রাজধানীর বনানীর এইচবিআর টাওয়ার ও কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউর স্টার টাওয়ারে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে চলছে বেসরকারি প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠদান। পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ের পাশেই বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য চুক্তি হলেও শুরুর পরই মুখ থুবড়ে পড়েছে নির্মাণকাজ। এতে বারবার সময় বাড়িয়েও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি নিজস্ব স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি। এরই মধ্যে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের সরকার পতনের পর বিশ্ববিদ্যালয়টির কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ইফফাত জাহান ও বোর্ড অব ট্রাস্টিজের (বিওটি) সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান রায়হান আজাদ টিটুসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্যদের আর্থিক ও প্রশাসনিক অনিয়মের নানা অভিযোগ সামনে আসতে থাকে। এর মধ্যে বিওটির অপসারণ ও স্থায়ী ক্যাম্পাসের নিশ্চয়তাসহ বিভিন্ন দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের সাম্প্রতিক আন্দোলনের পেছনেও তাদের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ ছাড়াও বিভিন্ন খাতে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ (বিওটি) তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগী হলে পিঠ বাঁচাতে ইফফাত ও টিটু সম্প্রতি নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতৃত্বে পরিকল্পিতভাবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নামান। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাম্প্রতিক আন্দোলনে ছাত্রলীগের সম্পৃক্ততার কথা জানাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রও।
সাম্প্রতিক এ আন্দোলনে যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অপসারিত হওয়া শিক্ষক সাইয়েদ সরোয়ার মুগ্ধ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ ডিরেক্টর নজরুল ইসলামের সম্পৃক্ততার অভিযোগও উঠেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনিয়মের কারণে অপসারিত হওয়ায় মুগ্ধ বোর্ড অব ট্রাস্টিজ অপসারণে আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। তিনি টিটুর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। অন্যদিকে এমবিএ ডিরেক্টর নজরুল ইসলামের মামা নোয়াখালী-১ আসনের সংসদ সদস্য এইচ এম ইব্রাহিম। তিনি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালীন শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। শুধু তা-ই নয়, তিনি অর্থ ও হিসাব শাখার বরখাস্তকৃত পরিচালক শিপার আহমেদের আর্থিক দুর্নীতির অন্যতম সহযোগী বলেও অভিযোগ উঠেছে। স্পোর্টস ক্লাবের আহ্বায়ক থাকাকালীন সদস্যপদ বিক্রিসহ বিভিন্ন সামগ্রী ক্রয়েও অনিয়মের অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে নজরুল ইসলামের মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে কল কেটে দেন। এরপর আর সাড়া দেননি।
নিয়ম ভেঙে স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণে চুক্তি: নিয়ম অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নয়নকাজে খরচের পরিমাণ ৫ লাখ টাকার বেশি হলে উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করতে হয়। সেক্ষেত্রে অর্থ কমিটি, ক্রয় কমিটি ও ট্রাস্টি বোর্ডের অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু ২০২৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণে ৮ কোটি ৭২ লাখ টাকার কাজে দরপত্র আহ্বান না করেই চুক্তি করা হয়। ইফফাত জাহান ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের দায়িত্বে থাকাকালীন টিটুর সঙ্গে মিলে অর্থ কমিটি, ক্রয় কমিটি কিংবা বিওটির অনুমোদন ছাড়াই এই চুক্তি করেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইনফিকম এস এ কন্সট্রাকশন বিডির পরিচালক বর্তমান রাষ্ট্রপতির ছেলে আরশাদ আদনান। চুক্তির পর পরই প্রতিষ্ঠানকে ১ কোটি টাকা অগ্রিম দেওয়া হয়। ২০১৪ সালের ১৫ মার্চের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়কে কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার কথা ছিল ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের। সময়মতো ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজ বুঝিয়ে না দিলে কর্তৃপক্ষ কার্যাদেশ বাতিল করতে পারবে বলেও উল্লেখ ছিল চুক্তিতে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই চুক্তিতে অস্বাভাবিক খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে। এই কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী আমানত বা ফিক্সড ডিপোজিট (এফডিআর) ভেঙে প্রায় ৪ কোটি টাকা লোপাট করা হয়েছে। আবার ক্যাম্পাস নির্মাণের অল্প কিছু কাজ করেই ঠিকাদার পালিয়ে গেছেন। তখন ইফফাত ও টিটু কাজ শুরুর কথা বলে বিওটির মাধ্যমে আরও ৫০ লাখ টাকা আনেন। তার পরও কাজ শুরু হয়নি, চুক্তিও বাতিল হয়নি। নতুন করে নির্মাণকাজ শুরুর কথা জানতে পেরে অভিযুক্তদের নির্দেশে আগের চুক্তি বহালে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
আরও যত অনিয়ম: গত সাড়ে চার বছরে এফডিআর ভেঙে ও আর্থিক অনিয়মের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়টির অন্তত ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির বিভিন্ন অফিসের সাজসজ্জা, পরামর্শক নিয়োগ, ডিজিটাল মার্কেটিং, কনসালটেন্সি ফি, অফিস ডেকোরেশন, আসবাবপত্র ক্রয়, বিজ্ঞাপন ব্যয়, ডিজিটাল মার্কেটিং, প্রচার, গাড়ি ক্রয় ও রক্ষণাবেক্ষণ, জ্বালানি ক্রয়, গবেষণাগারের সামগ্রী ক্রয়, ক্লিনিং ও সিকিউরিটি বিল, ক্যাম্পাস উদ্বোধন অনুষ্ঠান, স্পোর্টস ক্লাবের সদস্যপদ বিক্রি, শিক্ষার্থী ভর্তি ফিসহ নানা খাতে এসব আর্থিক অনিয়ম করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক বিবরণী, অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা প্রতিবেদন ও সংশ্লিষ্ট হিসাবাদি বিশ্লেষণে এসব অনিয়মের তথ্য উঠে এসেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব অনিয়মের প্রায় সব কটিতেই জড়িত ছিলেন রায়হান আজাদ টিটু। এর আগে নানা অনিয়মের অভিযোগে তাকে সেখান থেকে অপসারণও করা হয়েছিল। জড়িতদের মধ্যে আরও ছিলেন সাবেক ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ড. শুভময় দত্ত এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব শাখার পরিচালক (সাময়িক বরখাস্তকৃত) শিপার আহমেদ। শিপার আহমেদের বিরুদ্ধে ভর্তি অফিস থেকে প্রায় ৮০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। এসব অনিয়মে তাদের সহায়তা করেছেন ভর্তি ও বিপণন শাখার সাময়িক বরখাস্তকৃত সহকারী পরিচালক তানভীর আহমেদ, ক্রয় বিভাগ থেকে পদত্যাগ করা সহকারী পরিচালক নাহিদ হাসান ও সহকারী পরিচালক জুবায়ের সিদ্দিক তানিন। এ ছাড়াও সহায়তাকারী ছিলেন এমবিএ প্রোগ্রামের অপসারিত শিক্ষক সাইয়েদ ফেরদৌস মুগ্ধ। আর কোষাধ্যক্ষ হিসেবে আর্থিক অনিয়ম সংগঠিত হওয়ার পেছনে ইফফাত জাহানের হাত রয়েছে।
জানা গেছে, বনানীতে বিশ্ববিদ্যালয় ভবনে টিটু ও তার পরিবারের চারটি রেস্টুরেন্ট ও ক্যান্টিন রয়েছে। এর মধ্যে একটি তারা ভাড়া দিয়ে টাকা নিচ্ছেন। বাকিগুলোর ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিল প্রতিষ্ঠান থেকে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই খাতে তাদের কাছে পাওনা রয়েছে ৫ কোটি টাকার ওপরে। এমন নানা অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে বর্তমানে বকেয়া রয়েছে সেখানকার শিক্ষকদের বেতন-ভাতাও। এক বছরের ভাড়া বকেয়া রয়েছে এইচবিআর টাওয়ারের। বকেয়া ভাড়ার কারণে ক্যাম্পাস ছেড়ে দেওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ২০২০ সাল থেকে প্রাইমএশিয়া ইউনিভার্সিটিতে কোনো ধরনের অডিট না হওয়া, আর্থিক বাজেট না করা, ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল না করার ফলে এসব অনিয়ম করার সুযোগ পেয়েছেন অভিযুক্তরা। এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) কোনো প্রতিবেদনও জমা দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয়টি। বাজেটসহ আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত করার দায়িত্ব কোষাধ্যক্ষের হলেও তিনি সেটি করছেন না। যে কারণে তাকে শোকজও করা হয়েছিল। কিন্তু কাজ হয়নি। উল্টো ইফফাত জাহান ও টিটুসহ অন্যদের বিভিন্ন অনিয়ম সামনে আনায় শিক্ষার্থীদের দিয়ে আন্দোলন করিয়ে উপাচার্য ড. শুভময় দত্তকে পদত্যাগ করানো হয়েছে।
যেভাবে আন্দোলনের পরিকল্পনা সাজানো হয়: সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ সামনের আসার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজকে অপসারণে তৎপর হয়ে ওঠেন ইফফাত ও টিটুসহ তাদের সহযোগীরা। এর অংশ হিসেবে পরিকল্পিতভাবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নামানোর কৌশল নেন তারা। এ জন্য ইফফাত জাহানের উত্তরার বাসায় গোপন সভা ডাকা হয়। সেখানে ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টরা ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও সাবেক কয়েকজন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ ও বিওটি অপসারণের দাবি চূড়ান্ত হয়। এর অংশ হিসেবে ইউজিসি ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেন তারা। তবে শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেও দাবি আদায় করতে না পেরে ভিন্ন পথে হাঁটেন তারা। উপাচার্যের পিএস নাঈমুল ইসলামের নামে গত ৬ জানুয়ারি বেলা সাড়ে ৩টায় একটি জরুরি সভা আহ্বান করা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত ভিসি ও ট্রেজারার, রেজিস্ট্রার, সব অনুষদের ডিন, সব বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, প্রক্টর ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সভা থেকে বিওটি অপসারণ ও স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের দাবির বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। এরপর ৭ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৯টায় ‘লং মার্চ টু শিক্ষা মন্ত্রণালয়’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এ সভায় সব বিভাগের সব শিক্ষার্থীকে আন্দোলনে যুক্ত করতে বিভাগীয় প্রধান, ডিন এবং প্রত্যেক ব্যাচ অ্যাডভাইজরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়, সিগনেচার শিট রাখতে বলা হয়। ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর বেলাল হোসেন ও কয়েকজন সহকারী প্রক্টর এটি সমন্বয় করেন। মূলত কোষাধ্যক্ষ সবাইকে চাপ দিয়ে সচিবালয়ের কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য করেন। এরপর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নেতৃত্বেই শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ে যান এবং ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করেন। একপর্যায়ে পুলিশের লাঠিচার্জের শিকার হন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচির সম্মুখ সারির নেতৃত্বে বেশিরভাগই ছিলেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। আন্দোলনের নামে সচিবালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা ও নাশকতা করে বর্তমান সরকার ও পুলিশ প্রশাসনকে ছাত্রদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে বিতর্কিত করতে চেয়েছিলেন তারা। সেখানে প্রাইমএশিয়া ইউনিভার্সিটি শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাদমান সারোয়ার, সাংগঠনিক সম্পাদক হাসিবুল হোসেন রেমন ওরফে রেমন খান এবং কর্মী মো. মুহতাসিম ফুয়াদ, এ আর মাহবুব চৌধুরী আবির, আরিয়ান চৌধুরী আরিফ, ইশতিয়াক আহমেদ, ফাহিম ভূঁইয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা রেমন ও কর্মী ফুয়াদের সঙ্গে কথা হয়েছে কালবেলার। এর মধ্যে রেমন আগে ছাত্রলীগ করলেও এখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত বলে দাবি করেছেন। আর ফুয়াদ কখনো ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না বলে দাবি করেছেন। এমনকি ইফফাত জাহানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনো অভিযোগ পাননি বলে দাবি তার।
ইফফাত ও টিটুর পরিচয়: ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পরিচালক হিসেবে তার নাম ছিল ইফফাত জাহান, অন্যদিকে প্রাইম ইন্স্যুরেন্সের পরিচালক হিসেবে ইফাত ওবায়েদ। তার পুরো পরিবারই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এই পরিচয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির কোষাধ্যক্ষ পদ বাগিয়ে নিয়েছেন, যদিও সেই নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বিগত সময়ে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য হতে অনেক দৌড়ঝাঁপও করেছেন। অন্যদিকে, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংকের ঋণখেলাপির অভিযোগে টিটুর বিরুদ্ধে দুদকে তদন্ত এবং তিনিসহ তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা চলমান থাকায় তিনি বর্তমানে পলাতক রয়েছেন। তবে সংশ্লিষ্টদের ধারণা, তিনি আড়ালে থাকলেও আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।
টিটুর আগের স্ত্রী রূপালী শেখ পরিবারের আত্মীয়। তার ভাই ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশেনের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামের মেয়ে অর্থাৎ সাবেক চিফ হিট অফিসার বুশরার স্বামী। টিটু এই ক্ষমতা ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। পরে রূপালীকে তালাক দিয়ে ফারহানা আক্তার নামে একজনকে বিয়ে করেন, যিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই শিক্ষার্থী। বিয়ের পর টিটুর নির্দেশে ফারহানাকে এখানে শিক্ষক করা হয়। স্বল্প সময়ে নিয়মের তোয়াক্কা না করে পদোন্নতিও দেওয়া হয়। ফারহানাও শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয়াদি ডিল করতে থাকেন। অভিযোগ রয়েছে, টিটু টাকা আত্মসাতের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ১৫টির মতো ক্লাব ও অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন গঠন করেন। এগুলোর গুরুত্বপূর্ণ সব পদে ছাত্রলীগ সমর্থকদের পদায়ন করতেন তার স্ত্রী। শর্ত ছিল—টিটু আর ইফফাতের কথার বাইরে যাওয়া যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ড থেকে এসব ক্লাবের নামে কত টাকা গেছে, স্পন্সর থেকে কত টাকা এসেছে তার কোনো হদিস নেই। ফলে ক্লাবের বিষয়ে অনেকেই লিখিত অভিযোগ দেন। তখন ক্লাবগুলো সাময়িক বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে আগের নেতারা ক্ষিপ্ত হন এবং স্থায়ী ক্যাম্পাস দাবির আন্দোলনে সম্পৃক্ত হন। যদিও কয়েকটি ক্লাব এরই মধ্যে খুলে দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে ইফফাত জাহান কালবেলাকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমি শুধু জানি তারা যৌক্তিক আন্দোলন করছে।’ স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ চুক্তির বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘সেখানে তো আমি একা সাইন করিনি। ভিসির ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে ছিলাম, তাই সাইন করেছি। সিদ্ধান্ত ছিল বিওটির। এর বেশি কিছু জানি না।’ আর্থিক বিশৃঙ্খলার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘আর্থিক প্রতিবেদন তো ২০১৭ সাল থেকেই দেওয়া হচ্ছে না।’ উল্টো এই প্রতিবেদন দেওয়ার কথা বললেও কর্তৃপক্ষ সেটি আমলে নেয়নি বলেও দাবি তার। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দিয়ে আন্দোলন করা এবং এতে যোগ দিতে শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ প্রয়োগের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এতকিছু জানি না।’ অভিযোগের বিষয়ে জানতে একাধিকবার রায়হান আজাদ টিটুর মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তার সাড়া মেলেনি।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়টির বিওটির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ‘আমি অবৈধ হলে ইফফাতসহ অন্যদের চাকরি কীভাবে হয়েছে? তাহলে তো সেগুলোও অবৈধ। আমার বিরুদ্ধে প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক টাকা নেওয়ার অভিযোগও যদি কেউ প্রমাণ করতে পারে, আমি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করব। মূলত, আমরা যখন অভিযুক্তদের দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে যাব, তখনই শিক্ষার্থীদের দিয়ে তারা আন্দোলন শুরু করে দিল।’
তিনি বলেন, ‘আমি স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য টাকা দেব। নতুন ট্রাস্টি এলে তারাও দেবে। টাকার সমস্যা হবে না। কিন্তু তারা আইনি নোটিশ পাঠিয়ে এই কাজ শুরু করতে দিতে চায় না। সেই চুক্তি ও কাজ বাতিল করে আমরা নতুন করে সবকিছু শুরু করব। শুধু একটু ধৈর্য ধরতে হবে।’