যশোর শহরের বেজপাড়া আনসার ক্যাম্প এলাকায় তানভীর হাসানের খুনের ঘটনায় মূলহোতা একই ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান বাবুল।
নিহতের বাবা মিন্টু মিয়ার দায়ের করা মামলায় তেমনই আভাস পাওয়া গেছে। বেরিয়ে আসছে হত্যাকাণ্ডের পেছনের নানা কারণও।
গত শনিবার (৬ ডিসেম্বর) মধ্যরাতে খুন হন তানভীর হাসান (২৬)। নিহত তানভীর নিজেও হত্যাসহ পাঁচ মামলার আসামি বলে পুলিশ জানিয়েছে।
রোববার (৭ ডিসেম্বর) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের বাবা মিন্টু মিয়া বাদী হয়ে যশোর কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। হত্যাকাণ্ডে সাবেক কাউন্সিলর শহর আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান বাবুলসহ ৮ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত ৪-৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের প্রায় সবাই এলাকায় দুর্ধর্ষ হিসেবে পরিচিত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিহতের বন্ধুরা জানিয়েছেন, সাবেক কাউন্সিলর আসাদুজ্জামান বাবুলকে তার বাড়ির সামনে একবার হত্যার চেষ্টা চালায় তানভীর। তখন থেকেই কাউন্সিলর বাবুল তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই এ হত্যাকাণ্ড।
তার বন্ধুরা জানান, গত ৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যার দিকে নিহত তানভীর শংকরপুর হাজারিগেট এলাকার একটি ব্যাডমিন্টন কোর্টের পাশে বন্ধু নাঈম কাজী ও সাজুকে নিয়ে বসেছিল। তখন যৌথবাহিনী সেখানে অভিযান চালায়। সে পালিয়ে গেলেও যৌথবাহিনীর হাতে আটক হয় সাজু ও নাঈম কাজী। তাদের দুইজনের কাছ থেকে একটি চাকু ও পাঁচটি ককটেল উদ্ধার করে যৌথবাহিনী। আশপাশে তখন আল আমিন, গোল্ডেন সাব্বির, মুসাসহ বেশ কয়েকজন ছিল। তানভীরকে না পেয়ে তার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে এবং তাকে খুন করবে বলে শাসিয়ে যায়।
তারা বলেছে- সাবেক কাউন্সিলর আসাদুজ্জামান বাবুল খুন করানোর জন্য তানভীরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু আল আমিন, মুসা, গোল্ডেন সাব্বিরের সঙ্গে চুক্তি করেন। তানভীর তার বন্ধু আল আমিনকে খুব বিশ্বাস করত। রাতে যৌথবাহিনীর ধাওয়া খেয়ে সে আল আমিনের কাছেই যায়। সুযোগ বুঝে আল আমিন, কালামানিকসহ অন্যরা তাকে খুন করে।
এদিকে এ হত্যাকাণ্ডের মূল কারণ জানতে পেরেছে পুলিশ। পরিকল্পনাও বেশ পুরোনো। এর ইন্ধনদাতা ও অর্থের জোগানদাতা হিসেবে সাবেক কাউন্সিলর আসাদুজ্জামান বাবুলের নাম বলছে নিহতের কয়েক বন্ধু। বাবুলের সঙ্গে তানভীরের বিরোধ ছিল। একে অপরকে দেখে নেওয়ার চেষ্টা করেছে অনেকবার।
পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, ৬ ডিসেম্বর আনসার ক্যাম্পের পেছন থেকে আটক স্বাক্ষরের বাড়ির দোতালায় বসে ইয়াবা সেবন করে তানভীর। তার সঙ্গে ছিল স্বাক্ষর, অভি, কালামানিক, শান্ত, আল আমিন, সোনা মিয়া, সাদেকসহ বেশ কয়েকজন। প্রায় এক ঘণ্টা সেখানে বসে তারা ১২ পিস ইয়াবা সেবন করে। আর ওখানেই হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। সেই মোতাবেক সোনা মিয়ার বাসায় নেওয়া হয় তানভীরকে। ওখানেই পেছন থেকে তাকে আঘাত করা হয়। তানভীর দোতলা থেকে লাফিয়ে আনসার ক্যাম্পের দিকে যাওয়ার সময় রাস্তায় পড়ে গেলে সেখানে আবারও চলে ছুরিকাঘাত। এরপর হত্যাকারীরা দৌড়ে পালিয়ে যায়। এলাকার লোকজন কালামানিক ও আল আমিনকে দৌড়ে পালিয়ে যেতে দেখেছেন। এই দুইজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারলে হত্যার মূল রহস্য এবং কারা ইন্ধনদাতা তা বেরিয়ে আসবে বলে পুলিশের ধারণা।
মামলায় বাবুল ছাড়াও অন্য আসামিরা হলেন- শহরের শংকরপুরের মুসা, সাব্বির ওরফে গোল্ডেন সাব্বির, আনসার ক্যাম্প এলাকার আল আমিন ওরফে চোর আল আমিন, আব্দুল্লাহর ছেলে অভি ও মুজিবরের ছেলে মানিক ওরফে কালামানিক। এছাড়া অজ্ঞাত আরও ৪-৫ জন।
এদিকে ঘটনার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে সোনা মিয়া ও রকিবুল ইসলাম স্বাক্ষর নামে দুইজনকে আটক করেছে পুলিশ। একই সঙ্গে জব্দ করা হয় একটি চাকু।
আটক সোনা মিয়া গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার রামদিয়া কলেজ এলাকার বাসিন্দা। তিনি বর্তমানে যশোর শহরের আনসার ক্যাম্পের পেছনে জনৈক হাসানের বাড়ির ভাড়াটিয়া। আর রকিবুল ইসলাম স্বাক্ষর একই এলাকার রবিউল ইসলামের ছেলে।
কোতোয়ালি থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার ইনচার্জ কাজী বাবুল হোসেন জানিয়েছেন, তানভীর হত্যার ঘটনায় তার বাবা মামলা করেছেন।
প্রসঙ্গত, ৬ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ১২টার দিকে শহরের নাজির শংকরপুর হাজারিগেট কলোনিপাড়ার মিন্টু মিয়ার ছেলে তানভীর ছুরিকাঘাতে নিহত হন। পুলিশ তার পকেট থেকে ৬০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছিল।