা শহীদ মীর কাসেম আলী বিদেশে থাকাকালীন যখন অন্য নেতৃবৃন্দকে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ মিথ্যা মামলা দিয়ে আটক করেছিল তখন তিনি দেশে আসতে চাইলে তাকে বলা হয়েছে আপনি দেশে আসলে আপনাকেও আটক করবে। তিনি বলেছিলেন, আমি কোনো অন্যায় করেনি। আমাকে আটক করে জেল-জুলুম-নির্যাতন করলেও আমি দেশে আসবোই। তিনি দেশে আসলেন, তাকেও আটক করা হয় এবং আওয়ামী লীগের ক্যাঙ্গারু কোর্টে অন্যান্য নেতৃবৃন্দের মতো তাকেই বিচারিক হত্যার শিকার হতে হয়েছে। জামায়াতে নেতারা বিদেশে পালিয়ে যায়নি, বরং দেশে এসে জীবন দিয়েছে। যারা দেশের জন্য জীবন দেয় তারাই প্রকৃত দেশপ্রেমিক। যারা পালিয়ে যায় তারা দেশপ্রেমিক নয়, বরং তারা অপরাধী।’

সভাপতির বক্তব্যে আব্দুস সবুর ফকির বলেন, ‘প্রতিবছরই বিজয় দিবসের আলোচনা হয়, কিন্তু আলোচনায় উত্থাপিত প্রশ্নের জবাব কেউ দিচ্ছে না। যার কারণে তরুণ প্রজন্ম ইতিহাস জানতে পারছে না।’

তিনি বলেন, ‘জীবন দিয়েছে এদেশের দামাল ছেলেরা, ইজ্জত দিয়েছেন মা-বোনেরা, মানুষ হারিয়েছে ঘরবাড়ি। কিন্তু পাকিস্তান বাহিনী মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিক নায়ক জেনারেল ওসমানীর কাছে আত্মসমর্পণ না করে কেন ভারতীয় বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল? সেটি ছিল ভারতীয়দের চক্রান্ত। আমাদেরকে বাদ দিয়ে ভারতীয় বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করার মধ্য দিয়ে আমাদের বিজয়, আমাদের স্বাধীনতা ছিনতাই করা হয়েছে। ভারত আমাদেরকে মুক্তিযুদ্ধকালীন সহযোগিতা করেছে ঠিকই তবে নিজেদের স্বার্থে, নিজেদের প্রয়োজনে। আমাদের অর্জিত স্বাধীনতা তারা ছিনতাই করে নিয়ে আমাদেরকে তাদের কাছে জিম্মি করে রেখেছিল।’

তিনি উল্লেখ করেন, ‘জাতিকে জিম্মিদশা থেকে মুক্ত করতে এদেশের তরুণ প্রজন্ম চব্বিশের বিপ্লব সংগঠিত করেছে। যাদের নেতৃত্বে আমরা আমাদের ছিনতাই হওয়া স্বাধীনতা ফিরিয়ে পেয়েছি তাদের এখন টার্গেট করে হত্যার মিশনে নেমেছে পরাজিত দুই শক্তি। বিজয়ের এই দিনে আমাদেরকে দৃঢ়ভাবে শপথ নিতে কোনো অপশক্তির কাছে আমরা হার মানব না। আমরা নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবই, করব ইনশাআল্লাহ।’

তিনি নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে তরুণ বিপ্লবী যুব সমাজকে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

প্রেস বিজ্ঞপ্তি