বৃটেনে ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির মধ্যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, বৃটিশ সরকার সম্পূর্ণ গৃহযুদ্ধে নিমজ্জিত। প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমারের বিরুদ্ধে দলীয় নেতাদের বিদ্রোহের গুঞ্জন নিয়ে সরব হয়েছে বৃটিশ মিডিয়া। তারা ইঙ্গিত দিচ্ছে, এরই মধ্যে বেশ কিছু নেতা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। তারা যদি সফল হন তাহলে নেতৃত্বের দৌড়ে কে কে থাকতে পারেন তারও একটি তালিকা পাওয়া গেছে। দলীয় সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে অনলাইন ডেইলি মেইল বলছে, নেতৃত্বের পরবর্তী দৌড়ে রয়েছেন ওয়েস স্ট্রিটিং (স্বাস্থ্যমন্ত্রী), শাবানা মাহমুদ (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী), অ্যানজেলা রেইনার (সাবেক ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী) ও এড মিলিব্যান্ড (জ্বালানিমন্ত্রী)। তবে প্রধানমন্ত্রী ঘনিষ্ঠরা সম্ভাব্য ষড়যন্ত্রকারীদের সতর্ক করে বলেন, যদি তারা কিয়ের স্টারমারকে সরিয়ে দেন, তাহলে তা সাধারণ নির্বাচন ডেকে আনতে পারে। সেটাই যদি হয় তাহলে লেবার পার্টির জন্য বিপর্যয়কর পরিণতি বয়ে আনতে পারে।
ওয়েস্টমিনস্টারে নেতৃত্ব পরিবর্তনের জল্পনা যখন জোরালো, তখন প্রধানমন্ত্রী ঘনিষ্ঠ এক সূত্র জানিয়েছে, নতুন নেতা জনগণের কাছ থেকে নিজস্ব ম্যান্ডেট চাইবেন। আইনগতভাবে নির্বাচন বাধ্যতামূলক নয়, কিন্তু আধুনিক যুগে জনসমর্থন অপরিহার্য। সূত্রটি আরও বলেছেন, আমরা কনজারভেটিভদের সময়েও দেখেছি, এমনকি গর্ডন ব্রাউনের ক্ষেত্রেও- জনগণ ঘৃণা করে যখন দলগুলো নিজেদের ভেতরে বসে নতুন প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে ফেলে। যারা কিয়েরের বিরুদ্ধে যাওয়ার কথা ভাবছেন, তারা ভালোভাবে ভেবে নিন।
মঙ্গলবার দিনভর বিশৃঙ্খল অবস্থার পর লেবারের ভেতরে ‘গৃহযুদ্ধ’ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সরকারের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচিত স্বাস্থ্যমন্ত্রী ওয়েস স্ট্রিটিংকে দুর্বল করার চেষ্টা সম্পূর্ণ উল্টো ফল দিয়েছে। কনজারভেটিভ নেতা কেমি বাডেনক বলেন, ‘সরকার সম্পূর্ণ গৃহযুদ্ধে নিমজ্জিত।’ রিফর্ম ইউকে নেতা নাইজেল ফারাজ মন্তব্য করেছেন, ‘এটি দিকহীন, রাডারহীন এক সরকার। যত দ্রুত নির্বাচন হয়, দেশের জন্য তত ভালো।’
লেবার প্রধানের চিফ অব স্টাফ মর্গান ম্যাকসুইনিকে অনেকেই দায়ী করেছেন গোপন ব্রিফিংয়ের জন্য, যেখানে স্ট্রিটিংকে অভ্যুত্থান পরিকল্পনায় অভিযুক্ত করা হয় এবং লেবার এমপিদের ‘পশুর মতো’ আখ্যা দেয়া হয়। এক সহযোগী বলেছেন, ‘হ্যাঁ, তিনি ১০০ শতাংশ এর পেছনে ছিলেন। এখন তিনি শেষ।’ ওয়েস স্ট্রিটিং ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘যারা ব্রিফিং করছে, তাদের অপসারণ করা উচিত। ডাউনিং স্ট্রিটের এই বিষাক্ত সংস্কৃতি বদলাতে হবে।’ লেবার চেয়ারম্যান আনা টারলি জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন এবং ব্যবস্থা নেয়া হবে। কমন্সে বক্তব্যে স্টারমার বলেন, স্ট্রিটিংয়ের বিরুদ্ধে অননুমোদিত ব্রিফিং সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। আমি কখনো মন্ত্রিসভার সদস্যদের বিরুদ্ধে এমন আক্রমণ অনুমোদন দেইনি। পরে তিনি স্ট্রিটিংকে ফোনে সমর্থন জানান ও দুঃখ প্রকাশ করেন। তদন্তে জানা গেছে, এই ব্রিফিং ছিল একটি প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ। কারণ আশঙ্কা করা হচ্ছিল ২৬শে নভেম্বর বাজেটের পর কিয়ের স্টারমারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হতে পারে, যখন অর্থমন্ত্রী র?্যাচেল রিভস আয়কর বৃদ্ধি করে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করতে পারেন।
লেবারের জনপ্রিয়তা এখন ২০ শতাংশের নিচে, যা শত শত এমপি’র আসন হারানোর আশঙ্কা তৈরি করেছে। ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের এক সূত্র বলেছেন, কিয়ের জানেন, তিনি আসলে নেতৃত্বের যুদ্ধেই রয়েছেন। তবে তিনি পদত্যাগ করবেন না- তিনি লড়বেন। ওদিকে স্ট্রিটিং সাংবাদিকদের বলেন, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও আত্মঘাতী প্রচারণা। আমি কোনো নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জ করছি না। স্কাই নিউজকে তিনি কৌতুক করে বলেন, ‘না, আমি কিয়েরকে সরাতে যাচ্ছি না- লর্ড লুকান কোথায় জানি না, শেরগার হারানোর সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই, আর চাঁদে অবতরণ মিথ্যা বলেও বিশ্বাস করি না!’ তিনি আরও যোগ করেন, নিজ দলের এমপিদের ‘পশু’ বলা, কিংবা যারা সরকারের হয়ে কাজ করছে তাদের ‘হাঁটু ভেঙে দেয়া’- এসব আত্মবিনাশী আচরণ।
নাইজেল ফারাজ ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, আগামী জুলাইয়ের মধ্যে কিয়ের স্টারমার পদে থাকবেন না। তিনি মনে করছেন, স্কটল্যান্ড, ওয়েলস ও ইংল্যান্ডের স্থানীয় নির্বাচনে লেবার ও টোরি উভয়েই ভয়ানক ক্ষতির মুখে পড়বে। একাধিক লেবার এমপি ক্ষোভে বলেন, ‘১০ নম্বর সম্পূর্ণ দিশাহারা। নিজেরাই সংকট তৈরি করছে।’