‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধনের জন্য প্রবাসে অঞ্চলভেদে তিন থেকে চার সপ্তাহ সময় বেঁধে দেওয়ার প্রাথমিক পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
আর নিবন্ধিত প্রবাসী ভোটারদের ঠিকানায় পোস্টাল ব্যালট পাঠানো হবে তফসিল ঘোষণার পর। যারা দেশের ভেতরে এ পদ্ধদিতে ভোট দেবেন, তাদের ব্যালটের জন্য অপেক্ষা করতে হবে প্রতীক বরাদ্দ হওয়া পর্যন্ত।
ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোটের সময় ধরে আগামী মাসের শুরুর দিকে ঘোষণার কথা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের।
প্রথমবারের মতো আইটি-সাপোর্টেড পোস্টাল ব্যালটে ভোট নেবে এএমএম নাসির উদ্দিনের নির্বাচন কমিশন।
পোস্টাল ভোটিংয়ের জন্য নিবন্ধন ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপটি সিইসি উদ্বোধন করবেন ১৮ নভেম্বর।
অ্যাপ ডাউনলোড করতে প্রবাসীদের উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি নিবন্ধন, নির্ভুল ঠিকানা দেওয়া, ভোটদান পদ্ধতি, ডাকযোগে প্রবাসে ব্যালট পেপার পৌঁছানো, রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে ফেরত খাম আসা, ব্যালট ট্র্যাকিংসহ সার্বিক বিষয়ে প্রচারও শুরু হচ্ছে।
নির্বাচন কমিশন, দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট প্রকল্প কর্মকর্তারা পোস্টাল ভোটিংয়ের অগ্রগতি, কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও করণীয় নিয়ে নিয়মিত বসছে। বিভিন্ন দূতাবাস, মিশন, প্রবাসী কমিউনিটির সঙ্গে মত বিনিময়ও করছে।
মঙ্গলবারও বিভিন্ন অঞ্চলের দূতাবাস ও মিশন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে নির্বাচন কমিশনার মো. আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ অগ্রগতি ও দিকনির্দেশনামূলক সভা করেন।
সেদিন প্রস্তুতি তুলে ধরে তিনি জানান, ১৮ নভেম্বর অ্যাপটি উদ্বোধন করা হবে। অ্যাপটি ডাউনলোড করতে হবে। তাতে প্রশ্নোত্তরের ব্যবস্থাও থাকবে। পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকায় নিবন্ধনের জন্য যে সিডিউল দেওয়া হচ্ছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে।
তফসিল ঘোষণা ও সময়সূচির ওপর অনেক বিষয় নির্ভর করবে, তা বিবেচনায় নিয়ে শেষ মুহূর্তে বাদ পড়াদের অন্তর্ভুক্ত করতে নিবন্ধনের সময়ও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
এ নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা ও প্রতীক বরাদ্দের পর দ্রুত সময়ে ভোট দিয়ে ফেরত পাঠাতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ব্যালট না পৌঁছালে গণনায় নেওয়া হবে না।
প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটারদের পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, ভোটের কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি এবং আইনি হেফাজতে থাকা ব্যক্তিরা পোস্টাল ভোটিংয়ে নিবন্ধন এবং পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন।
অ্যাপ উদ্বোধন ঘিরে যত পরিকল্পনা
প্রবাসের সঙ্গে সময় সমন্বয় রাখতে ১৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় নির্বাচন ভবনে অ্যাপটি উদ্বোধনের কথা রয়েছে।
ঢাকায় রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, চার নির্বাচন কমিশনার ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অ্যাপটি উদ্বোধন করবেন। অনলাইনের মাধ্যমে প্রবাস থেকেও অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন অনেকে।
>> ১৮ নভেম্বর মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে উদ্বোধন হবে ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপ।
>> অ্যাপ সম্পর্কে তুলে ধরবেন আউট অব কান্ট্রি বোটিং সিস্টেম ডেভেলপমেন্ট এ্যান্ড ইমপ্লিমেন্টেশন (ওসিভি-এসডিআই) প্রকল্পের টিম লিডার।
>> একজন নির্বাচন কমিশনার পোস্টাল ভোটিং (আইটি সাপোর্টড) বিষয়ে বক্তব্য দেবেন।
>> সিইসি অ্যাপ উন্মুক্ত করবেন।
>> অনলাইনে বিদেশে অবস্থিত সব দূতাবাস ও মিশন প্রধান/প্রতিনিধি, বিদেশে অবস্থানরত
প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিবন্ধন করা সংগঠনসমূহের প্রতিনিধি, সব বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক, নির্বাচন কমিশনের সব আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা এবং সিনিয়র/জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা যুক্ত থাকবেন।
শুক্রবার ইসির জনসংযোগ পরিচালক রুহুল আমিন মল্লিক বলেন, “উদ্বোধন অনুষ্ঠানে নিবন্ধিত দলগুলোর প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি পাঠানো হচ্ছে।”
তিনি জানান, অ্যাপ উদ্বোধনের পরে অঞ্চলভেদে অন্তত তিন থেকে চার সপ্তাহ করে সময় দেওয়া হতে পারে। এ বিষয়ে কমিশন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে।
ইসি কর্মকর্তারা বলেছেন, নিবন্ধিত সব দল, স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রতীক ও ‘না’ ভোটের চিহ্ন থাকবে ব্যালট পেপারে। ডিজিটাল প্লাটফর্ম থেকে আসনভিত্তিক প্রার্থী তালিকা, নাম ও প্রতীক দেখে ‘টিক’ চিহ্ন দিয়ে ভোট দেবেন পোস্টাল ব্যালটে।
ইসির তালিকায় এখন ১১৯টি প্রতীক রয়েছে। নিবন্ধিত দল ৫৩টি, নতুন তিনটি দল নিবন্ধন চূড়ান্তের অপেক্ষায়। একটি দলের নিবন্ধন স্থগিত ও তিনটি বাতিল রয়েছে। সেক্ষেত্রে ব্যালট পেপারে দল ও স্বতন্ত্র মিলে অন্তত ৬৪টি প্রতীক রাখা হতে পারে।
ভোটদাতার ঘোষণাপত্রে নিজেকে স্বাক্ষর ও এনআইডি নম্বর দিতে হবে। আর স্বাক্ষরে অক্ষম ব্যক্তির ক্ষেত্রে সত্যায়নকারীর পরিচয় ও স্বাক্ষরের বিধান রয়েছে।
জাতীয় জুলাই সনদের গণভোট (‘হ্যাঁ/না’) নিয়ে সরকারের আনুষ্ঠানিকতা সেরে আইন বা অধ্যাদেশ ও বিধি হওয়ার পর নির্বাচন কমিশন পরবর্তী উদ্যোগ নেবে। সেক্ষেত্রে প্রবাসীদের জন্য আলাদা ব্যালট পেপার পাঠানোর প্রক্রিয়া যুক্ত হবে।
নিবন্ধন সময় কত, ব্যালট মিলবে কবে
ইসি কর্মকর্তারা জানান, আউট অব কান্ট্রি ভোটিং সিস্টেম অ্যান্ড ইমপ্লিমেন্টেশন (ওসিভি–এসডিআই) প্রকল্পের পক্ষ থেকে সম্প্রতি অগ্রগতি ও করণীয় তুলে ধরা হয় সভায়।
নিবন্ধন অ্যাপ চালুর পরবর্তী তিন-চার সপ্তাহ নিবন্ধন কার্যক্রম উন্মুক্ত রাখার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
জানুয়ারি পর্যন্ত দেশ-বিদেশে ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপের প্রচার চালাতে হবে। নিরাপত্তাসহ পোস্টাল ব্যালটের পার্সোনালাইজেশন কার্যক্রম শুরু হবে উদ্বোধনের পরেই। ডিসেম্বরে পোস্টাল প্যাকেজে প্রবাসে পাঠানো শুরু করতে হবে।
প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন পার হলে প্রতীক বরাদ্দ দেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। সেক্ষেত্রে প্রতীক বরাদ্দের তারিখের উপর নির্ভর করবে কখন থেকে ব্যালট পেপার বাংলাদেশে ফেরত আসা শুরু হবে। ডাক বিভাগ এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে।
জানুয়ারির দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় সপ্তাহে থেকে ব্যালট পেপার ফেরত আসা শুরু হতে পারে ধরে নিয়ে এগোচ্ছে কমিশন।
স্থানীয় পর্যায়ে পৌঁছানোর পরে রিটার্নিং কর্মকর্তা পোস্টাল ব্যালটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন।
নির্বাচন কমিশন, ডাক বিভাগসহ নানা প্লাটফর্মে পোস্টাল ব্যালট নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালানো হবে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, সবশেষ ১০ নভেম্বর পোস্টাল ব্যালটের অগ্রগতি ও করণীয় বিষয়ে সভা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য প্রায় ১০ লাখ আর দেশের ভেতরে তিন ধরনের ব্যক্তির জন্য ১০ লাখ পোস্টাল ব্যালট ছাপানোর পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।
তফসিল ঘোষণার পর প্রবাসীদের জন্য আর প্রতীক বরাদ্দের পর দেশের অভ্যন্তরের অ্যাপে নিবন্ধিত ভোটারদের কাছে ডাক বিভাগের মাধ্যমে ‘পোস্টাল প্যাকেজ’ পাঠানো হবে।
পোস্টাল ব্যালটে যেভাবে ভোট
পোস্টাল ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোট দিতে ভোটদাতার অবগতির জন্য নির্দেশাবলী দেওয়া থাকবে খামে।
এতে বলা থাকবে, ব্যালট পেপারে সব প্রতীক মুদ্রিত হয়েছে। ভোট দিতে ইচ্ছুক হলে পছন্দের প্রতিদ্বন্দী প্রার্থীর নাম ও প্রতীক নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত ডিজিটাল প্যাটফর্মে (মোবাইল অ্যাপ, ওয়েবসাইট ইত্যাদি) থাকবে, যা প্রতীক বরাদ্দের তারিখ থেকে দেখা যাবে।
ব্যালট পেপারের প্রতীকের বিপরীত স্থানে কলমের সাহায্যে একটি টিক (✔) চিহ্ন অথবা ক্রস (X) চিহ্ন দিয়ে ভোট দিতে হবে।
যেসব নির্দেশা মানতে হবে
- খামের ভেতরের ঘোষণাপত্রটি পড়ে সই করতে হবে।
- নিরক্ষরতা বা অক্ষমতার কারণে ব্যালট পেপার চিহ্নিত ও ঘোষণাপত্র স্বাক্ষর করতে অক্ষম হলে জাতীয় পরিচয়পত্রধারী যেকোনো ব্যক্তি ভোটারের পক্ষে ভোট চিহ্নিত করাতে ও ঘোষণাপত্র স্বাক্ষর করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে ভোটারের সামনে ও তার ইচ্ছা অনুসারে ব্যালট পেপার চিহ্নিত করতে হবে। ভোটারের পক্ষে তাকে সত্যায়ন করতে হবে।
- ব্যালট দেওয়ার পর ব্যালট পেপারটি এর সঙ্গে পাঠানো পোস্টাল ব্যালট চিহ্নিত খামে ভরে রিটার্নিং কর্মকর্তার ঠিকানা মুদ্রিত থাকা খামে রাখতে হবে। এরপর সেটির মুখ আটকে ডাকযোগে পাঠাতে হবে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে।
- নির্বাচনের শেষ সময়সীমার আগেই রিটার্নিং অফিসারের কাছে (ফল একত্রীকরণের জন্য নির্ধারিত সময়ের আগে) খামটি ডাকযোগে পৌঁছানো নিশ্চিত করতে হবে।
- ইসির নির্দেশনা অনুযায়ী ঘোষণাপত্র সত্যায়িত করাতে ব্যর্থ হলে ব্যালট পেপারটি নাকচ করা হবে।
- নির্বাচনের শেষ সময়সীমার আগে এবং ফল একত্রীকরণের জন্য নির্ধারিত সময়ের পরে খামটি রিটার্নিং অফিসারের কাছে পৌঁছালে সেটা ভোট হিসেবে গণনা করা হবে না।
পোস্টাল ভোটিংয়ে প্রতি ভোটের জন্য প্রায় ৭০০ টাকা খরচ হচ্ছে বলে জানিয়েছে ইসি। অ্যাপে দেশের ভেতরে-বাইরে প্রায় ৫০ লাখ নিবন্ধনের লক্ষ্যমাত্রা ধরে পরিকল্পনা্এগোচ্ছে।
এনআইডি নম্বরসহ প্রয়োজনীয় তথ্য ও নির্ভুল ঠিকানা দিয়ে অ্যাপে নিবন্ধনের পর ব্যালট পেপার ইস্যু থেকে সংশ্লিষ্ট আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পৌঁছানো পর্যন্ত ট্র্যাকিং করা যাবে।
ইসি সচিব আখতার আহমেদ এর আগে বলেছেন, “এই অ্যাপের মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশি ও দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন জায়গায় কর্মরত সরকারি চাকরিজীবী, ভোটের দিন যারা নির্বাচনি দায়িত্বে থাকবেন কিংবা আইনি হেফাজতে থাকা ব্যক্তিরা নিবন্ধন করতে পারবেন এবং পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে পারবেন।”


