আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জোট রাজনীতিতে চলছে নানা সমীকরণ। বড় দলগুলো নিজেদের জোটে টানতে চাইছে ছোট দলগুলোকে। আসন নিয়ে চলছে দর কষাকষি। গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আছে আলোচনার কেন্দ্রে। জাতীয় নির্বাচনে দলটির অবস্থান কী হবে তা এখনো পরিষ্কার নয়। একক বা জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়া, জোটে গেলে কোন জোটে যাওয়া এসব বিষয়ে দলের নেতাদের মধ্যে আছে নানা মত।
সূত্রের দাবি বিএনপি এবং জামায়াতের নেতৃত্বে থাকা দুই জোটে যাওয়ার বিষয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে এনসিপিতে। নেতাদের দু’টি গ্রুপ এই দুই জোটে যাওয়ার বিষয়ে মত দিচ্ছেন। যদিও দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্য সচিব আখতার হোসেনসহ কয়েকজন নেতা এখনো এ নিয়ে অবস্থান জানাননি।
সূত্রের দাবি বিএনপি এবং জামায়াতের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় আসন সংখ্যা নিয়ে কথা হচ্ছে। বিএনপি’র চেয়ে বেশি আসন ছাড় দেবে জামায়াত এমন আলোচনাও আছে। আসন সমঝোতার প্রশ্নে বিভক্ত হয়ে পড়েছে এনসিপি’র সিনিয়র নেতারা। এই পরিস্থিতিতে এনসিপিও কৌশলী অবস্থান নিয়েছে। একক ও জোটবদ্ধ দুই পথই উন্মুক্ত রেখেছে দলটি। তাদের সামনে তিনটি কৌশলগত পথ- বিএনপি’র সঙ্গে আসন সমঝোতা, জামায়াতের সঙ্গে জোট অথবা এককভাবে ৩০০ আসনে লড়াই করা। দলটি বলছে, একক প্রস্তুতি নিচ্ছে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেয়ার। এ লক্ষ্যে সাংগঠনিক কার্যক্রম ও প্রার্থিতা চূড়ান্ত করতে কাজ করছেন নেতারা।
এনসিপি সূত্র জানিয়েছে, ইতিমধ্যে বিএনপি-জামায়াতের পক্ষ থেকে নানা বিষয়েই অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হচ্ছে। আসন সমঝোতা নিয়েও কথাবার্তা চলছে অনানুষ্ঠানিকভাবে। তবে জোটের বিষয় চূড়ান্ত হয়নি।
মনোনয়ন ফরম বিক্রি থেকে শুরু করে প্রার্থী সাক্ষাৎকার-সব মিলিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে এনসিপি। অভ্যন্তরীণ কোন্দল থাকলেও এনসিপিকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে হচ্ছে আলোচনা।
সূত্র জানায়, এবি পার্টি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, আপ বাংলাদেশ ও এনসিপিকে নিয়ে ‘গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট’ গঠনের ঘোষণা থাকলে শেষ মুহূর্তে তা স্থগিত হয়েছে। তবে আপ বাংলাদেশ ইস্যুতে এনসিপি’র আপত্তি ও অভ্যন্তরীণ মতবিরোধের কারণে শেষ মুহূর্তে স্থগিত হয় আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠান। নতুন জোটে যাওয়ার প্রশ্নে এনসিপি’র ভেতরেই চলছে মতবিরোধ।
সূত্র জানিয়েছে, এনসিপি’র একপক্ষ চায় মধ্যপন্থি পরিচয় বজায় রেখে কয়েকটি দল নিয়ে আলাদা জোট হোক। অন্য পক্ষ বিএনপি’র সঙ্গে আলোচনা এগিয়ে নিতে চায়।
জামায়াতের পক্ষ থেকে এনসিপিকে ‘বেশি ছাড়’ দেয়ার প্রস্তাব আছে বলেও জানা গেছে। তবে নেতৃত্বের একটি অংশ ‘ডানপন্থি’ ইমেজ এড়াতে চাইছে।
প্রতীক-সংক্রান্ত জটিলতা সামলে ১০ সাংগঠনিক বিভাগে ১০ বোর্ড গঠন করে মনোনয়ন প্রক্রিয়া চালাচ্ছে এনসিপি। মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন ১ হাজার ৪৮৪ জন, নতুন দলের জন্য এটা ইতিবাচক সাড়া।
এনসিপি’র দলীয় সূত্র জানায়, নভেম্বর দ্বিতীয় সপ্তাহে দলের কোর কমিটির মিটিং ছিল। কোর কমিটির মিটিংয়ে জোট আসন সমঝোতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে দলের ৩৫ জন নেতা উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে সরকারের একজন উপদেষ্টাসহ ১৪ জন বিএনপি’র সঙ্গে আসন সমঝোতার বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন। বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় ৪ থেকে ৭টি আসনে সমঝোতার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে এনসিপি জোট করলে ৫০ আসনে ছাড় দিতে পারে দলটি এমন আলোচনা আছে। এনসিপি’র কোর কমিটির আলোচনায় ১৭ জন নেতা জামায়াতের সঙ্গে জোট করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
এনসিপি’র এক ঊর্ধ্বতন নেতা মিটিংয়ের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, সেখানে দলের সাংগঠনিক ও গতিশীলতা নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। রাজনৈতিকভাবে আমরা কোনদিকে কী করতে পারি। ভবিষ্যত এনসিপি’র রাজনীতি নিয়ে আলোচনা হয়। কোনো বিষয়ে সুবিধা-অসুবিধা কী, এগুলো নিয়েই আলোচনা হয়েছিল।
সূত্র জানিয়েছে, জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোট করলে দীর্ঘমেয়াদি রাজনীতিতে কেমন প্রভাব পড়বে তাও বিবেচনা করছে এনসিপি। ফলে তিনটি কৌশলগত অবস্থা এনসিপি’র দলীয় ফোরামে জোর আলোচনা হচ্ছে। কোর কমিটির মিটিংয়ে নাহিদ ইসলাম, হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলম মতামত দেননি।
অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া (ঢাকা-১০) নির্বাচন করতে চান। এই আসনে বিএনপি এখনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি।
তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম নির্বাচন করবেন কিনা তা পরিষ্কার নয়। লক্ষ্মীপুর-১ থেকে তিনি নির্বাচন করতে পারেন। তিনি না করলে তার ভাই এনসিপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুব আলম নির্বাচন করবেন এমনটা আলোচনা আছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের জন্য অভ্যুত্থানের শক্তি হিসেবে এনসিপি আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে আছে। বিএনপি-জামায়াতের বাইরে মধ্যপন্থি একটি শক্তি গঠনে তারা কী ভূমিকা নেবে সেটাই এখন দেখার বিষয়। এ ছাড়াও যদি তারা বড় কোনো দলের সঙ্গে জোটে যায় সেটাও আলোচনার বিষয়।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্য সচিব মুশফিক উস সালেহীন মানবজমিনকে বলেন, আমরা ৩০০ আসনেই একক নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিয়ে আগাচ্ছি। প্রাথমিকভাবে একটি প্রার্থী তালিকা দ্রুত সময়ের মধ্যেই ঘোষণা করা হবে। রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ থাকেই। এখন পর্যন্ত এককভাবে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিয়ে আগাচ্ছি। ভবিষ্যতে যদি কখনো আলোচনায় ফলপ্রসূ হয়, অন্যকিছু হলেও সেটা সবাইকে জানানো হবে।