দেড় মাসের রোডম্যাপ তৈরি করে আপাতত চার মন্ত্রণালয়কে নিয়ে রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া গণভোট নিয়ে প্রচারে নামছে সরকার। মন্ত্রণালয়গুলো হলো- তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, ধর্ম মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়। পরে এর সঙ্গে আরও কয়েকটি মন্ত্রণালয়কে যুক্ত করার পরিকল্পনা আছে সরকারের।
গণভোটের চার প্রশ্ন নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য নির্দিষ্ট কোনো বাজেট নির্ধারণ করা হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের দুজন বিশেষ সহকারী গণভোট নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করবেন। ওই দুজন বিশেষ সহকারী জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রভাবশালী সদস্য ছিলেন। জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরই গণভোটের সচেতনতা নিয়ে মাঠে নামবে সরকার। গণভোট নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে প্রচারণায় ব্যবহার করার উদ্যোগও নিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে রিল বা পোস্ট বানিয়ে তা ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব ও টিকটকের মতো মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। হ্যাঁ ভোট দিলে কী হতে পারে, না ভোট দিলে কী হতে পারে- এসব বিষয়ে ছোট ছোট আকারে বার্তা পৌঁছে দেওয়া হবে জনসাধারণের কাছে।
সরাসরি জনসম্পৃক্ততা রয়েছে এমন মন্ত্রণালয়গুলোকে প্রাথমিকভাবে গণভোট নিয়ে জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করতে কাজে লাগাবে সরকার। ধর্ম মন্ত্রণালয়কে এক্ষেত্রে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
কীভাবে মন্ত্রণালয়গুলো কাজ করবে এমন প্রশ্নে সংশ্লিষ্টরা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মসজিদের ইমামদের এক্ষেত্রে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। জুমার নামাজের খুতবায় তারা যেন গণভোটের বিষয়ে জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করে সে বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এ জন্য ইমামদের হয়তো এক বা দুই দিনের একটি ওরিয়েন্টেশন করানো হবে। পাশাপাশি ইমামদের মাধ্যমে বা মসজিদ কমিটির মাধ্যমে গণভোট নিয়ে সরকারের ছাপানো লিফলেট জনসাধারণের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় ওয়াজ-মাহফিল আয়োজন করা একটি সামাজিক কালচারে পরিণত হয়েছে। এতে অনেক মানুষ উপস্থিত থাকে। সেখানেও বক্তাদের মাধ্যমে গণভোট নিয়ে প্রচার চালাতে চায় সরকার। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সারা দেশে থাকা উইং ব্যবহার করবে গণভোট প্রচারণা নিয়ে। একইভাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে কাজে লাগাতে চায় সরকার।
এসব উদ্যোগের পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে। কমিশনের পক্ষ থেকেও গণভোট নিয়ে আলাদা উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
গণভোট নিয়ে জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করা নিঃসন্দেহে চ্যালেঞ্জিং কাজ বলে জানান প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা চারটি মন্ত্রণালয়কে কাজে লাগাতে চাই। পরবর্তীতে আরও কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা লাগবে। তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে হ্যাঁ বা না ভোট দেওয়ার বিষয়ে কিছু বলা হবে না। গণভোটের জন্য যে প্রশ্নগুলো রয়েছে সেসব বিষয়ে তাদের বোঝানো হবে। ওইসব প্রশ্নে কী ধরনের সংস্কারের কথা বলা হয়েছে সেসব জনসাধারণকে জানানো হবে। এর বাইরে হ্যাঁ ভোট দিলে কী হতে পারে বা না ভোট দিলে কী হতে পারে সেসব বিষয়ে সচেতন করা হবে। ব্যাখা দিয়ে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের তিনটা এজেন্ডার মধ্যে সংস্কার অন্যতম। গণভোট হচ্ছে সংস্কারের মূল অংশ। এ কারণে গণভোটের বিষয়ে সরাসরি কাজ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাকি দুটি এজেন্ডা বিচার ও নির্বাচন নিয়ে এরই মধ্যে অনেকদূর এগিয়েছে সরকার।
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। সেই আলোকে ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এর আগে গণভোট নিয়ে অধ্যাদেশ জারি করেছেন রাষ্ট্রপতি। এতে বলা হয়েছে, জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ অনুসারে সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত কয়েকটি প্রস্তাবের বিষয়ে জনগণের সম্মতি রয়েছে কি না, তা যাচাইয়ে গণভোটের বিধান প্রণয়নকল্পে প্রণীত এ অধ্যাদেশ।
গণভোটের জন্য তৈরি করা চারটি প্রশ্ন সম্পর্কে জনসাধারণের ৯৫ ভাগ এখনো অবগত নন বলে দাবি করেছেন রাজনৈতিক দলের নেতারা। তারা জানান, সরকার ও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এখনো এ নিয়ে স্পষ্ট কোনো ভূমিকা নেওয়া হয়নি। তাদের পক্ষ থেকে গ্রাম পর্যায়ে প্রচারণা চালানো হয়নি। এ পরিস্থিতিতে আগামীতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া গণভোট বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়তে পারে বলে তারা জানান।