Image description

গত কয়েক দিনে রাজধানীতে বেশ কয়েকটি বাসে আগুনের ঘটনা জনমনে একইসঙ্গে আতঙ্ক ও সন্দেহ তৈরি করেছে। শনিবার (২১ নভেম্বর) রাজধানীর মহাখালীর দু‌র্যোগ ব‌্যবস্থাপনা অধিদফতরের সাম‌নে এক‌টি বা‌সে আগুন লাগার ঘটনা ঘ‌টে‌। এ দিন রাত ৯টার দিকে বাসটিতে আগুন ধরে যায়। ফায়ার স‌র্ভিস ক‌ন্ট্রোল রুম থে‌কে জান‌ায়, আগু‌নের খবর পে‌য়ে‌ছি‌লেন তারা। তবে তাদের কাজ কর‌তে হয়‌নি। ফায়ার ফাইটাররা ঘটনাস্থ‌লে যাওয়ার আগেই স্থানীয়রা আগুন নি‌ভি‌য়ে ফেলে। এর আগে বুধবার (১৯ নভেম্বর) রাত ১০টার দিকে রামপুরার বাংলাদেশ টেলিভিশনের কার্যালয়ের কাছাকাছি স্থানে ভিক্টর পরিবহনের একটি দাঁড়িয়ে থাকা বাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আগুন লাগার পর বাসটি থেকে থেমে থেমে একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়, যা স্থানীয় জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে।

এদিকে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় ঘিরে রাজধানীজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। রায়ের আগে থেকে ধারাবাহিকভাবে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে। প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও ককটেল বিস্ফোরণ বা উদ্ধার হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। হতাহত হচ্ছেন অনেকে। বিস্ফোরণের পাশাপাশি গত সাত দিনে অবিস্ফোরিত অবস্থায় শতাধিক ককটেল উদ্ধার করেছে পুলিশ। এতে রাজধানীবাসীর মনে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।

সর্বশেষ শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর কাজীপাড়া ও শেওড়াপাড়ার মাঝামাঝি জায়গায় মেট্রোরেলের ট্র্যাক লাইন থেকে দুটি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করে এমআরটি পুলিশ। ককটেলগুলো জর্দার কৌটায় স্কচটেপ পেঁচানো ছিল। ডিএমপির সিটিটিসির বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট গিয়ে সেগুলো অপসারণ করে।

এমআরটি পুলিশের ইন্সপেক্টর (তদন্ত) সোহেল চৌধুরী বলেন, ‘মেট্রোরেলের ২৮৮ ও ২৮৯ নম্বর পিলারের ওপর ট্র্যাক লাইনে দুটি অবিস্ফোরিত ককটেল পাওয়া গেছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে খবর পাই। লাইনে মেইনটেনেন্সের কাজ যারা করেন, তারা প্রথমে ককটেল দুটি দেখতে পান। মেট্রোরেলের লাইনের কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। এ ঘটনায় একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন।’

তিনি আরও বলেন, ‘যে জায়গায় ককটেল দুটি পাওয়া গেছে সেখানে কোনও সিসিটিভি ফুটেজ নেই। কারণ লাইন অনেক ওপরে। তবে আশপাশের বিভিন্ন ভবন এবং নিচের দোকানপাটের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করছে পুলিশ।’

ডিএমপির সিটি স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের ডিসি মো. জাহেজ পারভেজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এটি বড় ধরনের কোনও কিছু ছিল না। উদ্ধারের পর ককটেলগুলো নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে।’

লাইনে ককটেল পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ধারণা করা হচ্ছে, ককটেগুলো নিচ থেকে মেট্রোর লাইনে ছোড়া হয়েছে। জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেফতারে আমরা কাজ করছি।’

এর আগে, বুধবার (১৯ নভেম্বর) রাতে রাজধানীর পল্লবী থানা সংলগ্ন সাগুফতা গেটের সামনে পরপর দুটি ও পল্লবী থানা গেটের সামনে পাকা রাস্তার ওপর একটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে পল্লবী থানায় কর্মরত উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. নুর ইসলাম আহত হন। এছাড়া সড়ক দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় আহত হন আরও দুই জন। একই রাতে রামপুরা ব্রিজের কাছে বিটিভির সামনে দাঁড়ানো একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এসব ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ বলছে, দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি ও নাশকতা করতে কার্যক্রম নিষিদ্ধ একটি দল এসব কর্মকাণ্ড ঘটাচ্ছে। ইতোমধ্যে দলটির অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে। জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে কাজ করছে পুলিশ। কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। ফ্লাইওভারগুলোতে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।

ককটেল নাশকতার সঙ্গে কারা জড়িত? এমন প্রশ্নে সিটি স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের ডিসি মো. জাহেজ পারভেজ বলেন, ‘কার্যক্রম নিষিদ্ধ একটি দলের লোকজন এমন নাশকতা করছে। তারা একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যে তাদের কিছু লোককে ধরা হয়েছে। বাকিদেরও ধরতে অভিযান চলছে। পুলিশ ও অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এসব কার্যক্রম রোধে নজরদারি বাড়িয়েছে।’

টাকার বিনিময়ে ককটেল বিস্ফোরণ

ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেফতার বক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ জানিয়েছে, টাকার বিনিময়ে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে।

এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মো. শফিকুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সম্প্রতি রাজধানীতে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা বেড়েছে। তবে পুলিশ ও অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসব রোধে কাজ করছে। ইতোমধ্যে ককটেল বিস্ফোরণ নাশকতার সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা কার্যক্রম নিষিদ্ধ একটি দলের হয়ে টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন সময় ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘ককটেল নাশকতা রোধে আমাদের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ বিভিন্ন স্থানে গোয়েন্দা সদস্যরা কাজ করছেন। এছাড়া চলছে অনলাইন মনিটরিংও।’

জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। নগরবাসীর নিরাপত্তায় পুলিশসহ অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। দোষীদের শনাক্ত ও গ্রেফতারে কাজ চলছে।’