বেসরকারি একটি টেলিভিশনের টকশোতে অংশ নিয়ে সাংবাদিক মাসুদ কামাল বলেছেন, শেখ হাসিনার দ্রুত বিচার করে সরকার মূলত জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা সারজিস আলমকে খুশি করার চেষ্টা করেছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, যদি নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে সন্তুষ্ট করতেই এমন আয়োজন হয়, তবে সাধারণ জনগণের অবস্থান কোথায়?
মাসুদ কামাল বলেন, “সারজিস আলম আগে থেকেই বলছিলেন— শেখ হাসিনার বিচার না হলে নির্বাচন হবে না। এখন সেই বিচার সম্পন্ন করে তাকে খুশি করা হয়েছে। কিন্তু তাহলে আমাদের মতো দেশের কোটি মানুষের অবস্থান কোথায়? আমরা কি তাহলে গাঙের জলে ভাসছি?”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, এত আলোচিত একটি মামলার রায় ঘোষণার পরেই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এবং জাতিসংঘ মানবাধিকার হাই কমিশন প্রশ্ন তুলেছে বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে। “এগুলো কোনো পাড়ার সংগঠন নয়, আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠান। তারা বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলছে— এটা কি টাকা খাইয়ে থামিয়ে দেওয়া যায়? শেখ হাসিনার আমলে যখন এসব সংস্থা তার বিরুদ্ধে বলত, তখন কি তাদের কেনা প্রতিষ্ঠান বলা হতো?”— প্রশ্ন তোলেন তিনি।
মাসুদ কামাল বলেন, রায়ের বিষয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে এবং ভবিষ্যতে আরও হবে। তাই সরকারের উচিত এমন কাজ করা যাতে তা সর্বজনস্বীকৃত হয়। তিনি ব্যাখ্যা করেন, “কোন দল বা সরকার কি বলছে তা মুখ্য নয়, নিরপেক্ষ মানুষ কি বলছে— সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।”
টকশোতে তিনি বিচার নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন উত্থাপন করেন। তার মতে, হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডের মতো রায় এত কম সময়ে হওয়া স্বাভাবিক বলে মনে হয় না। “এক বছরে চারবার আইনের সংশোধন হয়েছে। অপরাধের সময়কার আইন অনুযায়ী বিচার হওয়ার কথা— কিন্তু এখানে পরবর্তী সময়ে চালু হওয়া বিধান, যেমন অডিও টেপ সাক্ষ্য গ্রহণ— প্রয়োগ করা হয়েছে। এতে প্রকৃতপক্ষে বিচারটি তাড়াহুড়ো করে করা হয়েছে কি না, সে প্রশ্ন উঠছে,” বলেন তিনি।
তিনি দাবি করেন, নির্বাচনের আগে দ্রুত রায় দেওয়ার পেছনে রাজনৈতিক অঙ্গীকারের চাপ ছিল। “প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, তিনটি কমিটমেন্ট— বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন। কিন্তু এই কমিটমেন্ট এসেছে কোথা থেকে? আন্দোলনের সময় এসব দাবি ছিল না, দাবি ছিল একটাই— পতন।”
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও বহু অভিযোগ আদালতে বিচার হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “যদি ১৫০০ মানুষও নিহত হয়ে থাকে, তাহলে প্রতিটি হত্যার দায় শেখ হাসিনার ওপরই বর্তাবে। এসব মামলায় তদন্ত ও বিচার হওয়া উচিত। কিন্তু তড়িঘড়ি করে একটি রায়ে সব শেষ করে দেওয়ার প্রয়োজনটা কী ছিল?”
মাসুদ কামাল মনে করেন, দ্রুত বিচার সরকারকে আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। “দুনিয়ার মানুষ তুলনা করবে— সরকারের বক্তব্য আর আন্তর্জাতিক পর্যায়ের মন্তব্য— কোনটি বেশি গ্রহণযোগ্য?”— এই মন্তব্য রেখে তিনি বিচার ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই মূল প্রশ্ন তোলেন।