
কুষ্টিয়া শহরের একটি বহুতল ভবনের পার্কিং জোনে একটি ল্যান্ড ক্রুজার প্রাডো ব্র্যান্ডের গাড়ির সন্ধান মিলেছে। কোটি টাকার গাড়িটি ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নিহত আনোয়ারুল আজিম আনারের বলে ধারণা করছেন পুলিশ ও স্থানীয়রা।
গাড়িটির সন্ধান মিললে পুলিশকে খবর দেন স্থানীয়রা। পরে সোমবার (৯ জুন) দিবাগত রাত ১২টার দিকে কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে যান। কুষ্টিয়া পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনের ৮ তলা বিশিষ্ট সাফিনা টাওয়ার নামের ভবনের গ্যারেজে ল্যান্ড ক্রুজার প্রাডো ব্র্যান্ডের গাড়িটি পাওয়া যায়। গাড়ি থেকে গাড়ির কাগজপত্র, সংসদ সদস্য ও সিআইপি স্টিকার উদ্ধার করেছে পুলিশ। কালো কালারের গাড়িটির নম্বর ‘ঢাকা মেট্রো-ঘ ১২-৬০৬০’।
এসব তথ্য নিশ্চিত করে কুষ্টিয়া মডেল থানার এসআই স্বপন বলেন, ‘গাড়ির খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে আসি। গাড়ি থেকে গাড়ির কাগজপত্র, সংসদ সদস্য ও সিআইপি স্টিকার উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে- গাড়িটি ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। গাড়িটি উদ্ধার করে থানায় নেওয়া হবে।’
স্থানীয়রা বলেন, আমরা গাড়িটির খবর পায়। পরে বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে গাড়িটি দেখতে পান। পুলিশ গাড়ি থেকে গাড়ির কাগজপত্র, সংসদ সদস্য ও সিআইপি স্টিকার উদ্ধার করেছে। গাড়িটি ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের বলে ধারণা করা হচ্ছে। কাগজপত্রে তার নাম রয়েছে। এই গাড়িটি বেশ কয়েকমাস আগে বাড়ির গ্যারেজে রাখা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী সাব্বির বলেন, ‘আমরা প্রথমে শুনতে পায় যে, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক শিক্ষা মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের গাড়ি রাখা আছে সাফিনা টাওয়ারের গ্যারেজে। পরে পুলিশে খবর দেন স্থানীয়রা। পুলিশ গাড়ি থেকে গাড়ির কাগজপত্র উদ্ধার করেছে। সংসদ সদস্যের স্টিকার উদ্ধার করেছে। এই গাড়ির চালক আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগার আলীর গাড়ি চালক ছিলেন এক সময়। তিনিই গাড়ি থেকে কাগজপত্র ও স্টিকার দেন পুলিশকে। গাড়ির কাগজপত্র দেখে বোঝা যায় যে, গাড়িটির মালিক ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানাচ্ছি। এ ঘটনায় যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’
প্রত্যক্ষদর্শী জুনায়েদ হোসাইন বলেন, ‘সাধারণ জনগণের কাছ থেকে আমরা একটি খবর পাই যে, সাফিনা টাওয়ারে একটি গাড়ি আছে। ল্যান্ড ক্রুজার প্রাডো ব্র্যান্ডের গাড়িটি কয়েকমাস ধরে রাখা আছে। বের করা হয় না, মাঝেমধ্যে স্টার্ট দেওয়া হয়। পরে আমরা সাফিনা টাওয়ারের নিচে গ্যারেজে গিয়ে দেখি অনেক দামি গাড়িটি। গাড়ির ড্রাইভার আমাদের দেখে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। পরে ড্রাইভার একজনকে কল দেন। আমি তার সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু উনি কোনো তথ্য দেননি। পরে পুলিশের টিম আসে এবং গাড়ির কাগজপত্র উদ্ধার করে। গাড়ির কাগজপত্র লাইসেন্স এসব দেখে জানতে পারি গাড়িটি আনার এমপির। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হোক। এই ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। যারা এই গাড়ি রাখার ব্যবস্থা করেছেন তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে দ্রুত।’
স্থানীয়রা বলেন, জেনুইন লিফ কোম্পানি নামের একটা সিগারেট কোম্পানি ২য়, ৩য় ও ৪র্থ তলা ভাড়া নিয়েছেন। তারাই গাড়িটি রাখার ব্যবস্থা করেছেন। এই গাড়িটা কয়েকমাস ধরে এখানে রাখা হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করা হোক। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হোক এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।’
বাসার কেয়ারটেকার আলমগীর হোসেন বলেন, ‘জেনুইন লিফ কোম্পানি নামের একটা সিগারেট কোম্পানি ২য়, ৩য় ও ৪র্থ তলায় বাসা ভাড়া নিয়েছে। সেখানে ফরেনাররা আসেন, থাকেন এবং খাওয়াদাওয়া করেন৷ তারাই গাড়িটি রাখার ব্যবস্থা করেছেন। জেনুইন লিফ কোম্পানির বেলাল স্যার জিএম আর জাহিদ স্যার সিইও। এর বেশি আমরা কিছুই জানি না।’
গাড়ি চালক শান্ত বলেন, ‘আজ থেকে পাঁচ বছর আগে আমি কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগার আলীর গাড়ির ড্রাইভার ছিলাম। এখন আর নাই। আমি জেনুইন লিফ কোম্পানির গাড়িচালক হিসাবে চাকরি করি। জিএম স্যার বেলাল ও সিইও জাহিদ স্যারের গাড়ি চালাই। তারা দুজন আমাকে চাবি দিয়ে গাড়ি স্ট্যার্ট দিতে বলেন। জেনুইন লিফ টোব্যাকোর বেলাল ও জাহিদ স্যারের হুকুমে আমি স্ট্যার্ট দিয়েছি। গাড়ির মালিক কে? তা আমি জানি না। বেলাল স্যার আর জাহিদ স্যার সবকিছু জানেন। তাদের হুকুমে গাড়ি স্ট্যার্ট দিয়েছি। এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। গাড়ি থেকে পুলিশ কাগজপত্র, লাইসেন্স ও স্টিকার উদ্ধার করেছে। সেখানে গাড়ির মালিকের নাম লেখা আছে। এই গাড়িটি আমি কখনো চালাইনি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভবনের গার্ড বলেন, ‘উনারা গাড়ি এনে রাখেন। আমি তো জানি না যে, গাড়িটি কার। আজকে শুনছি গাড়িটি এক এমপির৷ সিগারেট কোম্পানির অফিসের স্যাররা এই গাড়িটি রেখেছেন বেশ কয়েক মাস আগে। গাড়িটি বাইরে বের করা হয় না সেভাবে। তবে মাঝেমধ্যে স্ট্যার্ট দেওয়া হয়। চালক শান্ত গাড়িটি স্ট্যার্ট দেন।’
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য সাফিনা টাওয়ারের মালিক, জেনুইন লিফ টোব্যাকোর সিইও জাহিদ ও জিএম বেলালের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাদের পাওয়া যায়নি। তাদের অফিসে গিয়ে কেয়ারটেকার ও দারোয়ানকে ছাড়া কাউকে পাওয়া যায়নি৷
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এবিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’