Image description
আধিপত্য বিস্তারে কিবরিয়া হত্যাকাণ্ড । ফোর স্টার গ্রুপের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে র‌্যাব ।

রাজধানীর পল্লবী থানা যুবদলের সদস্য সচিব গোলাম কিবরিয়াকে (৫০) হত্যার অভিযোগে আরও দুইজনকে গ্রেফতার দেখিয়েছে র‌্যাব। তারা হলেন নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারী মনির হোসেন ওরফে সোহেল ওরফে পাতা সোহেল (৩০) ও সুজন ওরফে বুকপোড়া সুজন (৩৫)। মঙ্গলবার সাভার ও টঙ্গী এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। পরে বুধবার বিকালে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। এর আগে ঘটনাস্থলে স্থানীয়দের হাতে আটক জনি ভূইয়াকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠায় পল্লবী থানা পুলিশ। তবে হত্যায় ব্যবহার করা আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ ও র‌্যাব। এমনকি গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অস্ত্রসংক্রান্ত স্পষ্ট তথ্যও পায়নি তারা।

তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, হত্যাকাণ্ডের পরই স্থানীয়দের হাতে আটক হন জনি ভূইয়া। তাকে আদালতে নেওয়া হলে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানিয়েছেন, কিবরিয়ার মৃত্যু নিশ্চিত করার পরই হত্যায় ব্যবহার করা অস্ত্র দ্রুত সময়ে হাতবদল করেন তিনি। এর পরই স্থানীয় জনতা তাকে আটক করে। তবে তৎক্ষণিকভাবে অস্ত্র কার হাতে তুলে দেওয়া হয় এ তথ্য জানাতে পারেনি পুলিশ। এছাড়াও এই হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার করা অস্ত্র কীভাবে তাদের হাতে এসেছে, তা নিয়ে কোনো তথ্য নেই। অন্যদিকে র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার দুজনের কাছ থেকেও কোনো অস্ত্র উদ্ধার হয়নি।

সূত্র বলছে, গত বছরের ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানের পর মিরপুরসহ দেশের বিভিন্ন থানা থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুটের ঘটনা ঘটে। এছাড়াও আওয়ামী লীগের তিন আমলে রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া দশ হাজারের বেশি আগ্নেয়াস্ত্র অবৈধ ঘোষণার পরও জমা পড়েনি। এসব অস্ত্র হাতবদল হয়ে স্থানীয় সন্ত্রাসীসহ বিভিন্ন অপরাধীদের হাতে চলে যাওয়ার গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে। এই হত্যাকাণ্ডে এ দুই উৎস থেকে পাওয়া অস্ত্র ব্যবহার হয়ে থাকতে পারে।

এদিকে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মাহবুব আলম বলেন, এটি একটি সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড, যাতে বড় অঙ্কের অর্থের লেনদেন হয়। আসামিরা পেশাদার হত্যাকারী এবং তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। সোহেল ওরফে পাতা সোহেল অর্থ সরবরাহ করেছিলেন। তবে তিনি কীভাবে অর্থ পেয়েছেন কিংবা কার কাছ থেকে পেয়েছেন, সেটা এখনও পরিষ্কার নয়। পাতা সোহেলের নামে একাধিক হত্যা, ডাকাতি, মাদকসহ পল্লবী থানায় মোট ৮টি মামলা রয়েছে। গ্রেফতার দুজন মিরপুরকেন্দ্রিক গড়ে উঠা ফোর স্টার গ্রুপের সক্রিয় সদস্য। তারা দীর্ঘদিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে অপরাধচক্রের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিল। মিরপুরকেন্দ্রিক সন্ত্রাসে সুজন অস্ত্র সরবরাহ করে।

হত্যাকাণ্ডের মোটিভ সম্পর্কে প্রশ্নে র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক বলেন, মিরপুর এলাকাকেন্দ্রিক আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি-মাদক ও অন্যান্য সন্ত্রাসী কার্যকলাপ এবং দ্বিতীয়টি হলো রাজনৈতিক কোন্দল। নিহত গোলাম কিবরিয়া একটি রাজনৈতিক দলের সদস্য সচিব এবং মিরপুর এলাকায় রাজনৈতিকভাবে তিনি খুব সক্রিয় ছিলেন। এর আগে গোলাম কিবরিয়ার যাদের সঙ্গে সখ্য ছিল, রাজনৈতিক মেরুকরণের পরে সেই সখ্যতার বিরুদ্ধে তিনি কাজ করছিলেন। বিশেষ করে এলাকায় চাঁদাবাজি ও মাদক কারবারিতে নিহত গোলাম কিবরিয়ার সাপোর্ট ছিল না। হয়তো এ কারণে হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামুনের সম্পৃক্ততা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামুনের সরাসরি সম্পৃক্ততা আছে কিনা তা অনুসন্ধান চলছে। হত্যাকাণ্ডে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কানেকশন থাকতে পারে, তবে সবাইকে গ্রেফতার করলে রহস্য উন্মোচিত হবে।

প্রসঙ্গত, পল্লবীর পুরোনো থানার কাছে সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে সি ব্লকে একটি হার্ডওয়্যারের দোকানে মুখোশ ও হেলমেট পরা তিন ব্যক্তি ঢুকে যুবদল নেতা গোলাম কিবরিয়াকে খুব কাছ থেকে গুলি করে চলে যায়। রাত ৮টার দিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। হত্যার পর চলে যাওয়ার সময় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালককেও গুলি করে অস্ত্রধারীরা। আরিফ হোসেন নামের ওই অটোচালক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় পল্লবী থানায় পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন তার স্ত্রী সাবিহা আক্তার দিনা। বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দুজন এজহারনামীয় আসামিসহ তিনজনকে গ্রেফতারের কথা জানায় র‌্যাব ও পুলিশ।