Image description
সাবেক ডিএমপি কমিশনারসহ আসামি আট পুলিশ সদস্য

চব্বিশের জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের ঘটনায় করা সবচেয়ে আলোচিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় এরই মধ্যে মৃত্যুদণ্ড ঘোষিত হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের। এবার চানখাঁরপুলে ছয় আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় করা মামলাটি রায়ের দিকে যাচ্ছে। বিচারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ প্রসিকিউশন পক্ষের উপস্থাপন শেষ পর্যায়ে। আইনজীবীদের আশা, গত বছর ৫ আগস্টের পর পুনর্গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এটিই হতে পারে দ্বিতীয় রায়।

জানা গেছে, প্রসিকিউশনের সাক্ষ্য উপস্থাপনের পরই গ্রেপ্তার থাকা আসামিরা সাফাই সাক্ষী উপস্থাপনের সুযোগ পাবেন। আর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষেই মামলাটি বিচারের শেষ ধাপ, অর্থাৎ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন পর্যায়ে আসবে। যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের পরই রায়ের জন্য প্রস্তুত হবে অন্যতম আলোচিত এ মামলা।

গত বছর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের দিন রাজধানীর চানখাঁরপুলে পুলিশের গুলিতে নিহত হন ছয় আন্দোলনকারী। এই ঘটনায় করা মামলাটিই পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে প্রথম মামলা (আইসিটি বিডি কেস নম্বর ১/২০২৫) হিসেবে দাখিল হয়। এই মামলায় সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান হাবিবসহ আটজনকে আসামি করা হয়েছে।

আসামিদের মধ্যে হাবিবুর রহমান হাবিব ছাড়াও ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ্ আলম মো. আখতারুল ইসলাম, রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল পলাতক রয়েছে। অন্যদিকে শাহবাগ থানার সাবেক পরিদর্শক মো. আরশাদ হোসেন, কনস্টেবল মো. সুজন হোসেন, ইমাজ হোসেন ও মো. নাসিরুল ইসলাম গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। ধার্য তারিখে তাদের হাজির করা হয় ট্রাইব্যুনালে। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ মামলাটির বিচার চলছে।

এই মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর (অ্যাডমিন) গাজী এম এইচ তামীম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এই মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ পযায়ে রয়েছে। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হলেই যুক্তিতর্কের ধাপ বাকি থাকবে। পরে রায়ের তারিখ নির্ধারণ।

জানতে চাইলে আসামি পক্ষের আইনজীবী সাদ্দাম হোসেন অভি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রসিকিউশনে সাক্ষ্য উপস্থাপন শেষ হলেই আমরা সাফাই সাক্ষী উপস্থাপন করব। এর পরেই যুক্তিতর্ক উপস্থাপন পর্যায়ে যাবে এ মামলাটি। এর পরেই রায়। আর এই রায়টি হতে পারে পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালের দ্বিতীয় রায়।

অভিযোগ দাখিলের পর ৬ মাস ১৩ দিনে তদন্ত শেষ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। গত ২০ এপ্রিল চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেয় সংস্থাটি। এটিই ছিল জুলাই-আগস্টের গণ আন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার প্রথম তদন্ত প্রতিবেদন। পরে গত ২৫ মে এই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হলে ট্রাইব্যুনাল তা আমলে নেন। এ মামলায় ৭৯ জনকে সাক্ষী করেছে প্রসিকিউশন। পরে গত ১৪ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। পরে গত ১১ আগস্ট চিফ প্রসিকিউটরের সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে এই মামলার বিচার শুরু হয়। ওই দিন শুরু হয়েছে সাক্ষ্য গ্রহণ। মামলাটিতে এখন পর্যন্ত প্রসিকিউশনের ২৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। ২৫তম সাক্ষী ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলামের সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে।

প্রসিকিউশনের আনা অভিযোগ অনুযায়ী, গণ অভ্যুত্থানের সময় সারা দেশে ব্যাপক মাত্রায় ও পদ্ধতিগতভাবে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অংশ হিসেবে গত বছরের ৫ আগস্ট চানখাঁরপুল এলাকায় ছয়জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তারা হলেন- শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ মাহদি হাসান জুনায়েদ, মো. ইয়াকুব, মো. রাকিব হাওলাদার, মো. ইসমামুল হক ও মানিক মিয়া।