আরিয়ান আফিফ (১২)। শরীরে পোড়া ক্ষত নিয়ে ১২২ দিন তার কেটেছে রাজধানীর জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের বিছানায়। এরমধ্যে ৮ দিন থাকতে হয়েছিল নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ)। আর সব মিলিয়ে ৩৪ বার অস্ত্রোপচারের মুখোমুখি হতে হয়েছে তাকে।
প্রায় চার মাস চিকিৎসা শেষে গত বৃহস্পতিবার হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়ে এখন গাজীপুরের টঙ্গীতে পরিবারের সঙ্গে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে সপ্তম শ্রেণির এ ছাত্র। মা ও স্বজনদের কাছে ফিরতে পেরে খুবই খুশি সে। বাড়ি ফিরে নতুন নতুন আবদারও করছে আরিয়ান। তবে আব্বুজির কাছে সবচেয়ে বেশি আবদার তার। ছোট বেলায় আরিয়ান বাবাকে হারানোর পর খালু শামসুল হকের কাছে বড় হয়েছে। শামসুল হককে আব্বুজি বলে ডাকে সে। তার কাছে আব্বুজিই বড় প্রেরণা। বাবার মতো সাধ্য অনুযায়ী আবদার পূরণের চেষ্টাও করেন আব্বুজি শামসুল হক।
বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের পর যখন আরিয়ানকে বার্ন ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়েছিল তখন শামসুল হকের আর্তনাদ অনেকের হৃদয়কে নাড়া দেয়। ২৩ জুলাই সমকালের প্রথম পাতায় প্রকাশিত হয়ে ‘আব্বুজির জন্য অপেক্ষা’ শিরোনামে সচিত্র প্রতিবেদন।
আরিয়ানের বাড়ি ফেরার খুশির খবরটি শামসুল হক জানালেন সমকালকে। শনিবার রাতে শামসুল হক সমকালকে বলেন, ‘শুধু আরিয়ান নয়, পরিবারের সবার জন্য বড় একটা যুদ্ধ ছিল। সবার দোয়া ও সহযোগিতায় সেই জায়গা থেকে ফেরত আসা গেছে। এখন আব্বুজি অনেক হাসিখুশি আছে। বন্ধুরা দেখতে আসছে। এলাকার মাঠে যাদের সঙ্গে ফুটবল খেলত তাদের মা–বাবা আসছে ওকে দেখতে। এখনও শতভাগ সুস্থ নয়। কানে হালকা ইনফেকশন আছে। স্কুলের যাওয়ার মতো অবস্থায় যেতে হয়তো আরও তিন থেকে চার মাস লাগবে। আমার কাছে আব্বুজির আবদারের অনেক। একাধিক বুফে রেস্টুরেন্টে যেতে চায়। আমি বলেছি, পুরোপুরি সুস্থ হলে নিয়ে যাব। আজ ফ্রাইড চিকেন ও কোল্ড ড্রিংকস কিনে দেওয়ার আবদার করে।’
শামসুল হক জানান, টঙ্গীতে একই ভবনের পৃথক ফ্ল্যাটে আরিয়ান ও তার মা এবং শামসুলের পরিবারের সদস্যরা বসবাস করেন। বাসায় ফেরার পর আরিয়ান আবদার করতে থাকে তিন বেলা তাকে আব্বুজিকেই খাইয়ে দিতে হবে। তাই যখন সময় পান আরিয়ানকে নিজ হাতে খাওয়ান। কখনো আবার শামসুলের স্ত্রী খাইয়ে দেন।
শামসুল হক জানান, দিনে তিনটি ক্রিম লাগত। একেকটি ক্রিমের দাম চার হাজার ৫০০ টাকা। এই ধরনের পোড়া রোগীর চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। আরিয়ানের চিকিৎসার খরচ দিয়েছে বিমানবাহিনী। ওর শরীরের ৪০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। যে দিন হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছে ওই দিন হাসপাতালে স্কুলের একজন শিক্ষক এসেছিলেন। পরিবারের সদস্য ও বন্ধুদের কাছে পেয়ে আরিয়ানের মনোবল বাড়ছে।
আরিয়ানের জন্মের আগে থেকে বাবা ইব্রাহীম হোসেন কিডনি সমস্যায় ভুগছিলেন। ১৫ দিন বয়স থেকে ওকে লালল-পালন করে আসছেন শামসুল। আরিয়ানের বয়স যখন ৫, তখন মারা যায় তার বাবা।
জীবন চরাচরে পরস্পরের প্রতি বিশুদ্ধ ভালোবাসা ও সম্পর্ক যে কেবল রক্তের উত্তরাধিকারে সীমাবদ্ধ থাকে না–এর বড় উদাহরণ হতে পারে আরিয়ান এবং শামসুল।