সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়া গ্রুপ খুলে বিনিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। এ ঘটনায় সংঘবদ্ধ চক্রের মূলহোতাসহ দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- মূলহোতা ফারদিন আহমেদ ওরফে প্রতীক (২৫) ও সহযোগী মো. সাগর আহমেদ (২৪)। শুক্রবার এই তথ্য জানান সিআইডি’র বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান। তিনি বলেন, সিআইডি’র ঢাকা মেট্রো পূর্ব বিভাগের একটি আভিযানিক দল এলআইসি ইউনিটের প্রযুক্তিগত সহায়তায় গত ৬ই নভেম্বর ভোরে পঞ্চগড় জেলার সদর থানাধীন ধাক্কামারা এলাকা থেকে চক্রের মূলহোতা ফারদিন আহমেদ ওরফে প্রতীক (২৫)কে গ্রেপ্তার করে। পরবর্তীতে ফারদিনের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে একই টিম ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈল থানা এলাকা থেকে চক্রের সহযোগী মো. সাগর আহমেদ (২৪)কে গ্রেপ্তার করে।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, প্রতারক চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে টেলিগ্রাম অ্যাপে ‘বিদেশি বিনিয়োগ প্ল্যাটফরম’ নামে ভুয়া গ্রুপ খুলে অল্প সময়ে অধিক মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে বিনিয়োগে প্ররোচিত করতো। ভুক্তভোগীরা যখন গ্রুপে যুক্ত হতো তখন গ্রুপে কিছু সদস্য এখানে বিনিয়োগ করে কীভাবে লাভবান হয়েছে তা জানিয়ে কৃতজ্ঞতাস্বরূপ পোস্ট দিতো, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এসব ইতিবাচক সকল পোস্টই ছিল প্রতারণার ফাঁদ। এভাবে ভুক্তভোগীরা প্রলুব্ধ হয়ে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হতো এবং চক্রের ফাঁদে পড়তো। এরপর বিভিন্ন তৃতীয় ব্যক্তির নামে খোলা ব্যাংক ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে অবৈধভাবে টাকা লেনদেন করে আত্মসাৎ করতো। প্রতারণার শিকার বহু বিনিয়োগকারী এসব ভুয়া গ্রুপে অর্থ বিনিয়োগ করে ইতিমধ্যে সর্বস্ব হারিয়েছে। এমনকি যেসব অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে লেনদেন করা হতো, সেগুলোর মালিকরা অনেক সময়ই বিষয়টি না জেনে নিজেরাই অভিযুক্ত হয়ে পড়েন।
জসীম উদ্দিন খান বলেন, এরকম ঘটনায় পল্টন থানায় ৪ ও ৫ই সেপ্টেম্বর দুইটি পৃথক মামলা হয়। মামলা দু’টির তদন্তভার সিআইডি’র উপর ন্যস্ত হলে দ্রুততম সময়ে সিআইডি এই চক্রকে শনাক্ত করে এবং চক্রের ২ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। তদন্ত সূত্রে আরও জানা যায়, মূলহোতা ফারদিন টেলিগ্রাম গ্রুপগুলোতে সক্রিয় থেকে প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডে নেতৃত্ব দিতো। সে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে ৩০টিরও বেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) অ্যাকাউন্ট এবং সিমকার্ড নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখে প্রতারণার কাজে ব্যবহার করতো।
অন্যদিকে, তার সহযোগী সাগর আহমেদ জরড় নামে একটি ফেইক টেলিগ্রাম আইডি ব্যবহার করে অষবীধ ডরপশ নামীয় গ্রুপের অ্যাডমিন হিসেবে কাজ করতো, যার সদস্য সংখ্যা ছিল ৭ জন। তারা অনলাইন বিনিয়োগের নামে সাধারণ মানুষকে ফাঁদে ফেলে বিপুল অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। তদন্তে আরও জানা গেছে, প্রতারণার মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ নগদে রূপান্তরের জন্য তারা অভিনব কৌশল ব্যবহার করতো। ফারদিন আহমেদ বিভিন্ন গাড়ির শোরুম থেকে ব্যাংক লেনদেনের মাধ্যমে গাড়ি কিনে এক মাসের মধ্যে কম দামে বিক্রি করে কাগজে লোকসান দেখিয়ে নগদ অর্থ তুলে নিতো। এই পদ্ধতিতেই প্রতারণার টাকা ‘ক্যাশ আউট’ করা হতো। তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তার ফারদিন আহমেদ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারণার বিষয়টি স্বীকার করেছে। সে জানিয়েছে, তার নিয়ন্ত্রণাধীন অ্যাকাউন্টগুলোর মাধ্যমে প্রায় পাঁচ কোটি টাকারও বেশি অর্থ লেনদেন হয়েছে। প্রতারণা চক্রের অন্য সদস্যদের নাম, অ্যাকাউন্ট তথ্য ও অর্থের গন্তব্য উদ্ঘাটনের জন্য আটক দুই আসামিকে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদনসহ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। বর্তমানে মামলার তদন্ত কার্যক্রম সিআইডি’র ঢাকা মেট্রো পূর্ব বিভাগ পরিচালনা করছে এবং চক্রের বাকি সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।