Image description

‘আব্বা নিজের নামের পাশের গালিগুলো পড়তে বাধ্য হলেন, আমিও শুনতে বাধ্য হলাম’ বলে জানিয়ে ফেসবুকে বেদনাময় স্মৃতিচারণ করলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ছেলে আলী আহমাদ মাবরুর। বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজ আইডিতে একটি স্ট্যাটাস দেন তিনি।

ফেসবুক পোস্টে আলী আহমাদ মাবরুর বলেন, ট্রাইবুনালে আমার বাবা ও শহীদ মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে একজন সাক্ষী দিয়েছিলেন। তার নাম জহিরউদ্দিন জালাল। নিজেকে নানা পোশাকে সাজিয়ে সে আসতো। বুকে অনেকগুলো স্টিকার লাগানো থাকত। নিজেকে সে পরিচয় দিত বিচ্ছু জালাল হিসেবে। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে অনেকগুলো অপারেশনের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত থাকার দাবিও সে করেছিল।

কখনো ত্রিপুরার ট্রেনিং, কখনো ইন্টারকন্টিনেন্টালে অপারেশন, কখনো শহীদ রুমির সাথে- এরকম নানা জায়গায় সে অবস্থান দাবি করেছিল। ভাবখানা এমন ছিল যে পুরো ৯ মাসে সে যেন স্পাইডারম্যানের মতো উড়ে উড়ে বেড়িয়েছে। কারণ যুদ্ধ চলাকালে এতগুলো জায়গায় সে মুভ করলো কীভাবে তাও একটি প্রশ্ন।

মুজাহিদ পুত্র মাবরুর বলেন, তার বয়সও কম। মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার মতো নয়। নিজেকে আবার সে কিশোর মুক্তিযোদ্ধাও দাবি করেছিল। মজার ব্যাপার হলো, শহীদ রুমির সহচর হওয়া থেকে শুরু করে সে যেসব জায়গায় উপস্থিতির কথা বলেছে- এ সবগুলোতে যারা সত্যিকারেই ছিলেন তাদের কারও লেখনিতে তার নাম নেই। এমনকি জাহানারা ইমামের একাত্তরের দিনগুলোতেও তার নাম নেই।

আমরা খোঁজ নিয়ে বের করেছিলাম মোহাম্মাদপুরের আসাদ এভিনিউতে একটি বাসা পাবে, মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট পাবে- এরকম বেশ কিছু শর্তে সে সাক্ষী দিয়েছিল। শুধু তাই নয়, শাহবাগসহ সে সময়ের বিতর্কিত সব আন্দোলনে সে সামনের সারিতে ছিল। টিভিতে এসে সাক্ষাৎকার দিত। গরম কথা বলত। মানববন্ধনগুলোতে অংশ নিত। হঠাৎ করে সে কোথায় হারিয়ে গেল-জানি না।

 

তিনি বলেন, তার জবানবন্দির একটি বৈশিষ্ট্য ছিল। প্রতি লাইনে সে একটা করে গালি দিত। চূড়ান্ত পর্যায়ের গালি। মানে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে প্রমাণ করার জন্য সে অন্য সবার চেয়ে বেশি আগ্রাসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল। মনে হচ্ছিল, সে টার্গেট করেই জামায়াত নেতাদের গালি দেয়ার জন্যই এই কুরুচিপূর্ন শব্দগুলো ব্যবহার করছে। 

যখন সে দিত, আব্বা খুব লজ্জা পেতেন। সন্তানের সামনে এরকম বিশ্রি গালি শুনতে কোনো পিতারই বা ভালো লাগে। দলের আইনজীবীরাও ছিল। মূলত আব্বাকে কষ্ট দেয়ার জন্যই এবং অন্যদের সামনে অপদস্থ করার জন্যই জালাল এই গালিগুলো দিয়েছিল। এরপর আমরা আদালতের কাছে প্রতিকার চাইলাম। গালিগুলো বাদ দিতে বললাম। আদালত আমাদের আবেদন শুনলেন না। বললেন, সাক্ষী যা বলছে সেভাবেই টাইপ হবে।

আব্বা নিজে কম্পিউটার স্ক্রীনে নিজের নামের পাশে গালিগুলো পড়তে বাধ্য হলেন, আমিও শুনতে বাধ্য হলাম। বিচারের নামে কতভাবে যে আমাদের কষ্ট দেয়া হয়েছে ভাবলেও চোখ ভিজে যায়। অশ্নীল রুচিসম্পন্ন এই মানুষগুলো এখন কোথায় আছে জানি না। তবে, আব্বার সেই ভেজা চোখের কথা মনে পড়লে খুব কষ্ট লাগে।