Image description
► কূটনৈতিক মিশন খোলা ► সরাসরি বিমান চলাচল ► প্রতিবেশী বাজারে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা

ইউরোপ-আমেরিকার বাইরে বাংলাদেশের জন্য এক সম্ভাবনাময় বাজার রয়েছে। তবে সে বাজার ধরতে সরকার কিংবা বেসরকারি খাতের কারও কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই। সরকারি পর্যায়ে মাঝেমধ্যে আলোচনা সভাসেমিনার হলেও তা কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ থাকছে। এই বাজারটি হচ্ছে মধ্য এশিয়া। যেখানে উজবেকিস্তান, কাজাখস্তান, তুর্কমেনিস্তান, তাজিকিস্তান, কিরগিজস্তান এই পাঁচ রাষ্ট্রের অবস্থান।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী প্রায় ৩৯৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার জিডিপিসমৃদ্ধ এ অঞ্চলে ৮ কোটির বেশি ভোক্তা রয়েছে। মধ্য এশিয়ায় বাংলাদেশের রপ্তানির তুলনায় আমদানি সামান্য বেশি। প্রতি বছর এ অঞ্চল থেকে প্রায় ১১৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ। বিপরীতে রপ্তানির পরিমাণ প্রায় ১১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সম্প্রতি এক সভায় বিশেষজ্ঞ ও নীতিনির্ধারকরা মতামত দিয়েছেন, অনাবিষ্কৃত বাজার হিসেবে মধ্য এশিয়ার দেশগুলো বাংলাদেশের রপ্তানি ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে।

সূত্র জানায়, মধ্য এশিয়ায় বাণিজ্য সম্প্রসারণে সবচেয়ে বড় বাধা যোগাযোগ সমস্যা। ওই অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে সরাসরি বিমান যোগাযোগ নেই। সমগ্র অঞ্চলে বাংলাদেশের একটি মাত্র কূটনৈতিক মিশন রয়েছে, যা উজবেকিস্তানের রাজধানী তাশখন্দে অবস্থিত। মধ্য এশিয়া একটি প্রধান        তুলা উৎপাদনকারী অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। ফলে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করা গেলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রধান কাঁচামাল তুলা সাশ্রয়ীমূল্যে আমদানি করার সুযোগ তৈরি হতো। একই সঙ্গে সেই তুলায় তৈরি পোশাক অগ্রাধিকারভিত্তিতে মধ্য এশিয়ার দেশগুলোতে রপ্তানির সুযোগ পাওয়া যেত।

সূত্রগুলো আরও জানায়, সম্প্রতি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) মধ্য এশিয়ার সঙ্গে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদারকরণ সংক্রান্ত এক আন্তমন্ত্রণালয় সভার আয়োজন করে। প্রায় দুই মাস পেরিয়ে গেলেও ওই সভার সুপারিশ নিয়ে কোনো ফলোআপ বৈঠক হয়নি। মধ্য এশিয়ার বাণিজ্যিক সম্ভাবনা নিয়ে ইআরডির অতিরিক্ত সচিব এ এইচ এম জাহাঙ্গীর ওই সভায় মূল উপস্থাপনা প্রদান করেন, যেখানে বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের মধ্যে সাম্প্রতিক বাণিজ্য প্রবাহ তুলে ধরা হয়। সভায় যে বিষয়গুলো উঠে এসেছে তা হলো- মধ্য এশিয়া ইউরোপ ও চীনের মধ্যে অবস্থিত একটি জ্বালানি সমৃদ্ধ অঞ্চল। রাশিয়ায় বাণিজ্য সম্প্রসারণেও এ অঞ্চল সহায়ক হতে পারে। এ অঞ্চলের দেশগুলোর দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি এবং কৌশলগত অবস্থানের কারণে, বাংলাদেশের জন্য বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য বিশাল ‘সুযোগ’ প্রদান করতে পারে।

সভায় অংশগ্রহণকারীরা মধ্য এশিয়ায় বাণিজ্য বৃদ্ধির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বেশ কিছু কৌশল তুলে ধরেন। এগুলো হলো- (১) সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে আরও কয়েকটি কূটনৈতিক মিশন খোলার উদ্যোগ নিতে পারে বাংলাদেশ; (২) এই অঞ্চলটি একটি প্রধান তুলা উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে পরিচিত, স্থানীয় তৈরি পোশাক ব্যবসায়ীরা রাশিয়া এবং প্রতিবেশী বাজারে সহজে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার জন্য সেখানে বিদেশি ইউনিট স্থাপনের উদ্যোগ নিতে পারে; এবং (৩) ঢাকা ও তাশখন্দের মধ্যে সরাসরি বিমান চলাচল স্থাপনের বিষয়টিও কার্যকর করার বিষয়টি উঠে আসে আলোচনায়।

এ ছাড়া যোগাযোগ বাড়াতে ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলকে ওই অঞ্চলের বাণিজ্যিক সফরে পাঠানোর বিষয়েও আলোচনা হয়। তবে এসব সুপারিশ ও কৌশল বাস্তবায়নে সরকারি কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে ইআরডির অতিরিক্ত সচিব এ এইচ এম জাহাঙ্গীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রায় দুই মাস আগে মধ্য এশিয়া নিয়ে একটি আন্তমন্ত্রণালয় সভা হয়েছিল। ওই সভায় কী সুপারিশ উঠে এসেছিল-এখন আর তা মনে নাই। মধ্য এশিয়ার বাণিজ্য সম্ভাবনা আছে কি-না সেই বিষয়গুলো নিয়ে সভায় আলোচনা হয়েছিল বলে জানান তিনি।

নিট তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যেভাবে পশ্চিমা বাজারে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে- সে ক্ষেত্রে মধ্য এশিয়ার দেশগুলো আমাদের জন্য বিকল্প নতুন বাজার হতে পারত। কিন্তু কাছের হলেও এই বাজারটি কী ধরনের-  সে সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট ধারণা নেই ব্যবসায়ীদের। ওই অঞ্চলের সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের সরাসরি বিমান যোগাযোগের কোনো ব্যবস্থা নেই। এমন কি সেখানকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় কূটনৈতিক মিশনও নেই। এই সুযোগগুলো সরকার তৈরি করে না দিলে যত সম্ভাবনাই থাকুক বেসরকারি খাত সেখানে যেতে পারবে না।