Image description
আসছেন সাংবাদিক, অমুসলিম, আইনজীবী, ডাক্তার, নারী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য চলতি বছরের শুরুতে আসনভিত্তিক সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এরই মধ্যে ঘোষিত প্রার্থীরা মাঠে সভাসমাবেশ, কর্মী সম্মেলন, উঠান বৈঠক ও গণসংযোগ করে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন। দাঁড়িপাল্লার পক্ষে ভোটার টানতে জনমত গঠনেও অনেক দূর এগিয়েছেন তারা। নির্বাচন সামনে রেখে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মাঠে তৎপরতার মাঝে কয়েকটি আসনে প্রার্থী পরিবর্তন করে চমক নিয়ে আসছে দলটি। দলের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় যুক্ত হচ্ছেন সাংবাদিক, আইনজীবী, অমুসলিম, ডাক্তার, নারী, পেশাজীবী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। দলের নির্বাচনি টিম জরিপের ভিত্তিতে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় এ চমক নিয়ে আসছেন বলে জামায়াতের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে।

শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সবার আগে ৩০০ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করে জামায়াত। এসব আসনে একক প্রার্থী দিয়ে শুরুতে চমক দেখিয়েছে দলটি। এসব প্রার্থী শুরু থেকে প্রচারণায় মাঠে সক্রিয়। ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা কেন্দ্রিক গণসংযোগ, কর্মিসভা, উঠান বৈঠক, সভা-সমাবেশ করছেন। এর বাইরে দলের নারী কর্মীরাও বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে প্রার্থীদের পক্ষে গণসংযোগ করছেন। দাঁড়িপাল্লার পক্ষে ভোটার টানতে বিভিন্ন প্রতিশ্রতিও দিয়েছেন। এলাকায় জনমত গঠনে সক্রিয় আছেন ঘোষিত প্রার্থীরা। এ অবস্থায় এবার কিছু আসনে প্রার্থী পরিবর্তন করছে দলটি। এরই মধ্যে সাতটি আসনে প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়েছে। আরও কিছু আসনে প্রার্থিতায় পরিবর্তন আনা হবে।

এরই মধ্যে চমক রেখে খুলনা-১ আসনেও প্রার্থী পরিবর্তন করেছে দলটি। সেখানে জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী মাওলানা শেখ মুহাম্মদ আবু ইউসুফকে বাদ দিয়ে ডমুরিয়া উপজেলার হিন্দু শাখার সভাপতি কৃষ্ণ নন্দীকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। উপজেলাটি হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় বদলে যাচ্ছে ভোটের হিসাব-নিকাশ। কৃষ্ণ নন্দীকে প্রার্থী করায় আসনটিতে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন নেতারা। এ ছাড়া হবিগঞ্জ-৪ আসনে প্রার্থী পরিবর্তন করেছে দলটি। এ আসনে প্রার্থী ছিলেন জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা মুখলেসুর রহমান। তাকে বাদ দিয়ে এ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে সাংবাদিক ওয়ালী উল্লাহ নোমানকে। লালমনিরহাট-৩ আসনে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে গণসংযোগ করছিলেন রংপুর মহানগর ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি হারুন-অর-রশিদ। এবার তাকে বাদ দিয়ে নতুন প্রার্থী করা হয়েছে দলের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও জেলা আমির অ্যাড. আবু তাহেরকে। এ ছাড়া ঝালকাঠি-১ আসনে আগের প্রার্থী পরিবর্তন করে ড. ফয়জুল হককে, ময়মনসিংহ-২ আসনে ময়মনসিংহ মহানগর জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি আনোয়ার হাসান সুজনকে, চট্টগ্রাম-৭ আসনে চিকিৎসক নেতা ডা. এ টি এম রেজাউল করিমকে, চট্টগ্রাম-৫ আসনে অধ্যাপক আবদুল মালেক চৌধুরীকে মনোনয়ন দিয়েছে দলটি। বিভিন্ন আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মাঠভিত্তিক জরিপ পরিচালনা করে প্রার্থী পরিবর্তন করা হচ্ছে। জয়ী হবেন- এমন হেভিওয়েট প্রার্থীদের চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে কিছু আসনে পরিবর্তন করা হয়েছে। সামনে আরও কয়েকটি আসনে পরিবর্তন হবে। কিছু চমক তো থাকবেই। আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জোবায়ের বলেন, ৮ দলের মধ্যে সমঝোতার প্রক্রিয়া চলছে। তবে ৮ দলের শরিকরা কেউই এখন আসন সংখ্যার ভাগাভাগিতে নেই, তারা এখন বিজয়ী হতে চান এবং ইসলামকে বিজয়ী করতে চান। যাকে যেখান থেকে মনোনয়ন দিলে জিতবে তাকেই চূড়ান্ত করবে ৮ দল। ইসলামপন্থিদের বাক্স হবে একটি। শুধু ৮ দল নয়, নির্বাচনে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চাই আমরা।

এদিকে জুলাই সনদের ওপর জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতকরণ, জুলাই গণহত্যার বিচার দৃশ্যমান করাসহ ৫ দফা দাবিতে সমমনা আরও ৭টি দলের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে আছে জামায়াত। ৮ দলের শরিক অপর ৭টি দলের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক আসন ছাড়বে দলটি। এই জোটের একটি দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছেন, গত এক সপ্তাহ ধরেই তারা আসন ভাগাভাগি নিয়ে কাজ করছেন। তবে জামায়াত শরিকদের জন্য কতটি আসন ছাড়বে এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর কারও কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। তারা বলছেন, ৮ দলের শীর্ষ নেতাদের তারা সংসদে দেখতে চান।