ঘটনাটি ঘটে বুধবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে। সেই অর্থে তখনো পুরোদমে জেগে ওঠেনি শহর ঢাকা। শুরু হয়নি অফিস-আদালতের কর্মচাঞ্চল্য। তাই মূল সড়কের পাশাপাশি এলাকানির্ভর সড়কগুলোতেও ছিল না যানবাহনের চাপ। এ সময় সেগুনবাগিচায় শিল্পকলা একাডেমির সামনের সড়কে চলছিল একটি প্রাইভেটকার। গাড়ির গতিসীমা খুব বেশি ছিল। গাড়িটি কাকরাইল যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাঁক নিতে হঠাৎ করেই উল্টোদিক থেকে উদয় হলো ঝড়োগতির এক অটোরিক্সা। গাড়িচালক আকস্মিক ব্রেক চাপার আগেই অটোরিক্সা এসে হুমড়ি খেয়ে পড়ল গাড়ির সম্মুখভাগে।
ভেঙে গেল গাড়ির এক পাশের হেডলাইট। দাগ পড়াসহ কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হলো বাম্পার। অন্যদিকে গাড়ির ধাক্কায় সামনের চাকা দুমড়েমুচড়ে উল্টে গেল ব্যাটারিচালিত রিক্সাটি। আহত হলেন সড়কে চলাচলের নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখানো রিক্সাচালক। এভাবেই নগরবাসীর জন্য নানা বিড়ম্বনার কারণে পরিণত হয়েছে অটোরিক্সা। প্রায়শই বাহনটির কারণে সড়কে সৃষ্টি হচ্ছে নানামুখী নৈরাজ্য।
বৃহস্পতিবার দুপুরেও সড়কে অটোরিক্সা চলাচলে নৈরাজ্যের দেখা মেলে। নিয়ম অনুযায়ী সড়কে দ্রুতগতির যান ডানদিকে এবং শ্লথগতির যান বাঁ পাশ দিয়ে চলাচল করার কথা। তবে এই নিয়মের তোয়াক্কা না করে তোপখানা সড়কে ডান পাশের লেন দিয়ে চলছিল দুই অটোরিক্সা। এর মধ্যে রীতিমতো বাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছিল একটি রিক্সা। আর অপর রিক্সাটি চলছিল পুলিশের গাড়ির সামনে দিয়ে। এই যখন অবস্থা তখন উল্টোদিকের পথের মুখে এলোপাতাড়িভাবে পার্কিং করে রাস্তায় জটলা সৃষ্টি করে রেখেছিল একঝাঁক অটোরিক্সা। যত্রতত্র এই অনাকাক্সিক্ষত পার্কিংয়ের দৃশ্য হরহামেশাই চোখে পড়ে।
এভাবেই ট্রাফিক ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে ব্যঙ্গ করে ‘বাংলার টেসলা’ নামে ডাকা বাহনটি। অন্যদিকে প্রায়শই সুযোগ পেলে মোটরসাইকেল থেকে গাড়ির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলে অটোরিক্সা। ফলে, কাঠামোর তুলনায় অতিরিক্ত গতির কারণে বাহনটি নিমেশেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নানামুখী দুর্ঘটনার কারণে পরিণত হয়। সবচেয়ে বেশি ঘটে উল্টে পড়ার ঘটনা। আহত হতে হয় যাত্রীসহ প্রশিক্ষণহীন নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করা চালককে। এছাড়া ব্যাটারিচালিত হওয়ায় বাহনটি চার্জ দিতে প্রচুর পরিমাণ বিদ্যুৎ লাগে; যা কিনা নেওয়া হয় অবৈধ সংযোগ থেকে। আরও আছে ঝামেলা। মেয়াদ শেষে বাহনটির ব্যবহৃত সীসা-এসিড ব্যাটারি নদী বা জলাশয়ে ফেলে দেওয়ার কারণে পরিবেশ দূষণ ও স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করে।
এমন বাস্তবতায় বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গল্লির এই নগরীর সড়কের শৃঙ্খলা ফেরাতে অটোরিক্সার নীতিমালা প্রণয়নের বিকল্প নেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিটি কর্পোরেশন, সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআরটিএসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরগুলোকে ভূমিকা রাখতে হবে। অবৈধভাবে সড়কে চলা পরিবহনটিকে নিবন্ধনের আওতায় এনে চালকদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। পাশাপাশি অটোরিক্সা বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীর জীবিকার অবলম্বন হওয়ায়, সেই বিষয়টিও ভাবতে হবে। তাই যথাযথ পরিকল্পনার ও নীতিমালার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী মোঃ জহিরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, ঢাকা গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে সরকারিভাবে অটোরিক্সার পরিবর্তে ই-রিকশা প্রচলনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) উদ্ভাবিত রিক্সাটি প্রচলনের প্রক্রিয়া চলছে। এটি সড়কে নামানোর আগে চালকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রাথমিকভাবে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের অধীন উত্তরা, ধানম-ি ও পল্টন এলাকায় এটি চলাচল করবে। এই ই-রিক্সা চলাচলের বিধিমালাও প্রস্তুত করছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। তবে ই-রিক্সা চালু করা হলে তখন পুরানো অটোরিক্সাগুলো সড়ক থেকে তুলে নেওয়াটা হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।