Image description

গত আগস্টের ঘটনা। সাদা পাথর লুটের ঘটনায় গোটা দেশ জুড়ে হুলুস্থুল। তৎকালীন জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদ দায়িত্বে। তিনি কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারেননি। বিতর্ক দেখা দেয় দেশ জুড়ে। বদলি হলেন তিনি। সিলেটে এলেন নতুন জেলা প্রশাসক সারোয়ার আলম। তিনি আসতেই ‘ডেটলক’ সবখানেই। নীরব হলো পরিস্থিতি। কিন্তু পাথরখেকোদের আটকানো মুশকিল। প্রশাসনের তরফ থেকে এ যেন এক প্রাণান্তকর লড়াই। পাথর লুট ঠেকানোই কঠিন চ্যালেঞ্জ। কয়েক মাস নীরব থাকার পর এখন আসতে শুরু করেছে বেশ কিছু অভিযোগ। এর মধ্যে বড় অভিযোগ লোভা ছড়ার পাথর লুটের ঘটনা। এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি তোলপাড় চলছে। দিনদুপুরেই চলছে লুটপাট। প্রশাসন নীরব। বদলির সময় চলছে। ওসি, ইউএনও বদলি হয়েছেন। নতুনরা এসে দায়িত্ব নিচ্ছেন কিংবা নেবেন। এই সুযোগে লোভা ছড়ায় চলছে পাথর লুটের মহোৎসব চালাচ্ছে একটি পাথরখেকো সিন্ডিকেট। স্থানীয়রা জানিয়েছেন- লোভা ছড়ায় ইতিমধ্যে কয়েক কোটি টাকার পাথর লুট করা হয়েছে। এখনো চলছে লুটপাট। উপজেলা প্রশাসন নির্বিকার। পুলিশের বিরুদ্ধে উঠছে অভিযোগও। লোভা ছড়া কোয়ারির পাথর এখন প্রশাসনের দখলে। জব্দ করা প্রায় এক কোটি ঘনফুট পাথর থেকে সিলেটের মেসার্স পিয়াস এন্টারপ্রাইজ ৪৪ লাখ ঘনফুট পাথর নিলামে এনেছিল।

কথা ছিল পিয়াস এন্টারপ্রাইজ নিলামকৃত পাথর পুরোটাই সেখান থেকে বিক্রি করে ফেলবে কিংবা সরিয়ে নেবে। প্রশাসনের তরফ থেকে দেয়া হয়েছিল সময়ও। কিন্তু নদীতে পানি না থাকা আনুষঙ্গিক কারণে মেসার্স পিয়াস এন্টারপ্রাইজ ২০ লাখ ঘনফুটের মতো পাথর থেকে রয়্যালিটি আদায়ের মাধ্যমে বিক্রি করতে পেরেছিল। পরবর্তীতে সেটি প্রশাসনের তদন্ত রিপোর্টে সেটি প্রমাণিত হয়েছে। এখনো সেখানে পিয়াস এন্টারপ্রাইজের ২৪ লাখ ঘনফুট পাথর রয়ে গেছে। এর বাইরে প্রশাসনের জব্দ করা পাথরও রয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন- প্রায় চার বছর আগে যখন সিলেটের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই পাথরগুলো জব্দ করা হয়েছিল তখন ওই পাথরের মালিকানা ছিল। পরবর্তীতে জব্দ করা পাথর স্থানীয় মালিকরা সরিয়ে নিতে না পারলেও রাতের আঁধারে চোরেরা ১০ থেকে ১৫ লাখ ফুট পাথর চুরি করে নিয়ে গেছে। এবারো চলছে পাথর লুটের মহোৎসব। প্রতিদিন শতাধিক বারকি নৌকা দিয়ে পাথর লুট করে বাগান এলাকা ও লোভাছড়ার মুখ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পরবর্তীতে সেগুলো বিক্রি করে ভাগবাটোয়ারা করা হচ্ছে টাকা। স্থানীয় শ্রমিকরা অভিযোগ করেছেন; লক্ষ্মী প্রসাদ ইউনিয়নের আজাদ আহমদ মেম্বারের নেতৃত্বে ডাউকের গুল গ্রামের ইসলাম উদ্দিন, আসাব উদ্দিন, কান্দলা গ্রামের আবুল অয়েছসহ কয়েকজন লুটেরা এই পাথর লুটপাট করে নিয়ে যাচ্ছে। এতে টহলে থাকা পুলিশ দল তাদের সহযোগিতা করছে। প্রতি বারকি নৌকা থেকে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা চাঁদা আদায়েরও অভিযোগ রয়েছে। মেসার্স পিয়াস এন্টারপ্রাইজের লোকজন জানিয়েছেন- ওই এলাকায় তাদের ২৪ লাখ ঘনফুট পাথর এখনো রয়ে গেছে। ওই পাথর সরিয়ে নিতে তারা আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন। পাথর সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ পেলেও সরকার পক্ষের আপিলের কারণে বিষয়টি শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। এই অবস্থায় তাদের এলাকা থেকেও দিনে-রাতে পাথর লুটপাট করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে তারা সহযোগিতা চেয়েও পাচ্ছেন না। পাথর লুটপাটের দৃশ্য সম্বলিত একটি ভিডিওতে দেখা গেছে- বারকি শ্রমিকরা নৌকা দিয়ে জব্দ করা পাথরই সরিয়ে নিচ্ছেন। তারা দলবেঁধে তীরের কাছাকাছি রাখা ওই পাথর সরিয়ে নিচ্ছে।

স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি এ সময় তাদের নির্দেশনা দিতেও দেখা গেছে। অভিযোগের ব্যাপারে স্থানীয় আজাদ আহমদ ওরফে বতাই মেম্বার মানবজমিনকে জানিয়েছেন- আমরা তো ‘ডেবিল’ আখ্যায় আখ্যায়িত। এলাকায়ই নেই। কীভাবে পাথর লুটে থাকতে পারি। তবে তিনি বলেন- কিছু সংখ্যক শ্রমিক দিনে ও রাতে কয়েক নৌকা পাথর নিয়ে গিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। ওই এলাকার মানুষ দুর্দিনে রয়েছে। কেউ সীমান্তের ওপারে ভারতে গুলিতে মারা যাচ্ছে, কেউ পাথর লুট করছে। এ ব্যাপারে কানাইঘাট থানার এসআই শাহ আলম মানবজমিনকে জানিয়েছেন- সীমান্তের ঘটনা দেখবে বিজিবি। আর পাথর লুট বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিষয়টি দেখবেন ইউএনও। পুলিশ দায়িত্ব পালনের সময় কোনো অবৈধ কর্মকাণ্ড দেখলে বাধা দিচ্ছে। আইনি প্রক্রিয়ায় যাচ্ছে। তিনি বলেন- পুলিশের মদত কিংবা অন্য কোনো অভিযোগ থাকলে সেটি সত্য নয়। ওই এলাকায় দায়িত্ব পালনে পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো গাফিলতি করা হচ্ছে না বলে জানান তিনি। শ্রমিকদের লুটপাটের বিষয়ে লোভাছড়া আনলোড শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. আখতার হোসাইন জানিয়েছেন- লোভাছড়া কোয়ারিতে অবৈধ ভাবে পাথর উত্তোলন করে অপসারণ কিংবা নদী তীর সুরক্ষা এলাকা থেকে পাথর উত্তোলনে শ্রমিক ইউনিয়নের কোনো শ্রমিককে উৎসাহিত করা হয়নি। বরং তাদের আইনের বিষয়টি জানানো হয়েছে। তবে তিনি স্বীকার করেছেন- অবৈধভাবে নদীর তীরবর্তী নিম্নাংশে পাথর উত্তোলনের ফলে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক যেকোনো সময় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে।