নকল ট্রেড লাইসেন্স, ভুয়া ব্যাংক সলভেন্সি, জাল আইডি—সবই যেন জাদুর কাঠির ছোঁয়ায় ‘বৈধ’ হয়ে যায় ইমিগ্রেশন কাউন্টারে। বোর্ডিং পাসে কলমের খোঁচায় লেখা থাকে রহস্যময় কোড—এসএল, এসএস-ওকে, অপস স্যার। সঙ্গে থাকে স্বাক্ষর। আর ঠিক সেই চিহ্নকে পাসপোর্ট-ভিসার ওপরে স্থান দেয় একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। গ্রামগঞ্জের সহজ-সরল মানুষদের স্বপ্ন দেখানো হয় মালয়েশিয়ায় চাকরির, দেওয়া হয় স্থায়ী আয় ও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশ্বাস। তবে বাস্তবে সেই ভবিষ্যৎ ঘিরে থাকে জালিয়াতি আর দুঃস্বপ্নের অন্ধকার।
কালবেলার দীর্ঘ অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) এসপি পদমর্যাদার এক পুলিশ কর্মকর্তাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এই চক্রই দেশের ইমিগ্রেশন ব্যবস্থাকে ব্যক্তিগত আয়ের মেশিনে পরিণত করেছে। প্রতিদিন শতাধিক যাত্রীর বোর্ডিং পাসে একই কলমের দাগ, একই কোড, একই স্বাক্ষর। আর সেই ‘অনুমোদন’ দেখিয়েই বিদেশে পাঠানো হয় বৈধতার ছিটেফোঁটা না থাকা মানুষদের। কেউ মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশনে আটকে ফেরত আসেন, কেউ লুকিয়ে কাজ করেও বেতন পান না, আবার কেউ কেউ চিরতরে হারান সর্বস্ব।
স্বপ্ন বিক্রির এ ব্যবসা এখন ৩ থেকে ৫ লাখ ৭০ হাজার টাকার ‘প্যাকেজ’। এই টাকার বিনিময়ে বিমানবন্দরের নিস্তরঙ্গ কাউন্টার পেরিয়েই বহু মানুষ ছুটে যান অজানার পথে, অথচ তাদের ভাগ্যে লেখা থাকে অনিশ্চয়তা, প্রতারণা আর সব হারিয়ে ফেরার কষ্টগাথা।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, চক্রটি প্রথমে গ্রামাঞ্চলের সহজ-সরল মানুষদের টার্গেট করে। এরপর তাদের বিদেশে ভালো বেতন ও উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখানো হয়। একটি নিরাপদ ভবিষ্যতের আশায় পরিবার-পরিজনের সহায়-সম্বল বিক্রি করে এসব মানুষ পুরো অর্থ তুলে দেন চক্রের সদস্যদের হাতে। টাকা পাওয়ার পর চক্রটি তাদের নামে তৈরি করে ‘ব্যবসায়ী’ পরিচয়ের ট্রেড লাইসেন্স, ব্যাংক সার্টিফিকেট, ব্যাংক সলভেন্সি, অফিস আইডি কার্ড ও ভিজিটিং কার্ড। এসব জাল বা নকল কাগজপত্র ব্যবহার করেই জোগাড় করা হয় ভিজিট ভিসা। এরপর ওই সাধারণ মানুষদের ‘ব্যবসায়ী’ সাজিয়ে ঠেলে দেওয়া হয় অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে।
চক্রের সদস্যরা ইমিগ্রেশন শাখায় সিনিয়র পদে থাকায় বাংলাদেশের ইমিগ্রেশনের বৈতরণি পেরোনো তাদের জন্য খুবই সহজ। তবে বেশিরভাগ যাত্রীই বিপাকে পড়েন মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশনে গিয়ে। কেউ কেউ সেখানেও ইমিগ্রেশন পার হয়ে মালয়েশিয়ায় ঢুকতে পারলে তাদের রিসিভ করে চক্রের স্থানীয় সদস্যরা। এরপর বৈধ কাগজপত্র না থাকায় অনেকে লুকিয়ে কাজ করেন, কিন্তু ঠিকমতো বেতন পান না। আবার কেউ কেউ অভিযানে আটক হয়ে দেশে ফেরেন হতাশা নিয়ে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই চক্রের প্রধান হোতা পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) এসপি সম্রাট মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান। মাঠপর্যায়ে গ্রামাঞ্চলে টার্গেট খুঁজে বের করতে রয়েছে অসংখ্য দালাল চক্র। পাশাপাশি রয়েছে কয়েকটি রিক্রুটিং এজেন্সিও। আর পুরো প্রক্রিয়ায় জাল কাগজপত্র তৈরি থেকে টিকিট কাটাসহ সবকিছু সমন্বয় করেন এয়ার ক্লাউড ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফারুক শেখ। তবে এর বাইরে আরও কয়েকজন রয়েছেন, যারা লোক সরবরাহ করেন।
তথ্যসূত্র বলছে, টাকা হাতে পাওয়ার পর ফারুক ‘ক্লায়েন্টদের’ জন্য নকল কাগজপত্র তৈরি করেন। এরপর কাটেন বিমানের টিকিট। আর ইমিগ্রেশন আগেই ‘ম্যানেজ’ করা থাকায় খুব সহজেই মেলে ছাড়পত্র। বোর্ডিং পাসের ওপর এসপি সম্রাট মোহাম্মদ আবু সুফিয়ানের স্বাক্ষর ও প্রতীকী চিহ্ন সংবলিত অসংখ্য বোর্ডিং পাস কালবেলার হাতে এসেছে। অধিকাংশের ওপর থাকে নির্দিষ্ট সিরিয়াল নম্বর, তার নিচে লেখা ‘এসএস-ওকে’। নিচে দেওয়া থাকে একটি স্বাক্ষর। বিশেষ শাখায় এসপি পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের পরিচয় সংক্ষেপে ‘এসএস’ লেখা হয়। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বোর্ডিং পাসে এ ধরনের কোনো প্রতীকী চিহ্ন বা অনুমতিসূচক সাইন দেওয়ার নিয়ম নেই। এগুলো ‘অপ্রাতিষ্ঠানিক প্রতীক’, যা চক্রটির প্রভাব ও অনিয়মকে নির্দেশ করে।
ভিজিট ভিসায় নিয়মিত বিদেশে যাতায়াত করেন—এমন একজন ব্যবসায়ী কালবেলাকে বলেন, ‘ইমিগ্রেশন জড়িত না থাকলে এভাবে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ, সব বৈধ কাগজপত্র দিয়েই আমাদের ছাড়পত্র নিতে ঘাম ছুটে যায়। কখনো অফিসাররা আধা ঘণ্টার বেশি সময় ধরে হয়রানি করেন। সেখানে নকল কাগজপত্রে ছাড়পত্র পাওয়ার প্রশ্নই আসে না।’
গত ২৮ অক্টোবর ইমিগ্রেশন থেকে ছাড়পত্র নেন রাহেদুল ইসলাম নামের এক যাত্রী। তার পাসপোর্ট নম্বর A11364827। ফ্লাইট নম্বর OD 165, গেট নম্বর 4A এবং সিট নম্বর 19C। বোর্ডিং পাসের ওপর কালো বলপয়েন্ট কলমে লেখা—SL-49, SS-OK, নিচে রয়েছে একটি স্বাক্ষর। একই দিন একই ফ্লাইটে রতিন শিকদার নামে আরও এক যাত্রী ছাড়পত্র পান। তার পাসপোর্ট নম্বর A09582178, সিট নম্বর 18E, গেট নম্বর 4A। একই ফ্লাইটে দীপু প্রামাণিক নামের আরেক ব্যক্তি ছাড়পত্র পান। তার পাসপোর্ট নম্বর A17095675, সিট নম্বর 18F। এর আগে ১৫ অক্টোবর মো. শেখ ফরিদ নামে এক যাত্রী মালয়েশিয়া যান। তার ফ্লাইট নম্বর OD 163, পাসপোর্ট নম্বর A04885370, সিট নম্বর 19A। বোর্ডিং পাসে লেখা—SL-37, SS (Ops)-OK, আর নিচে একই স্বাক্ষর। সেই একই দিন মো. নুর করিম নামে আরেক যাত্রী বোর্ডিং পাস নেন। তার পাসপোর্ট নম্বর A05292834, ফ্লাইট OD 163, গেট নম্বর 8A, সিট নম্বর 19F। বোর্ডিং পাসের ওপর লেখা—SL-39, SS (Ops)-OK এবং একই স্বাক্ষর। একই দিন নাজমুল বেপারি নামে আরও এক যাত্রী ছাড়পত্র পান। তার পাসপোর্ট নম্বর A11045095, সিট নম্বর 10E, গেট নম্বর 8A। বোর্ডিং পাসে লেখা—SL-25, SS (Ops)-OK; একই ধরনের স্বাক্ষরও রয়েছে। ওইদিনই হানিফ মিয়া নামে আরেক যাত্রী ছাড়পত্র নেন। তার পাসপোর্ট নম্বর A18142300, সিট নম্বর 19C, গেট নম্বর 8A। বোর্ডিং পাসে লেখা—SL-26, SS (Ops)-OK, নিচে একই স্বাক্ষর। এ ছাড়া মো. গোলাম নবী (পাসপোর্ট নম্বর A18703162, সিট 19B, গেট 8A) এবং আব্দুল্লাহ (পাসপোর্ট নম্বর A09010581, সিট 19D, গেট 8A) একই ধরনের বোর্ডিং পাস ও একই স্বাক্ষরসহ ছাড়পত্র পেয়েছেন। ৫ নভেম্বর মোহাম্মদ ইউনুস মিয়া নামে এক যাত্রী ছাড়পত্র নেন। তার পাসপোর্ট নম্বর A19717980, ফ্লাইট OD 165, গেট 7, সিট 18B। বোর্ডিং পাসে লেখা—SL-21, Ops Sir-OK, একই স্বাক্ষর। একই দিনের আরেক যাত্রী আল আমিন (পাসপোর্ট A15960993) এর বোর্ডিং পাসেও একই ধরনের লেখা ছিল। ৬ নভেম্বর মো. রায়হান খান (পাসপোর্ট A01129477) বোর্ডিং পাস নেন। তার পাসপোর্টে কালো কলমে লেখা—SL-24, Visa OK-SS; পাসে ছিল একই স্বাক্ষর। ৭ নভেম্বর মো. ইসমাইল নামে একজন যাত্রী ছাড়পত্র নেন। পাসপোর্ট নম্বর A07435881, সিট 16A, গেট 11, ফ্লাইট নম্বর OD 161। বোর্ডিং পাসে ইমিগ্রেশনের সিলসহ লেখা—SL-29, Visa OK-SS এবং একই স্বাক্ষর। ১২ নভেম্বর সানী মিয়া নামে এক যাত্রী ঢাকা থেকে ব্যাংকক যান। তার পাসপোর্ট নম্বর A19700105, ফ্লাইট TG 322, সিট 0041, গেট 8। বোর্ডিং পাসে লেখা—SL-38 (Ops Sir)-OK এবং নিচে একই স্বাক্ষর। একই দিনে নিসান মিয়া (পাসপোর্ট A20248197, ফ্লাইট TG 322, সিট 0040) একই ধরনের লেখা ও স্বাক্ষরসহ ছাড়পত্র পেয়েছেন। কালবেলার হাতে এমন শত শত পাসপোর্ট ও বোর্ডিং পাসের কপি রয়েছে। ১২ নভেম্বর ফারুক নামে আরও একজন যাত্রী কলম্বো যাওয়ার ছাড়পত্র নেন। তার পাসপোর্ট নম্বর A19821449, ফ্লাইট UL 190। বোর্ডিং পাসে লেখা—SL-42 (Ops SS)-OK এবং একই ধরনের স্বাক্ষর।
পাসপোর্টের সূত্র ধরে বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছে কালবেলা। তাদের একজন নড়াইলের নিখিল শিকদারের ছেলে রতিন শিকদার। তিনি তিনবার মালয়েশিয়া গিয়ে তিনবারই ইমিগ্রেশন থেকে ফেরত এসেছেন—এর মধ্যে দুবার মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন থেকে এবং একবার বাংলাদেশ থেকে। রতিন শিকদার কালবেলাকে বলেন, ‘আমি তিনবার গেছি, একবারও ঢুকতে পারিনি। দুবার মালয়েশিয়া থেকে ফেরত দিয়েছে, একবার দেশে। পরে পাসপোর্টটা ফেরত নিতে চাইলে দালাল বলেন—আরেকটা চান্স দেখতে চান।’
দীপু প্রামাণিক নামে আরেক ব্যক্তির পরিবার জানায়, মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য প্রথমে ৫ লাখ টাকা চুক্তি হলেও পরে দালাল চক্র আরও ৭০ হাজার টাকা বাড়তি দাবি করে। শেষ পর্যন্ত ৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা দিয়ে তিনি মালয়েশিয়া যান।
নাজমুল বেপারি নামের আরেক যাত্রী ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে মালয়েশিয়া গেছেন বলে জানায় তার পরিবার। আল আমিন নামে আরও এক যাত্রী গেছেন ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা দিয়ে। আরও বেশ কয়েকজনের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সবার কাছ থেকেই ৩ থেকে ৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে।
বিমানবন্দর সূত্র বলছে, বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান ইমিগ্রেশন শাখায় যোগদানের পর থেকেই নিজস্ব একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। শুরুতে তিনি দিনে গড়ে ৪০ থেকে ৫০ জনকে এভাবে ছাড়পত্র দিতেন; জনপ্রতি নিতেন ৫০ হাজার টাকা। গত ২২ জুন তাকে এসবি থেকে পুলিশ সদর দপ্তরে এআইজি হিসেবে বদলি করা হয়। কিন্তু সেখানে যোগদান না করে তিনি আগের পদেই থেকে যান। এরপর আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।
তথ্য বলছে, এখন তিনি দৈনিক শতাধিক যাত্রীকে অবৈধভাবে ছাড়পত্র দেন। জনপ্রতি ৫০ হাজার টাকা হিসেবে দৈনিক প্রায় ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন এই কর্মকর্তা। আগে তিনি দিনের নির্দিষ্ট একটা সময়েই শুধু লোকজন পাঠাতেন। তবে গত কিছুদিন ধরে দিনে অন্তত তিনবার তিনি লোকজন ইমিগ্রেশন পার করে দেন।
ইমিগ্রেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, সাধারণত যেসব কর্মকর্তা ইমিগ্রেশনের দায়িত্ব থাকেন, তাদের বিশেষ কোনো স্বজন বিদেশ গেলে সহায়তা করা হয়। তবে সেটা কারও ক্ষেত্রেই দৈনিক হওয়ার সুযোগ নেই। কেউ হয়তো ছয় মাস বা এক বছরে কাউকে এমন বিশেষ সুবিধা দেন, সেটিও সবাইকে অনুরোধ করে। কিন্তু সম্রাট মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান নিজের পদপদবি উল্লেখ করে স্বাক্ষরসহ ছাড়পত্র দেন। বিষয়টি নিয়ে বিব্রত ইমিগ্রেশনের অন্য কর্মকর্তারাও।
৮০ হাজার টাকায় প্রতিবেদকের সঙ্গে ‘চুক্তি’: কালবেলার হাতে আসা অভিযোগ ও নথিপত্রের সত্যতা নিশ্চিত করতে গত ৭ নভেম্বর যাত্রী সেজে এক প্রতিবেদক ফোন দেন এয়ার ক্লাউড ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফারুক শেখকে। তিনি পরদিন বেলা ১১টায় অফিসে যেতে বলেন। নির্ধারিত সময়ে অফিসে গেলেও ফারুকের দেখা মেলে দুপুর দেড়টার দিকে। মালয়েশিয়া যাওয়ার বিষয়ে কথা বলতে তিনি প্রতিবেদককে একটি চেকলিস্ট দিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আছে কি না, জানতে চান। কোনো কাগজপত্র না থাকলে ৮০ থেকে ৮৫ হাজার টাকা দিলেই সব ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
প্রতিবেদক জানান, তিনি রাজনৈতিক ঝামেলায় আছেন এবং কয়েকটি মামলা রয়েছে—এ কথা শুনেও ফারুক বলেন, ‘এগুলো কোনো সমস্যা না। আমার লোক আছে। সব ম্যানেজ হয়ে যাবে। পাসপোর্ট নম্বর দেন, ইমিগ্রেশনে আমি চেক করে দেব। বেশি ঝামেলা থাকলে আগে আপনাকে নেপাল, মালদ্বীপ, থাইল্যান্ড বা শ্রীলঙ্কা পাঠিয়ে দেব। সেখান থেকে মালয়েশিয়া চলে যাবেন।’ এরপর কিছু ডকুমেন্ট ফাইল করতে এক থেকে দুদিন সময় লাগবে বলে চলে আসেন প্রতিবেদক। ১১ নভেম্বর ফের ফোন করে কিছু কাগজপত্র হচ্ছে বললে তিনি বলেন, ‘৭০ হাজার টাকা দেন, ইমিগ্রেশনের ছাড়পত্র হয়ে যাবে। আমার লোকজন সব করে দেবে। আপনার কোনো সমস্যা নেই।’ মালয়েশিয়ায় কাজ পাওয়া যাবে কি না—জানতে চাইলে তিনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেন, ‘সব পাওয়া যাবে। ওখানে আমার লোকের অভাব নেই। আগে ঢোকেন ভাই, সব ব্যবস্থা করে দেব।’
জানতে চাইলে ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক (মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম অ্যান্ড ইয়ুথ প্ল্যাটফর্ম) শরিফুল ইসলাম হাসান কালবেলাকে বলেন, ‘গত বছরের মে মাস থেকে বৈধভাবে মালয়েশিয়ায় কর্মী যাওয়া বন্ধ। যখনই বৈধভাবে কোনো দেশে কর্মী যাওয়া বন্ধ হয়, তখন নানা পন্থা গড়ে ওঠে। এমনভাবে নথি বানায় যে, কোনটা সঠিক, কোনটা জাল বোঝা কঠিন হয়ে পড়ে। যারা এসব জালিয়াতি করে তারা অর্থ ক্ষমতা সব দিক থেকেই শক্তিশালী। তারা জানে কোথায় কাকে কীভাবে ম্যানেজ করতে হবে। এসব বন্ধ করতে হলে দায়িত্বরতদের যথাযথ প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ দিতে হবে। ইমিগ্রেশন, ভিসা এসব বিষয়ে যথাযথ দক্ষতা ও প্রযুক্তি না থাকলে এগুলো বন্ধ করা কঠিন। আবার যখন-তখন যাকে ইচ্ছা যেখান থেকে এনে বা যাকে তাকে যেখানে ইচ্ছা বদলি না করে এই ধরনের সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়।বরং দক্ষ কর্মকর্তাদের দিয়ে বিশেষ ইউনিট করা উচিত। কারণ অভিবাসন বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই সাধারণ মানুষ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় আবার অপরাধীরা পার না পায়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) এসপি সম্রাট মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান কালবেলার কাছে সব অভিযোগ শুনে বলেন, আমাদের এখানে সবকিছু স্ক্যানিং করে ঢোকানো হয়। এগুলো সব ফলস অ্যালিগেশন। এ ছাড়া ফারুক নামের কাউকে তিনি চেনেন না বলেও দাবি করেন।
এসব বিষয়ে জানতে ফের যোগাযোগ করা হয় এয়ার ক্লাউডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফারুক শেখের সঙ্গে। তবে কালবেলার প্রতিবেদক হিসেবে বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি সবকিছু অস্বীকার করেন। যদিও তার সঙ্গে মালয়েশিয়াগামী শ্রমিক হিসেবে এর আগের সাক্ষাৎ এবং কথোপকথনের প্রমাণাদি সংরক্ষিত রয়েছে।