নানা বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ দিনে ফোন আসে ২৫ হাজারের বেশি। এরমধ্যে নারী নির্যাতন, দুর্ঘটনা, মারামারি-সংঘর্ষ, জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ, অগ্নিকাণ্ড, বাল্যবিয়ের অভিযোগে কল আসে। সংস্থাটির তথ্যমতে, গত ১০ মাসে মারামারি-সংঘর্ষের ঘটনায় কল আসে ৭৯ হাজার ২৩৯টি। নারী নির্যাতনের অভিযোগের কলের সংখ্যাও কম নয়। চলতি বছরের গত ১০ মাসে ধর্ষণের শিকার হয়ে ৯৮৮ জন, ধর্ষণচেষ্টাকালীন ফোন কল ৫৫৭টি, যৌন হয়রানি ও সহিংসতায় ৯৮৭ জন, অন্যান্য সহিংসতার ঘটনায় ৪০১ জন, অপহরণ ৪৬ জন, আত্মহত্যার প্ররোচনায় ১০ জন, বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেতে ৩৬০ জন, হত্যার শিকার ৬৪৭ জন, ইভটিজিংয়ের শিকার ৭৯৩ জন, স্বামীর দ্বারা অত্যারিত ১৪ হাজার ৯২৮ জন, যৌতুকের জন্য নির্যাতনের শিকার ৩১৬ জন, মা-বাবার নির্যাতনের শিকার ৪৬৫ জন, এসিড সন্ত্রাসের শিকার ৯ জন ও অন্যান্য নির্যাতনের শিকার হয়ে ৫ হাজার ৮১০ জন নারী ফোন দিয়ে সেবা নিয়েছেন। তবে ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার প্রতিবন্ধী বা বাকপ্রতিবন্ধীদের জন্য একটি এসওএস অ্যাপস ৯৯৯-এ চালু হয়েছে। এটি পুরোপুরি কার্যকরী হলে বাকপ্রতিবন্ধীদের নিরাপত্তা বাড়বে। অ্যাপসটির মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ৫ সেকেন্ডের ভিডিও ধারণ হবে এবং ভিডিওটি ৯৯৯-এর কাছে চলে আসবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই জরুরি সেবার সঙ্গে পুলিশ বাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সম্পৃক্ততা রয়েছে। এই জরুরি সেবায় মানুষের আস্থা বাড়ছে। তবে, বর্তমানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা ওয়ার্কস্টেশন বাড়ানো এবং প্রয়োজনীয় জনবল ও প্রযুক্তি সহায়তার প্রয়োজন। তাহলে জাতীয় জরুরি সেবা আরও বৃদ্ধি পাবে। বর্তমানে মাত্র ৮০ জন কল টেকার এবং ২০ জন ডিসপ্যাচার দিয়ে অজস্র সংখ্যক জরুরি কল পরিচালনা করা হয়। কলের অনুপাতে জনবল ও ওয়ার্কস্টেশন কম হওয়ায় হিমশিম খেতে হচ্ছে। এদিকে অযাচিত, অপ্রয়োজনীয় কলে জরুরি কলগুলোর সেবা বিঘ্নিত হয়। তবে আগের তুলনায় এ ধরনের বিরক্তিকর কলের সংখ্যা কিছুটা কমেছে।
২০১৭ সালের ১২ই ডিসেম্বর জাতীয় জরুরি সেবার যাত্রা শুরু হয়। শুরুর পর থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬ কোটি ৬০ লাখ ৩৮ হাজার ৮৪৩টি জরুরি কল এসেছে। এরমধ্যে ২ কোটি ৯০ লাখ ৩৯ হাজার ২৪১টি কলে সেবা দেয়া হয়। সেবার হার ৪৩ দশমিক ৯৭। বাকি ৩ কোটি ৬৯ লাখ ৯৯ হাজার ৬০২টি কল জরুরি সেবার বাইরে হওয়ায় কলারকে সংশ্লিষ্ট বিভাগে যোগাযোগের পরামর্শ দেয়া হয়। ৯৯৯ দেশের যেকোনো জায়গায় ২৪ ঘণ্টায় নাগরিকের জরুরি মুহূর্তে ও প্রয়োজনে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও এম্বুলেন্স সেবা প্রদানে প্রস্তুত থাকে। ২৪ ঘণ্টায় তিন শিফটে কাজ করছেন সাড়ে চারশ’জন কর্মী। এখন একসঙ্গে ফোনদাতাদের ১০০টি ফোন কল গ্রহণ করতে পারে সংস্থাটি।
জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর গণমাধ্যম ও জনসংযোগ কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক আনোয়ার সাত্তার মানবজমিনকে বলেন, ৯৯৯-এর প্রতি জনগণের আস্থা বাড়ছে। দিন দিন বাড়ছে কলের সংখ্যা। আমাদের আলাদা জনবল-জনকাঠামো এখনো তৈরি হয়নি, এটি মন্ত্রণালয়ের কাজ। ৯৯৯-এর সক্ষমতা ও অতিরিক্ত ১০০টি ওয়ার্কস্টেশন বাড়ানোর প্রস্তাবনা রয়েছে। এগুলোর অনুমোদন এখনো যাচাই-বাছাইয়ের মধ্যে রয়েছে। বর্তমানে ১০০টি ওয়ার্ক স্টেশন রয়েছে। এরমধ্যে ২০টি আউটগোয়িং কলের জন্য রাখা হয়েছে। জনবল রয়েছে সাড়ে ৪০০ মতো। দেশের জনসংখ্যার অনুপাতে এই ৮০টি ওয়ার্ক স্টেশন নিয়ে সেবা দিতে অনেক সময় হিমশিম খেতে হয়। আমাদের প্রস্তাবনা রয়েছে আরও ১০০টি ওয়ার্ক স্টেশন বৃদ্ধির জন্য। নতুন একটি আলাদা ইউনিট ও ওয়ার্ক স্টেশন বৃদ্ধি হলে সেবার মান বাড়বে, জনগণও দ্রুত সেবা পাবে আমরাও সেবা দিতে পারবো।
তিনি বলেন, ২৪ ঘণ্টায় ২৫ হাজারের বেশি কল আসে। কখনো কখনো সেটি বেড়ে ২৬ হাজারেও পৌঁছায়। তারমধ্যে নারী নির্যাতন, সড়ক দুর্ঘটনা, মারামারি-সংঘর্ষ, জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ, অগ্নিকাণ্ড, এম্বুলেন্স সেবাসহ নানাবিধ কলগুলো পেয়ে থাকি। তিনি বলেন, আগের চেয়ে অযাচিত কলের সংখ্যা কমেছে। বর্তমানে অপ্রয়োজনীয় কলের সংখ্যা ৫৪ শতাংশে নেমে এসেছে। আগে যেটা একসময় ৬০-৭০ ভাগের উপরে ছিল। এবং ৪৬ শতাংশ কল ছিল প্রয়োজনীয়। আমাদের কাছে সেবা না চেয়ে অযাচিত যে ফোন কলগুলো এখনো আসছে তাতে আমরা বিরক্ত হচ্ছি সেটি নয়, তবে এটি আমাদের সেবাকে বিঘ্নিত করছে সন্দেহ নেই। যখন এই ফোনগুলো রিসিভ করা হয় তখন লাইন ব্যস্ত থাকে। এই সময়টাতে তো অগ্নিকাণ্ড বা অনেক বড় কোনো ঘটনা ঘটতে পারে। তাদেরকে আমরা এই মুহূর্তে সেবা দেবো কীভাবে? ফোন করে সেবা না চেয়ে উল্টাপাল্টা কথা গালাগাল করে এটাও বিভ্রান্তিকর। তিনি আরও বলেন, প্রথমদিকে এই ধরনের অযাচিত কলের সংখ্যা আরও অনেক বেশি ছিল। এখন অনেকটা কমেছে। এই বিষয়ে সবার সচেতনতা দরকার। একই নম্বর থেকে একাধিকবার ফোন আসলে তাদের কিছুদিনের জন্য ব্লক করে রাখা হয়। এর আগে তাদেরকে মেসেজ দিয়ে সতর্ক করা হয়। এই ধরনের অপরাধে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমানা এবং ৬ মাসের কারাদণ্ডের কথা বলা আছে।