Image description
বেপরোয়া টার্গেট কিলিং

রাজধানীসহ সারা দেশে হঠ্যাৎ করে বেড়েছে টার্গেট কিলিং। প্রকাশ্য দিবালোকে এসব বর্বর হত্যাকাণ্ড ঘটানো হচ্ছে। আধিপত্য বিস্তার, আন্ডারওয়ার্ল্ডের দখল, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও ব্যক্তিগত বিরোধের জেরে প্রতিদিনই ঝরছে রক্ত। সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি ফিল্মি স্টাইলে প্রকাশ্যে নৃশংস কায়দায় গুলি করে হত্যার ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে পাড়া মহল্লাতেও তুচ্ছ ঘটনাতে চলছে অবৈধ অস্ত্রের মহড়া। দুর্ভাগ্যজনকভাবে প্রায় প্রতিদিনই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হচ্ছে এসব নির্মম হত্যা ও অবৈধ অস্ত্রের মহড়ার মতো ঘটনা। এতে জনমনে বাড়ছে নিরাপত্তার শঙ্কা। তবে পুলিশ বলছে, অপরাধ করলে কাউকেই ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তবে পুলিশ স্বীকার করেছে আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসীরা দেশের বাইরে থেকে অনেক কিছুর নির্দেশনা দিচ্ছেন।

অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে এবং সামাজিক অস্থিরতা বেড়ে যাওয়ায় টার্গেট কিলিংয়ের সংখ্যা বাড়ছে। সেই সঙ্গে জনজীবনকে অনিরাপদ করে তুলেছে গণ অভ্যুত্থানের পর ঢালাওভাবে জামিনে বের হওয়া চিহ্নিত ও কুখ্যাত আসামিরা। সীমান্তে অবৈধ অস্ত্রের চালান বন্ধ এবং জামিন পাওয়া চিহ্নিত আসামিদের আবার আইনের আওতায় না আনলে নির্বাচনের আগে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।

দেশ থেকে পালানো সাবেক ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধের রায় ঘোষণার দিনে নাশকতা ঠেকাতে রাজধানীজুড়ে পুলিশের বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা চলাকালে গত সোমবার সন্ধ্যায় ফিল্মি স্টাইলে খুন হয় পল্লবী থানা যুবদলের সদস্যসচিব গোলাম কিবরিয়া। হেলমেট ও মাস্ক পরা তিন দুর্বৃত্ত দোকানে ঢুকে উপর্যুপরি গুলি ও হত্যা নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়। এ সময় এক অটো রিকশাচালককেও তারা গুলি করে। বিস্ময়ের বিষয় গোলাম কিবরিয়াকে হত্যার ঘটনার ফুটেজ মুহূর্তের মধ্যে সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। এতে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টিসহ নিরাপত্তা ঘাটতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। একই দিন লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জে আবুল কালাম নামে এক বিএনপি নেতাকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়। এর আগে আন্ডারওয়ার্ল্ডের দ্বন্দ্বে গত ১০ নভেম্বর পুরান ঢাকার আদালত পাড়ার ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে দিনদুপুরে ফিল্মি স্টাইলে গুলি করে শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাইফ মামুনকে হত্যা করা হয়। মাত্র ১০ সেকেন্ডের এই কিলিং মিশনের পরে দুই শুটারসহ পাঁচজন গ্রেপ্তার হলেও মূলহোতারা রয়ে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। পরদিন ১১ নভেম্বর চন্দ্রিমা মডেল টাউন এলাকা থেকে আহমেদ সাব্বির নামে এক ছাত্রদল নেতার হাত-পা বাঁধা ও গলায় ফাঁস দেওয়া লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। একই দিন গুলশান লেকের পাশে সৌরভ নামে ছাত্রদলের আরেক নেতাকে পরিকল্পিতভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ১৩ নভেম্বর হাই কোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ মাঠের গেটের কাছে পরিত্যক্ত ড্রাম থেকে উদ্ধার করা হয় রংপুরের কাঁচামাল ব্যবসায়ী আশরাফুল হকের ২৬ টুকরা লাশ। এর আগে গত ৫ নভেম্বর চট্টগ্রামে বিএনপির নির্বাচনি জনসংযোগের মধ্যে গুলি করে হত্যা করা হয় সরোয়ার হোসেন ওরফে বাবলা নামে এক সন্ত্রাসীকে। এ সময় চট্টগ্রাম-৮ আসনের বিএনপি মনোনীত এমপি প্রার্থী এরশাদ উল্লাহসহ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হন। গত ১২ সেপ্টেম্বর মধ্য বাড্ডা এলাকার কমিশনার গলির একটি মেসে গুলি করে হত্যা করা হয় মামুন শিকদার নামে একজনকে।

পুলিশ সদরদপ্তরের অতিরিক্ত আইজিপি (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) খন্দকার রফিকুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যে কোনো অপরাধ দমনে রাখতে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া আমাদের নিয়মিত কাজ। জনসম্পৃক্ততা বাড়িয়ে খুনোখুনিসহ সব অপরাধ নিয়ন্ত্রণে রাখতে মাঠ পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া আছে।

আর টার্গেট কিলিংয়ের ক্ষেত্রে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সময়টা খুবই সেনসিটিভ। এরপরও কেউ কোনো ঘটনা ঘটালে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মো. শফিকুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার ও টার্গেট কিলিং কমাতে ডিবির নজরদারি, অভিযান ও তল্লাশি কার্যক্রম জোরদার রয়েছে। নির্বাচনের আগে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ার একটি শঙ্কা থাকে, সেদিকেও আমাদের গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। ডিবি প্রধান আরও বলেন, আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসীরা দেশের বাইরে থেকে অনেক কিছুর নির্দেশনা দিচ্ছেন। তবে, আইনের উর্ধ্বে কেউ নন- অপরাধের সঙ্গে যেই জড়িত হোক- আইনের আওতায় আনা হবে।