কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ডাকা লকডাউন কর্মসূচীতে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতেই ছিল রাজধানী ঢাকা। গতকাল সকাল থেকে কোথাও লকডাউনের কোনো প্রভাবই দেখা যায়নি। দিনের শুরুতে যান চলাচল কিছুটা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার পরিমাণও বাড়তে থাকে। রাজধানীর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থান ঘুরে দেখা যায়, গণপরিবহনসহ অন্যান্য যানবাহন স্বাভাবিকভাবেই চলেছে। ভোর থেকেই কর্মমুখী মানুষদের কর্মস্থলের উদ্দেশে ছুটতে দেখা যায়। গণপরিবহন কিছুটা কম থাকায় অনেককে অপেক্ষা করতে হলেও, বিকল্প হিসেবে অনেকেই ব্যবহার করেছেন মোটরসাইকেল, রিকশা, সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। এ অবস্থায় জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিতে মাঠে ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সন্দেহভাজন পরিবহন ও সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের তল্লাশি চালানো হচ্ছে। সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সেনাবাহিনীকে টহল দিতে দেখা গেছে।
রাজধানীতে সকাল থেকেই সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ি কম দেখা গেছে। তবে ব্যস্ততম মতিঝিল, পল্টন, ফকিরাপুল ও দৈনিক বাংলা মোড়সহ আশপাশের এলাকায় রিকশা ও ব্যাটারিচালিত রিকশার আধিপত্য লক্ষ্য করা গেছে। গণপরিবহনও ছিল। অফিসগামী সাধারণ মানুষ গণপরিবহন ও রিকশাতেই গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছেন। মতিঝিল, পল্টন ও আশপাশের এলাকায় দেখা গেছে, টং দোকান, চায়ের স্টল, খাবারের হোটেল, ফার্মেসি সবই খোলা। ফুটপাথের অস্থায়ী দোকানগুলোতেও চলেছে স্বাভাবিক কেনাবেচা। সকাল থেকেই চায়ের দোকানগুলোতে ছিল আড্ডা ও আলাপের জমজমাট পরিবেশ।
গত বুধবার রাত থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটলেও গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সড়কে তেমন কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি দেখা যায়নি। বরং রাজধানীর অফিসপাড়া খ্যাত মতিঝিল, দিলকুশা, পল্টন, দৈনিক বাংলা ও ফকিরাপুল এলাকায় স্বাভাবিক কর্মচাঞ্চল্য লক্ষ্য করা গেছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বাভাবিকভাবে লেনদেন চলছে। সকাল থেকেই এসব এলাকার বিভিন্ন ব্যাংকের শাখায় গ্রাহকদের উপস্থিতি দেখা যায়। কর্মকর্তারা জানান, দিনের শুরুতে কিছুটা কম গ্রাহক এলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা বেড়ে যায়। লেনদেনের পরিবেশ ছিল পুরোপুরি স্বাভাবিক। একটি ব্যাংকের দিলকুশা শাখায় আসা গ্রাহক আনিসুর রহমান বলেন, ব্যাংকের কার্যক্রম আসার পর দেখি সব স্বাভাবিক। খুব অল্প সময়েই কাজ শেষ হয়েছে। টাকার প্রয়োজন ছিল, তাই এসেছি। একটু শঙ্কিত ছিলাম। কিন্তু বাইরে এসে দেখি সব ঠিক আছে, সবাই নিজ নিজ কাজ করছে।
ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, কোথাও লকডাউনের প্রভাব নেই। গ্রাহকরা স্বাভাবিকভাবে ব্যাংকমুখী হচ্ছেন। সকাল থেকে লেনদেন চলেছে, আর বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্রাহকের উপস্থিতিও বাড়ছে। অন্যান্য দিনের মতোই লেনদেন কার্যক্রম চলছে। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় পরিবার কিছুটা চিন্তায় ছিল। কিন্তু সড়কে কোনো জটিলতা হয়নি। বরং আগেভাগে অফিসে এসে পড়েছি।
এদিকে, সায়েদাবাদ, মহাখালী ও গাবতলী টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল করছে। গ্রিন লাইন, সাকুরা, সেন্টমার্টিন, সৌখিন, আলম এশিয়াসহ কিছু বড় পরিবহন কোম্পানির বাস চলাচল করেছে। ঢাকার ভেতরেও বিভিন্ন রুটে লোকাল বাস চলেছে।
এদিকে লকডাউনে অরাজকতা রোধে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পুলিশের তৎপরতা বিস্তৃত করা হয়। মহাসড়কের কুমিল্লার বিভিন্ন অংশ ঘুরে র্যাব-পুলিশের উপস্থিতি এবং তল্লাশি চৌকি দেখা যায়। হাইওয়ে পুলিশ জানিয়েছে, কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের কর্মসূচিকে ঘিরে মহাসড়কে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টা পুলিশের টহলদল, পেট্রোল টিম, মোবাইল টিমের তৎপরতা চোখে পড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে। প্রতিটি ইউটার্নসহ ঝুঁকিপূর্ণ অংশ চিহ্নিত করে তল্লাশি চৌকি বসানো হয়। কাউকে সন্দেহজনক মনে হলে তাকে তল্লাশি করা হয়।
মালবহনকারী যানবাহন ও যাত্রীবাহী বাস চলাচল করেছে। তবে ব্যক্তিগত গাড়ি একদমই কম ছিল। পরিবহন মালিকরা জানিয়েছেন, লকডাউন কর্মসূচিকে ঘিরে সড়কে গাড়ি চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তারা। লকডাউনের প্রভাব তেমন নেই বললেই চলে মহাসড়কে।
মহাসড়কে যানচলাচল স্বাভাবিক থাকার পাশাপাশি মানুষজন নির্বিঘ্নে গন্তব্যে পৌঁছাতে পেরেছে। ফলে লকডাউন ঘিরে কোনো অনাকাক্সিক্ষত কিংবা নাশকতার মতো ঘটনা ঘটেনি। যেকোনো বিশৃঙ্খলা এড়াতে পুলিশ সদস্য মোতায়েন ছিল। কর্মস্থল যাচ্ছিলেন নাজিমুল। তিনি বলেন, আমরা একটু ভয়ে ভয়েই বের হয়েছি, কারণ রাতভর খবরে শুধু আগুনের ঘটনা শুনেছি। তবে রাস্তা এসে স্বাভাবিক দেখলাম।
অটোরিকশা চালক সাইফুল ইসলাম বলেন, সকাল থেকেই ভালো যাত্রী পেয়েছি। শুনছি আওয়ামী লীগ কর্মসূচি দিয়েছিল। কিন্তু কিছু দেখি নাই।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, নগরবাসীর আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। নগরবাসীর সেবায় সর্বদা আমাদের পুলিশ সদস্যরা প্রস্তুত ছিলাম। নগরবাসী আতঙ্কিত না হয়ে আমাদের সহায়তা করেছে। এ ছাড়াও, মাঠে সেনাবাহিনী, র্যাব, বিজিবি ও পুলিশসহ পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিটগুলো সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে ছিল। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা প্রস্তুত ছিল।