Image description

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিজের সই করা জুলাই জাতীয় সনদ লঙ্ঘন করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। গতকাল জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া  প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পর এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এই মন্তব্য করেন। সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, গত ১৭ই অক্টোবর সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় যে জুলাই জাতীয় সনদ প্রধান উপদেষ্টা নিজে স্বাক্ষর করেছেন, সেটা তিনি লঙ্ঘন করেছেন তার ভাষণের মাধ্যমে। তিনি বলেন, জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষে পিআর জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ‘নোট অব ডিসেন্টের’ মাধ্যমে মীমাংসিত। এটি নতুন করে আরোপ করার কোনো সুযোগ নেই। এছাড়া ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ’- নামে যে বডি, সেটি জাতীয় সংসদের কোনো পর্যায়ে গঠনের বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার বিষয় ছিল না। এটা সম্পূর্ণ নতুন ধারণা।

গুলশানে নিজের বাসায় সাংবাদিকদের সালাহউদ্দিন বলেন, জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। আমরা গত কয়েকদিন আগেও আমাদের দলের অবস্থান সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানিয়েছি যে, স্বাক্ষরিত জুলাই জাতীয় সনদের বাইরের কোনো বিষয় যদি আরোপ করা হয় তার সঙ্গে আমরা একমত হবো না এবং স্বাক্ষরে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলো প্রতি সেটা কোনো বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করবে না।

তিনি বলেন, আজকেও বলতে চাই, যে সমস্ত বিষয় এখানে জবরদস্তি আরোপ করা হয়েছে এবং বলা হচ্ছে- এগুলোর উপর হয় আপনি হ্যাঁ বলবেন বা না বলবেন। যে প্রশ্নগুলো করা হচ্ছে, সেটা  স্বাক্ষরিত সনদের বহির্ভূত। যে আদেশটা আজকে জারি করা হয়েছে, সেটার মধ্যে অনেকগুলো আছে নিত্য-নতুন, তাদের মনের মাধুরী মিশিয়ে অনেকগুলো প্রস্তাব করা হয়েছে।’
সালাহউদ্দিন বলেন, হয়তো এখানে কোনো কোনো পক্ষ খুশি হতে পারে। কিন্তু কথা হচ্ছে যে, আমরা রাষ্ট্রের মধ্যে একটা ঐক্য সৃষ্টির পরিবর্তে কি অনৈক্য সৃষ্টি করতে যাচ্ছি? জাতীয়ভাবে কি আমরা কোনো বিভাজন সৃষ্টি করতে যাচ্ছি? এই বিভাজনের দায় দায়িত্ব কি মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা নেবেন?

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জুলাই জাতীয় সনদ ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়েই স্বাক্ষরিত হয়েছে, সারা জাতি দেখেছে এবং সেই স্বাক্ষরিত জুলাই জাতীয় সনদের প্রিন্টেড কপি সবার কাছে আছে। সেই কপিগুলোতে প্রস্তাব এবং তার বিপরীতে দলগুলোর সম্মতি এবং নোট অফ ডিসেন্ট, নোট অফ ডিসেন্টের ভাষা সবকিছু সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে। এটা কোনো প্রথাগত নোট অফ ডিসেন্ট নয়, ভিন্ন মত নয়। সুনির্দিষ্টভাবে যে, এই ভিন্ন মত যদি দলগুলো তাদের নির্বাচন ইশতেহারে উল্লেখ করে এবং জনগণের ম্যান্ডেট প্রাপ্ত হয় তাহলে তারা সেভাবে বাস্তবায়নের ব্যবস্থা নিতে পারবেন। এখন সেই জায়গা থেকে কি সরে আসা হলো না?  এজন্যই আমি বলছি যে, যিনি স্বাক্ষর করেছেন, প্রধান উপদেষ্টা তিনি নিজের স্বাক্ষরিত দলিলের বাইরে গেলেন- সেটা লঙ্ঘনের শামিল।

বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, এটা একটা নতুন ধারণা, যেটা জাতীয়  ঐকমত্য কমিশনে কখনো আলোচিত হয়নি, সিদ্ধান্ত হয়নি, ঐকমত্য হয়নি। এই ধারণাগুলো কেন তিনি আদেশের মধ্যে এবং এই প্রস্তাবের মধ্যে নিয়ে এলেন, সেটা আমাদের জানা নাই। কারণ জাতীয় সংসদ গঠিত হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্যই নির্বাচন কমিশন দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংবিধানিকভাবে, রাষ্ট্রপতির নির্বাচনও সাংবিধানিকভাবে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। এখন যে নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিকভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং নির্বাচন অনুষ্ঠান করবেন, তার মধ্য দিয়ে নির্বাচিত হবেন সংসদ সদস্যরা, তারা শপথ নেবেন যথাযথ প্রক্রিয়ায় সংসদ সদস্য হিসেবে।

তিনি বলেন, এখানে (আদেশে) প্রস্তাব করা হচ্ছে, তারা একইভাবে সংবিধান সংস্কার পরিষদের সদস্য হিসেবে শপথ  নেবেন। তারা কি সংবিধান সংস্কার পরিষদের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন যে, শপথ  নেবেন? সুতরাং এই আইডিয়াগুলো নতুন এবং এভাবে একটা সময় নির্ধারণ করে দেয়া এবং একটা পরিষদ নির্ধারণ করে দেয়া তাদের মধ্য দিয়ে সংবিধান সংস্কারের জন্য প্রস্তাব করা এবং সেটা ১৮০ দিনের ভেতরে হতে হবে সে সমস্ত প্রস্তাব করা, এগুলোর এখতিয়ার কি আসলে কারও আছে?

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আগামী জাতীয় সংসদকে এভাবে ডিক্টেট করার কোনো প্রস্তাব কি কোনো আইনি ভিত্তি পাবে? তাতে করে কি সংসদের এখতিয়ার সার্বভৌম এখতিয়ার উপরে কি হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে না? বাংলাদেশে একটাই হাউজ হচ্ছে সার্বভৌম, সেটা হচ্ছে সংবিধান অনুসারে জাতীয় সংসদ। যেখানে যে কোন রকমের আলোচনার জন্য কোনো বিষয় আদালতে নিয়ে যাওয়া যায় না। ওখানে যেকোনো কার্যাবলী এবং আলোচনা সংসদের যেকোনো বিষয়ে যে আলাপ-আলোচনা হয় তার কোনো বিষয় আদালতে টেনে নেয়া যায় না- সেই এখতিয়ার নাই। কারণ ওটা সার্বভৌম হাউস। ওখানে যে সমস্ত বিষয়ে আলোচনা হবে, সেটার সার্বভৌমত্বের এখতিয়ার হচ্ছে সংসদ সদস্যদের এবং সংসদের। তাদের উপরে এ রকম কোনো কিছু আরোপিত করা সেটা হচ্ছে যে, সার্বভৌম সংসদের সার্বভৌমত্বের উপরে একটা হস্তক্ষেপের শামিল।

তিনি বলেন, যদি কোনো রকমের একটা জাতীয় ঐকমত্য হতো ক্ষমতা হতো এই যে, আমরা একটা গণপরিষদ বা সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠন করবো। তখন সেই লক্ষ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সংবিধান পরিবর্তন হতে হবে, নির্বাচন কমিশনকে এখতিয়ার দিতে হবে। তারপরে হতে হবে। এখন কি আমরা স্বাধীনতার পূর্ব অবস্থায় আছি? যে একটা গণপরিষদ করতে হবে? বাংলাদেশ নতুন করে একটা রাষ্ট্র হলো, এই রাষ্ট্র তো পুরাতন। এখানে আমাদের একটা সংবিধান আছে। সুতরাং যে সমস্ত আইডিয়া এখানে আরোপ করা হচ্ছে এগুলো সবই সাংঘর্ষিক। তারপরও আমরা যদি জাতীয় ভিত্তিতে ঐকমত্য হতে পারতাম কোনো বিষয়ে তাহলে এই প্রশ্নগুলো উত্থাপিত হতো না।

সালাহউদ্দিন আরও বলেন, সংকট তো সৃষ্টি করেছেন জুলাই জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এবং সরকার নিজেই। তারা জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করলেন। তার আগে সংস্কার কমিশন গঠন করলেন। আলাপ-আলোচনা হলো। ঐকমত্য কমিশনের নয় মাস আলোচনা হলো এই বিষয়গুলো ক্ষমতায় আসার জন্য। তারপরে জাতীয় সনদ রচিত হলো, প্রণীত হলো, স্বাক্ষরিত হলো। তার বাইরে কেন যাবে? আমাদের বক্তব্য তো এখানেই। সংকট তো শুরু করেছেন ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ প্রদানের মধ্য দিয়ে সরকারের কাছে। সেই কমিশনের সভাপতি হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা নিজেই স্বাক্ষর করেছেন। তিনি তার কাছেই নিজে নিজে সুপারিশ করেছেন। বিষয়টা অনেকটাই।

তিনি আরও বলেন, এখানে দাবির কোনো বিষয় নেই। আমরা বলছি, জুলাই জাতীয় সনদ প্রণীত হয়েছে, স্বাক্ষরিত হয়েছে ঐকমত্যের ভিত্তিতে। সেখানে তিনিও স্বাক্ষর করেছেন, সবাই স্বাক্ষর করেছে। আমরা বলছি সেই সনদটাই বাস্তবায়ন করি। আমাদের প্রস্তাব রাখলো না, তাদের প্রস্তাব রাখলো সেটা বিষয় না। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের শেষের দিকে যখন আইনি ভিত্তির কথা বলা হলো, এই সনদের তখন বললাম যে, জনগণের সম্মতি নেয়া যায় এবং একইভাবে একই দিনে সর্বময় জনগণের সম্মতি আছে কিনা সেটা আমরা নিতে পারি। সেখানে সবাই একমত হয়েছিল, দুই-একটা দল বাদে। তখন তারা প্রশ্নটা উঠালেন এই সম্মতির জন্য গণভোটটা কি আগে হবে, পরে হবে নাকি ভোটের দিন হবে।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সবাই কমফর্টেবল মনে করলেন যৌক্তিক মনে করলেন, গ্রহণযোগ্য মনে করলেন, ব্যয়শ্রায়ী মনে করলেন এবং অন্যান্য সকল আয়োজনের ক্ষেত্রে সুবিধাজনক করলেন একই দিন হওয়া উচিত সময়ের বিবেচনায় ব্যয়ের বিবেচনায়, সুবিধার বিবেচনায়- সেটা তো আমাদের প্রস্তাব না। আমরা সেখানে সম্মত হয়েছি।

তিনি বলেন, তারা (জামায়াত) কী নির্বাচন চায়? নির্বাচন বিলম্বিত করতে চায় কিনা- সেগুলো বুঝতে হবে তাদের একক্টিভিটিস এর মধ্য দিয়ে।