Image description

আমিনুল ইসলাম (Aminul Islam) 

অসুস্থ হলে বুঝা যায় বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থা কোথায় দাঁড়িয়ে আছে। কোন ডাক্তারের কাছে যাব। হাসপাতালে যেতে হবে কিনা। ডাক্তার কেমন! রক্ত কোথায় পাব? টেস্ট কোথায় করাবো! আরো কত কি চিন্তা করতে হয়।
 
অথচ আমাদের ওখানে প্রতিটা নাগরিকের একজন ফ্যামিলি ডাক্তার আছে। আপনি অসুস্থ হলে প্রথমে ফ্যামিলি ডাক্তারের কাছে যাবেন। আগে থেকে অন-লাইনে ডাক্তারের সাথে এপয়েনমেন্ট নেয়া থাকে। এই ডাক্তার আপনার সব ইতিহাস জানে। কারন সে আপনার ফ্যামিলি ডাক্তার।
 
ডাক্তার আপনাকে দেখে যদি মনে করে- তাঁর চিকিৎসাতেই কাজ হবে। তাহলে তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ঔষধ দিয়ে দেবেন। কিংবা ডাক্তার যদি মনে করেন অন্য কোন স্পেশালিষ্টের কাছে যেতে হবে। ফ্যামিলি ডাক্তার নিজেই তখন আপনাকে সেই স্পেশালিষ্টের কাছে পাঠাবে।
স্পেশালিষ্ট যদি মনে করে আপনাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো দরকার। তখন তিনিই রেকমেন্ড করে দেবেন। অর্থাৎ আপনার কাজ শুধু ফ্যামিলি ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা। আর কিছু না।
 
অনেক সময় ফ্যামিলি ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করলে এপয়েনমেন্ট পেতে দিন কয়েক লেগে যায়। সে ক্ষেত্রে আপনি যদি মনে করেন- আপনার দ্রুত চিকিৎসা দরকার। সে ক্ষেত্রে আপনি আপনার কাছের যে কোন হাসপাতালের ইমারজেন্সিতে গেলেই হবে।
 
ওরা দেখে সিদ্ধান্ত নেবে- আপনার কি ইমিডিয়েট চিকিৎসা দরকার নাকি পরে হলেও হবে। যদি ইমিডিয়েট হয়; তাহলে সঙ্গে সঙ্গে আপনার চিকিৎসা শুরু হবে। আর যদি ইমিডিয়েট না হয়। তাহলে ওরা আপনাকে কিছু ঔষধ লিখে দিয়ে বলবে- ফ্যামিলি ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে।
মানে পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থা একটা কাঠামোর মাঝে আছে। আপনি অসুস্থ হলে স্রেফ নিজের ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করবেন। আপনার কাজ এতটুকুই। এরপর ডাক্তাররাই সব কিছু করবে। কই থেকে ঔষধ কিনতে হবে। সেটাও চিন্তা করার কিছু নেই।
 
প্রেসক্রাইব করা ঔষধ পুরো দেশের সকল ফার্মেসিতে চলে যায়। আপনি গিয়ে আইডি কার্ড দেখাবেন। ওরা ঔষধ দিয়ে দেবে। পুরো চিকিৎসা ব্যবস্থা এক অর্থে ফ্রি। ফ্যামিলি ডাক্তারের কাছে যেতে এক পয়সাও দিতে হয় না। ফ্যামিলি ডাক্তার অন্য কোন স্পেশালিষ্টকে রেকমেন্ড করে দিলে প্রথমবার দিতে হয় বোধকরি ৫ কিংবা ১০ ইউরো (খুবই সামান্য টাকা)। এরপর যত বারই যাবেন, কোন টাকা-পয়সা কিছু লাগে না। আর সব রকম টেস্ট ফ্রি।
 
হাপাতালে ভর্তি হলেও কোন খরচ নেই। প্রথমে বোধকরি একটা সামান্য পরিমাণ টাকা দিতে হয়। এরপর সকল কিছু ফ্রি। ওরাই সব কিছু করবে। আপনাকে চিন্তা করতে হবে না- কোথায় টেস্ট করবেন। কোথায় রক্ত দিবেন। কই থেকে ঔষধ আনবেন। সব কিছু ওরাই করে। আর ইমারজেন্সি সিচুয়েশনে সেই অল্প টাকাটাও দিতে হয় না। টেস্ট করা থেকে শুরু করে সকল কিছুই আসলে ফ্রি।
 
আমাদের ওখানে শিক্ষা ফ্রি, চিকিৎসা ফ্রি, গণপরিবহণ ফ্রি। ট্যাক্সের টাকা সরকার আমাদের পেছনেই খরচ করে। আর বাংলাদেশে?
 
সামান্য একটু অসুস্থ হলে এখানে-সেখানে দৌড়াদৌড়ি করেও ভালো চিকিৎসা পাওয়া যায় না। জলের মত টাকা খরচ হতে থাকে। কিন্তু আদৌ সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছি কিনা; সেটাও নিশ্চিত হওয়া যায় না।
 
এক পরিবারের এক জন অসুস্থ হলে পুরো পরিবারটাকেই দৌড়াতে হয়। আমরা কেবল ট্যাক্স আর ভ্যাটই দিয়ে যাই। এরপরও জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কেবল দৌড়ের উপরই থাকতে হয়। তবুও ভালো চিকিৎসা কিংবা ভালো সেবা; কোন কিছুই মেলে না।