Image description

২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর উপকূল দিয়ে বয়ে গিয়েছিল প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় সিডর। যে দিনটি আজও ভুলতে পারেনি উপকূলের মানুষ। প্রতিনিয়ত সেই স্মৃতি ধুঁকে ধুঁকে কাঁদাচ্ছে স্বজনহারা মানুষের।

শনিবার (১৫ নভেম্বর) সিডর। সেই স্মৃতির কথা ভুলে যাওয়ার নয়। বসত বাড়ি আর স্বজনহারা মানুষের জন্য আরও বেশি কাঁদায়। সিডরে স্বজনহারা এক নারীর সঙ্গে কথা হয়। সিডরের কথা জিজ্ঞেস করতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন দুই সন্তান হারা লাভলী বেগম (৫৫)। লাভলীর মতো অসংখ্য নারীর বুক খালি হয়েছে সিডরে।

পাথরঘাটা উপজেলার চরদুয়ানী দক্ষিণ চরদুয়ানী গ্রামের বাসিন্দা লাভলী বেগম। তার ছেলে রুবেল (১১) ও মেয়ে তন্বী আক্তার (৩) সেই ভয়াল সিডরের থাবায় মারা যায়।

লাভলী বেগম বলেন, সিডরের রাতে হঠাৎ পানি আসে বসত ঘরে। ঘর ডুবে যায়। মুহূর্তের মধ্যে দুই সন্তান ঘর থেকে পানির স্রোতে ভেসে যায়। পানি সরে যাওয়ার পর অনেক খোঁজাখুঁজি করি কিন্তু পাইনি। পরদিন আশপাশের খুদেও পাওয়া যায়নি। পরদিন বাড়ি থেকে তিন কিলোমিটার দূরে একটি ঘরে পাওয়া ওদের লাশ।

তিনি আরও বলেন, যে ঘরে ছেলে-মেয়েদের পাওয়া গেছে, তারা তাকে জানান- সকালে দুজনকে ভাসতে দেখে তাদের ঘরের খাটে শুইয়ে রাখে। তারা ভাবছিল আর ওরা জীবিত। কিন্তু পরে দেখা যায় ওরাও মৃত।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, সন্তান হারা যে কতো কষ্টের; যার যায় সেই বুঝে। দুই সন্তানকে আজও ভুলতে পারছি না। প্রতি মুহূর্ত ওদের কথা মনে পড়লে বুকে ব্যথা ওঠে। বাড়ির সামনেই ওদের কবর, আজও শুন্যতা।

১৫ নভেম্বর ২০০৭। এদিন বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতে আঘাত হানে ভয়ানক ঘূর্ণিঝড় সিডর। আঘাতের সময় সিডরের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২৬০ কিলোমিটার। তবে এ সময় দমকা হাওয়ার বেগ উঠছিল ঘণ্টায় ৩০৫ কিলোমিটার পর্যন্ত। সিডরের প্রভাবে উপকূলে ১৫-২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়। লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে যায় উপকূল। আজও সেই ধ্বংসযজ্ঞের স্মৃতি বয়ে বেড়ায় এখানকার মানুষ। সিডরে পাথরঘাটায় ব্যাপক ক্ষতি হয়। প্রানহানি হয় অনেক মানুষের। বেড়িবাঁধ ভেঙে কৃষিসহ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়।

পাথরঘাটা উপজেলা প্রশাসনের তথ্য মতে জানা যায়, সিডরে পাথরঘাটায় প্রাণ যায় ৪৪৯ জনের।

পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিজানুর রহমান বলেন, সিডর উপকূলজুড়ে ক্ষতি করে দিয়ে যায় যা আজও ভুলতে পারেনি উপকূলের মানুষ।

উপকূল অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও গবেষক শফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, সিডরের ভয়াবহতা উপকূলের মানুষ ভুলতে পারেনি উপকূলবাসী। সিডর থেকে শুরু করে প্রতি উপকূলে যে হারে মানুষের প্রাণহানিসহ ক্ষতি হয় সেই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। উপকূলকে রক্ষা করতে হলে প্রথমে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ দরকার, পাশাপাশি বেড়িবাঁধের বাইরে বনায়ন দরকার। এছাড়া জলবায়ু সহনশীল ঘরবাড়ি তৈরি করা দরকার। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ে মানুষের সচেতনতার পাশাপাশি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।