Image description
 

বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, কলাম লেখক ও বিশ্লেষক ডা. জাহেদুর রহমান সম্প্রতি একটি টকশোতে অংশ নিয়ে বলেন, প্রধান উপদেষ্টা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে চাননি, বরং দেশি-বিদেশি সকল মিডিয়ায় বারবার বলেছেন তিনি তা করবেন না। তবু বাস্তবতা ঠিক উল্টো দিকে গিয়েছে, এবং সেখানেই আমাদের ভাবনার জায়গা।

তিনি বলেন, যে কেউ সার্চ করলেই দেখতে পারবেন, প্রধান উপদেষ্টা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করবেন না, এই কথা রিপিটেডলি দেশি মিডিয়াকে, বিদেশি মিডিয়াকে বলেছেন। অথচ, অনেকেই তখন সমালোচনা করেছেন কেন তিনি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করছেন না।

এরপর তিনি বলেন, ধরে নিলাম উনি আন্তরিকভাবে চেয়েছেন (না করতে)। এমনকি তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে যাবে কি যাবে না, সেটা তারা ডিসাইড করবে। আমরা তখন অনেক আলোচনা করেছি, সমালোচনা করেছি। এরপর কী হলো?

 

রাজনৈতিক পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, জনাব হাসনাত আব্দুল্লাহ একটা দলবল নিয়ে যমুনাতে চলে গেলেন। সেখানে ১৪৪ ধারা জারি ছিল, কেউ মিছিল করতে পারবেন না। তিনি শুধু গেলেন না, সর্বশেষ যে নিরাপত্তা বেষ্টনী ছিল, সেটাও ভেঙে একেবারে গেটের কাছে চলে গেলেন যমুনার। তারপর ওখান থেকে শাহবাগ এলেন, ব্লকেড করলেন। তাদের সঙ্গে অনেকেই যোগ দিলেন। ইনফর্মালি জামায়াতের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা, ছাত্রশিবির ছিল, ছাত্রশিবির তাদের সাংগঠনিক গান গেয়েছে, অনেক ইসলামি স্টেশন হাজির হয়েছে।

 

ফলে তারা একটা মোটামুটি জমায়েত করলেন এবং সরকারকে চাপ দিয়ে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করল—যেটা প্রধান উপদেষ্টা চাননি। অথচ বলেছিলেন তিনি তা করবেন না।

তিনি ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এমনটা আগামীতেও হতে পারে। আমি যদি বলিও, আমরা তার (প্রধান উপদেষ্টার) ইচ্ছাকে সম্মান করি—এটা ফেব্রুয়ারিতে হোক, ডিসেম্বরে হোক, যদি তারা মনে করেন নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন করব না, তাহলে সেটা তারা ইস্যু বানাবেন। যখনই কমিশন নির্বাচনের শিডিউল দেবে, তারা বলবে—এই কমিশনকে আমরা মানি না, ওকে পাল্টাতে হবে।

এরপর ওনারা আবার শাহবাগে যাবেন, আবার একটা জমায়েত তৈরির চেষ্টা করবেন। এবং যদি করেন, তখন সরকার যদি আবার আগের মতো বলে—‘আমি তো চেয়েছিলাম আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করতে, কিন্তু মানুষের তো চাপ তৈরি হলো’, তখন? আবার চেঞ্জ করে ফেললেন। ঠিক যেমন বলেছিল, ‘নির্বাচন তো আমি চেয়েছিলাম, কিন্তু রাস্তায় এই অবস্থায় আমি কি করব?’

সরকারের গ্রহণযোগ্যতা ও সক্ষমতা নিয়ে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখন এই সরকারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ কোনটা ছিল? একটা সরকারকে হতে হয় সক্ষম সরকার—যে আমি এটা চাই, মিন করি এবং করব। কিন্তু এই সরকার তো কোন স্টেকহোল্ডার না।

তিনি আরও বলেন, ধরুন, এটা যদি একটা দলীয় সরকার হতো, তারপর যদি নির্বাচন হতো, সেই দলটি হারলে মেনে নিতে চাইতো না। কিন্তু এই সরকার তো নিজেই নির্বাচন করছে না। সুতরাং তারা চাইলে নির্বাচনের ডেট এগিয়ে আনতে পারে—জানুয়ারি লাস্ট, ফেব্রুয়ারি ফার্স্ট, এমনকি ডিসেম্বরে নিয়ে আসতে পারে।

ডা. জাহেদুর রহমান আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য বহুক্ষেত্রে এখন দুটো বড় দলের সুরের সঙ্গে এলাইন করছে—এটাই মূলত মাথাব্যথার জায়গা।

বিএনপি প্রসঙ্গে তার মন্তব্য:
সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির প্রতি উনার (প্রধান উপদেষ্টার) নেগেটিভ অ্যাটিটিউড আসলে প্রকাশিত হয়ে পড়েছে। দুটি কথা খেয়াল করুন—উনি বলছেন, ‘শুধু একটি দল না, একটি দল বলছে সংস্কার ছাড়াই ডিসেম্বরে নির্বাচন চায়’। অথচ এখানে দুটো অসত্য আছে।

প্রথমত, এটি শুধু একটি দল নয়—বরং একটি দলই ডিসেম্বরে নির্বাচন চায় না, সেটা এনসিপি। আর দেশের যাবতীয় দল, পত্রিকায় রিপোর্ট আছে, ৫২ বা ৫৩টি দল—নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত মিলে ডিসেম্বরে নির্বাচনের পক্ষে বিবৃতি দিয়েছে।