ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর বাকি প্রায় আড়াই মাস। সমগ্র বাংলাদেশের জনগণ দীর্ঘ ষোলো বছর পর একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ এবং নতুন পরিবেশে নির্বাচিত একটি সরকার দেখতে উদগ্রীব। নির্বাচনী আমেজ যখন জোরালো, এরইমধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের পরিকল্পিত লালদিয়া চর কন্টেইনার টার্মিনালকে ডেনমার্কের কোম্পানিকে এবং চালু থাকা ঢাকার অদূরে পানগাঁও নৌ টার্মিনালটি সুইজারল্যান্ডের প্রতিষ্ঠানকে অস্বাভাবিক ঝটিকা বেগে প্রস্তুতি শেষ করে গত সোমবার দীর্ঘমেয়াদে ইজারা চুক্তিতে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। চুক্তির যাবতীয় শর্তাবলীও রাখা হয়েছে গোপন। একইভাবে যে কোনো সময়ই তড়িঘড়ি করে ইজারা চুক্তি স্বাক্ষরের পথে বন্দরের বহুল আলোচিত নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি)। ইতোপূর্বে বিদেশি রেড সী কোম্পানিকে হস্তান্তর করা হয় পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল (পিসিটি)।
দেশের প্রধান চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের উক্ত তিনটি টার্মিনাল ইজারার পর আরো ৪টি কন্টেইনার টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানিকে ৩০ থেকে ৪৮ বছর মেয়াদি ইজারার তোড়জোড় প্রস্তুতি চালাচ্ছে সরকার, বন্দর কর্তৃপক্ষ ও ইজারা গ্রহীতা বিদেশি কোম্পানিগুলো। টার্মিনালগুলো হচ্ছে নিউমুরিং, চিটাগং কন্টেইনার টার্মিনাল (সিসিটি) এবং ‘আগামীর বন্দর’ বে-টার্মিনাল প্রকল্পের আরো দুটি কন্টেইনার টার্মিনাল। এরপর অবশিষ্ট থাকবে শুধুই বস্তার মালামাল ওঠানামার সেকেলে সেই জেনারেল কার্গো বার্থ (জিসিবি)।
চট্টগ্রাম বন্দরের সুপার স্ট্রাকচার সমৃদ্ধ সর্বাধুনিক কন্টেইনার টার্মিনাল হচ্ছে নিউমুরিং। এটি চট্টগ্রাম বন্দরের ধারাবাহিক লাভজনক এবং সক্ষমতা সম্পন্ন। নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল এনসিটি বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত এবং অত্যাধুনিক ভারী ইকুইপমেন্ট (যান্ত্রিক সরঞ্জাম) কেনা হয়েছে। গত সোমবার দুটি টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানিকে ইজারায় তুলে দেয়ার পর এখন এনসিটি দুবাই ভিত্তিক কোম্পানি ডিপি ওয়ার্ল্ডকে ৩০ বছরের ইজারা চুক্তিতে ছেড়ে দেয়ার তোড়জোড় শুরু হওয়ায় এর বিরুদ্ধে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরীতে বিশাল মশাল মিছিল ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি সমর্থিত চট্টগ্রাম বন্দর জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল (সাবেক সিবিএ) এবং বিভিন্ন শ্রমিক কর্মচারী সংগঠন। মিছিলের সময়ে এক সমাবেশে শ্রমিক দলের নেতারা বলেছেন, নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) ইজারা চুক্তির মাধ্যমে পেয়ে গেলে বিদেশি ডিপি ওয়ার্ল্ড কোম্পানি নিয়ে যাবে বছরে কমপক্ষে ১১শ’ কোটি টাকা। আর, বন্দরের মাশুল বৃদ্ধির কারণে তা দ্বিগুণ হতে পারে।
এদিকে গতকাল বুধবার এক বিবৃতিতে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী মহাসচিব ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের টিম প্রধান মুহাম্মদ শাহজাহান অস্বচ্ছ ও গোপন চুক্তির মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দেয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বৃহত্তর জাতীয় শ্রমিক-কর্মচারী জোট স্কপ চট্টগ্রাম বন্দর রক্ষায় ধারাবাহিক আন্দোলন চালিয়ে আসছে। আগামী ২২ নভেম্বর শনিবার স্কপ-এর উদ্যোগে ঢাকাসহ সারাদেশ থেকে ট্রেড ইউনিয়নগুলো চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে শ্রমিক কনভেনশন এবং পরবর্তীতে হরতাল, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধসহ বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানান নেতৃবৃন্দ।
এদিকে লালদিয়া চর ও পানগাঁও টার্মিনালের পর সরকার এখন তাড়াহুড়া করে চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে লাভজনক ও স্বয়ংসম্পূর্ণ নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল এনসিটি বিদেশি কোম্পানি ডিপি ওয়ার্ল্ডকে ইজারা দেয়ার চুক্তি প্রক্রিয়া নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। চলতি মাসের শেষে অথবা আগামী ডিসেম্বরে দুবাই ভিত্তিক কোম্পানি ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে চুক্তির প্রস্তুতি চলছে। এই লক্ষ্যে ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠিত হয়েছে। তবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক) কত মূল্যে বা কী হারে মাশুল-ফি-চার্জ-ট্যাক্স ইত্যাদি পাবে তা অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কিছুই প্রকাশ করা হয়নি। বিদেশিদের সুবিধার্থে বন্দরের চার্জ-মাশুল ৪১ শতাংশ বৃদ্ধিতে বন্দরব্যবহারকারীদের (স্টেক হোল্ডারগণ) মাঝে ক্ষোভ-অসন্তোষ অব্যাহত রয়েছে।
একের পর এক দেশের প্রধান চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার টার্মিনালসমূহ বিদেশি কোম্পানির হাতে ইজারা দিয়ে হাতছাড়া করার বিরুদ্ধে এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠেছে শ্রমিক-কর্মচারী, নাগরিক, পেশাজীবি, সামাজিক ও রাজনৈতিক মহল। আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে রয়েছে জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদল, শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ)সহ প্রতিনিধিত্বশীল বিভিন্ন সংগঠন।
আন্দোলনরত শ্রমিক-কর্মচারী, পেশাজীবি, রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা বলেছেন, গণঅভ্যুত্থানে উৎখাত ও পলাতক ফ্যাসিবাদী হাসিনার সরকার পতনের আগেই (২০২৩-২৪ সালে) চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটিসহ টার্মিনালগুলো বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার কেন আওয়ামী ফ্যাসিস্ট হাসিনার সেই জাতীয় স্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে? চট্টগ্রাম বন্দরের কোথাও এক ইঞ্চি জায়গাও বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেয়া যাবে না। এর সঙ্গে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও ভূ-কৌশলগত নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত। চট্টগ্রাম বন্দর পরিচালনার জন্য বন্দর তথা দেশের দক্ষ-অভিজ্ঞ শ্রমিক-কর্মচারীসহ বৃহৎ জনসম্পদই যথেষ্ট সক্ষম।
বিদেশিদের সাথে ইজারা চুক্তির আগেই বন্দর এলাকায় মিছিল, সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ আরো এক মাস বৃদ্ধি করেছে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি)। গত মঙ্গলবার গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে আগামী ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ানোর কথা জানানো হয়।
এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের প্রতি বছর মুনাফা বাবদ নিজস্ব আয়েই গড়ে উঠেছে নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি)। গত ১৬ বছর যাবত এনসিটি চট্টগ্রাম বন্দরের আয়ের প্রায় ৬০ শতাংশ একক যোগান দিয়ে আসছে। মোট কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের ৪৪ শতাংশই সামাল দিচ্ছে এনসিটি। এই এনসিটি দ্বারাই গৌরবের আসনে চট্টগ্রাম বন্দর। আগের অপারেটর সাইফ পাওয়ারটেকের হাত থেকে বদল হয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রতিষ্ঠান চিটাগাং ড্রাইডক লি. মাধ্যমে গত ৭ জুনাই থেকে পরিচালিত হচ্ছে এনসিটি। দুর্নীতিমুক্ত এবং সুদক্ষ, সুশৃঙ্খল, গতিশীল, স্বচ্ছতার সাথে পরিচালনার ফলে এনসিটিতে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং ইতোমধ্যে বেড়েছে ২৭ শতাংশ। আমদানি-রফতানিকারক, ব্যবসায়ী, বন্দরব্যবহারকারীরাও (স্টেক হোল্ডারগণ) বর্তমানে এনসিটির পারফরমেন্সে সন্তুষ্ট। এনসিটি সুপার স্ট্রাকচারাল এবং সর্বাধুনিক গ্যানট্রি ক্রেনসহ যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ হওয়ায় এখানে নতুন করে বিনিয়োগের আর কোনো অবকাশ বা প্রয়োজনও নেই। জোয়ার-ভাটা নির্ভর এবং আঁকাবাঁকা ও সাড়ে ৯ থেকে ১০ মিটার ড্রাফটের সীমিত চ্যানেলের ধারেই এনসিটির অবস্থান। এতে করে এনসিটিতে যথেচ্ছ ‘বড়সড়’ এবং ‘অগণিত’ জাহাজ বার্থিংয়ের (ভিড়ার) কোনো টেকনিক্যাল সুযোগই নেই। তাছাড়া এনসিটির সঙ্গে লাগোয়া নেভির গুরুত্বপুর্ণ স্থাপনা থাকায় এর সাথে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও ভূ-কৌশলগত গুরুত্বের প্রশ্ন জড়িত বলে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা অনেক আগেই সতর্ক করে আসছেন।
এনসিটি ইজারার বিরুদ্ধে মশাল মিছিল অবরোধ : চট্টগ্রাম বন্দরের হৃৎপি- খ্যাত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) বিদেশি প্রতিষ্ঠান ডিপি ওয়ার্ল্ড কোম্পানিকে ইজারার সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ‘চট্টগ্রাম বন্দর রক্ষা পরিষদের উদ্যোগে’ বন্দরের অদূরে নগরীর হালিশহর বড়পুল ওয়াপদায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক বিরাট মশাল মিছিল বের হয়। এ সময় পোর্ট কানেকটিং রোড অবরোধের কর্মসূচিও পালিত হয়েছে। মিছিলকালে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সভাপতিত্ব করে বন্দর রক্ষা পরিষদের আহ্বায়ক আবু সাইদ হারুন। প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সংহতি আন্দোলন চট্টগ্রাম জেলার প্রধান সমন্বয়কারী হাসান মারুফ রূমি। এতে প্রধান বক্তা বন্দর শ্রমিক দলের নেতা মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ও অত্যাধুনিক টামিনাল। এই টার্মিনাল দিয়ে আমদানিতে বর্তমান ট্যারিফ অনুয়ায়ী প্রতি ইউনিট কন্টেইনারে চট্টগ্রাম বন্দরের প্রায় ১৬৫ ডলার হারে আয় হয়। আর টার্মিনাল অপারেটরকে বিল দেয়া হয় গড়ে ১০ ডলার। অন্যান্য খরচ হয় আনুমারিক ৪০ ডলার। চট্টগ্রাম বন্দরের নীট আয় হয় ১১৫ ডলার। যদি ডিপি ওয়ার্ড আমাদের বন্দরকে মাত্র ৫০ ডলার হারে মাশুল দেয় তাহলে ডিপি ওয়ার্ড বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাবে প্রতি ইউনিট কন্টেইনারে ৬৫ ডলার। তারাই যদি উক্ত টার্মিনালটি পরিচালনা করে তাহলে ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরের হিসাব অনুযায়ী ডিপি ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ থেকে বছরে এক হাজার একশ’ সাত চল্লিশ কোটি পাঁচলক্ষ আটাশি হাজার দুইশত পঁয়ত্রিশ টাকা নিয়ে যাবে।
এই বিপুল পরিমান ডলার বিদেশে চলে গেলে বাংলাদেশেকে ব্যাপক ভাবে ডলার সংকটে পরবে। আর ট্যারিফ বাড়ানোর প্রস্তাব পাশ হলে বিদেশে ডলার চলে যাওয়ার পরিমাণ প্রায় দ্বিগুন হয়ে যাবে।
সভায় বক্তব্যে মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, প্রধান উপদেষ্টা, আপনি বাংলাদেশের সম্পদ। তেমনি চট্টগ্রাম বন্দরের সিসিটি এসটিটিও বাংলাদেশের সম্পদ। আপনি কারো দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে এবং কোন ভুল তথ্যের উপর ভিত্তি না করে বাংলাদেশের হার্ট চট্টগ্রাম বন্দরের সিসিটি এনসিটি বিদেশিদের হাতে লীজ না দেয়ার জন্য বিনীত ভাবে অনুরোধ করছি।
সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন মোজাহের হোসেন শওকত, মো. আবুল কালম, আনোয়ারুল আজিম (রিংকু), মহানগর শ্রমিক দলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোঃ আজিম, মহানগর বিএনপির নির্বাহী সদস্য বিভাগীয় শ্রমিক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজি আইয়ুব, প্রচারও প্রকাশনা সম্পাদক আবু বকর ছিদ্দিকি, বন্দর শ্রমিকদল নেতা শেখ ছানুয়ার মিয়া, আকতার হোসেন, মোস্তফা চৌধুরী, মো. নাছির উদ্দিন, মোশারফ হোসেন, দিদারুল আলম, আনোয়ার হোসেন, গোলাম ছরোয়ার, মিনহাজ উদ্দিন আহমেদ, ফরিদুর রহমান, নুরুল আজিম আল আমিন প্রমুখ।
দেশের স্বার্থবিরোধী গোপন চুক্তিতে উদ্বেগ জামায়াতের : অস্বচ্ছ ও গোপন চুক্তির মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর কার্যত বিদেশিদের হাতে তুলে দেয়ার দেশীয় স্বার্থবিরোধী পদক্ষেপে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও চট্টগ্রাম জোনাল হেড মুহাম্মদ শাহজাহান গতকাল বুধবার এক বিবৃতি দিয়েছেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর দেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র। আবার দেশের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের মতো স্পর্শকাতর ইস্যুও চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে সম্পৃক্ত। তাই চট্টগ্রাম বন্দর বিষয়ে তাড়াহুড়োপ্রবণ, অস্বচ্ছ ও গোপন কোনো পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে অন্তর্বর্তী সরকার তাই করতে চাইছে। কোনো দরপত্র ছাড়াই পতিত স্বৈরাচারের আত্মীয়-স্বজনের সাথে সম্পৃক্ত এক বিদেশি কোম্পানিকে নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল এনসিটি তুলে দেওয়ার যাবতীয় ষড়যন্ত্র চলমান। এছাড়াও অন্যান্য কয়েকটি টার্মিনালের বিষয়েও এ সরকারের সিদ্ধান্তে জনগণের মাঝে ক্ষোভ ও অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। জনআকাক্সক্ষার আলোকে আমরা চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে বর্তমান উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে আমাদের অবস্থান সুস্পষ্ট করে নিম্নোক্ত প্রস্তাব পেশ করছি। দেশীয় ব্যবস্থাপনায় বন্দরের উন্নয়ন সম্পন্ন করুন। একান্ত প্রয়োজন হলে দক্ষ ও অভিজ্ঞ বিদেশি জনবল নিয়োগ দিন এবং তাদের মাধ্যমে দেশীয় জনবলকে প্রশিক্ষিত করুন। উন্নত মানের যন্ত্রপাতিসহ যাবতীয় উপায়-উপকরণ নিয়ে আসুন। তাও যদি সম্ভব না হয়, তাহলে বিদেশি অপারেটরকে দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই আন্তর্জাতিক দরপত্রের নীতিমালা অনুসরণ করে জনগণকে অবহিত করেই চুক্তি করতে হবে। কোনো গোপন চুক্তি কিংবা দরপত্রবিহীন অবৈধ চুক্তি করলে জন-অসন্তোষ তৈরি হবে। যার সমুদয় দায়ভার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর বর্তাবে।