সবজির অস্বাভাবিক দাম কমে বাজারে যা-ও বা একটু স্বস্তি ফিরেছিল, এর মধ্যে বাগড়া দিয়েছে হঠাৎ চড়ে যাওয়া পেঁয়াজের দাম। এক সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। প্রতি কেজি পেঁয়াজ এখন ১১০ থেকে ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে ভোক্তার সবজির স্বস্তি ম্লান হতে বসেছে।
রাজধানীর খুচরা বাজারে এক মাসের ব্যবধানে সবজিসহ কয়েকটি পণ্যের দাম ৭ থেকে সর্বোচ্চ ২৩৩ শতাংশ কমেছে। এতে বাজারে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসে। কিন্তু পেঁয়াজের চড়া দাম বিপত্তি বাধিয়েছে। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, পেঁয়াজ নিয়ে বড় ধরনের কারসাজি শুরু হয়েছে।
রাজধানীর রামপুরা, বাড্ডা, মহাখালী, জোয়ারসাহারাসহ বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শীতকালীন আগাম সবজির ব্যাপক সরবরাহ বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ডিম, মুরগিসহ বেশ কিছু পণ্যের দামও এখন নিম্নমুখী।
ব্রয়লার মুরগির দাম ১২ থেকে ১৩ শতাংশ এবং সোনালি মুরগির দাম ৭ থেকে ৮ শতাংশ কমেছে। ব্রয়লার মুরগি এখন ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা আর সোনালি মুরগি ২৬০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি। ফার্মের মুরগির ডিমের দাম প্রতি ডজন ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা।
বাড্ডা কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা মো. মাহাদী হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শীতকালীন সবজির সরবরাহ বাড়ায় সব ধরনের সবজির দাম কমে এসেছে।’
রামপুরা কাঁচাবাজারের ক্রেতা লিজা আক্তার ও মো. ফিরোজ কালের কণ্ঠকে বলেন, অনেক দিন পর সাধারণ মানুষ ব্যাগ ভরে সবজি কিনতে পারছে। এখন বেশির ভাগ সবজি ক্রেতার নাগালের মধ্যে। তবে হঠাৎ পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় সবজিতে বেঁচে যাওয়া টাকাটা আবার ওখানে চলে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ভলান্টারি কনজ্যুমারস ট্রেনিং অ্যান্ড অ্যাওয়্যারনেস সোসাইটির (ভোক্তা) নির্বাহী পরিচালক মো. খলিলুর রহমান সজল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি স্বাভাবিক নয়। পেঁয়াজের সরবরাহ সংকট দেখিয়ে দাম বাড়িয়ে সিন্ডিকেট মুনাফা লুটে নিচ্ছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বাজার তদারকির মাধ্যমে পেঁয়াজের এই মূল্যবৃদ্ধির প্রকৃত কারণ ভোক্তাদের জানাতে হবে। এই চক্রে জড়িতদের আইনের আওতায় আনারও ব্যবস্থা নিতে হবে।’
৫০% বাড়ল পেঁয়াজের দাম : সরবরাহ সংকটের অজুুহাতে দেশের বাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজ কেজি প্রতি ৪৭ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত দাম বেড়ে ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে দেশি পেঁয়াজের কিছুটা সংকট তৈরি হওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আমদানি শুরু হলে দাম নেমে যাবে।
তবে বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজারে পেঁয়াজের সংকট নেই, পুরনো সিন্ডিকেট আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। স্বস্তির বাজারকে নষ্ট করতে কারসাজি করে পেঁয়াজের দাম বাড়াচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের আড়তদার মো. জালাল উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ সংকট দেখিয়ে দাম বাড়ানো হচ্ছে। আড়তে পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।’ পেঁয়াজ আমদানিকারক ও শ্যামবাজার পেঁয়াজ আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল মাজেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এখন পেঁয়াজের সংকট চলছে। কৃষকের হাতে আর পেঁয়াজ নেই। এতে লাফিয়ে বাড়ছে দাম। ভারতে এখন পেঁয়াজ এখন মাত্র ১৫ টাকা কেজি। তাই দেশে পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে দ্রুত আমদানির বিকল্প নেই।’
উৎপাদন এলাকায়ও চড়া পেঁয়াজের দাম। পাবনা আঞ্চলিক প্রতিনিধি জানান, গত সপ্তাহে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দর ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকা। এখন দাম বেড়ে ১০৫ থেকে ১১০ টাকা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে পেঁয়াজের সবচেয়ে বড় অংশ উৎপাদন হয় পাবনায়।
রাজবাড়ী প্রতিনিধি জানান, রাজবাড়ীর পাইকারি ও খুচরা বাজারে হঠাৎ বেড়ে গেছে পেঁয়াজের দাম। গতকাল সকালে জেলার বিভিন্ন হাট-বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি মণ পেঁয়াজ তিন হাজার ৭০০ থেকে সর্বোচ্চ চার হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে খুচরা বাজারেও।