সরকারি-বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল গত রবিবার প্রকাশিত হয়েছে। এতে পাঁচ হাজার ৩৮০ পরীক্ষার্থী ৩৭টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে ৩০৮ জন মুক্তিযোদ্ধা ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটায় প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।
ফলাফলের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৯৪ শতাংশ সাধারণ আসনের বিপরীতে আবেদন করেছিল এক লাখ ৩৩ হাজার ৩৭৪ জন। পাস করে ৫৯ হাজার ৫৫৪ জন। এর মধ্যে সরকারি মেডিক্যালে ভর্তির জন্য মেধার ভিত্তিতে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত পাঁচ হাজার ৭২ জন।
অন্যদিকে বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের ৫ শতাংশ কোটা বা ২৬৯ আসনে আবেদন করেন ৬৮৬ জন। এদের মধ্যে পাস করেন ১৯৩ জন।
পাস নম্বর ৪০ নম্বরও পাননি ৪৯৩ জন। এতে এখনো আসন ফাঁকা রয়েছে ৭৬টি, যা এ কোটার ২৮ শতাংশ। আশঙ্কা করা হচ্ছে, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পাস করা শিক্ষার্থীদের অনেকে তথ্য যাচাই-বাছাইয়ে বাদ পড়তে পারেন।
এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে যাঁদের বয়স ৬৭-৬৮ বছর, তাঁদের ভর্তিযোগ্য সন্তান থাকার সম্ভাবনা খুব কম। সেখানে যদি কোনো ত্রুটি ধরা পড়ে, তাহলে সেটা দেখা হবে।
তিনি বলেন, কোটা বাতিলের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত থেকে যে রায় দেওয়া হয়েছিল, সেখানে মূল পরিবর্তন হলো নাতি-নাতনির বদলে সন্তানের কথা বলা হয়েছে। অতএব, কোটার বিষয়টিতে ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রে এটি একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত। এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষাও প্রচলিত আইন ও বিধি অনুযায়ী হয়েছে। তার পরও এটা যাচাই করা হবে।
ফলাফলের তথ্য বিশ্লেষণে আরো দেখা যায়, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী (পার্বত্য জেলার উপজাতীয় এবং অ-উপজাতীয় প্রার্থী, অন্যান্য জেলার উপজাতীয় প্রার্থী) ০.৭২ শতাংশ বা ৩৯টি আসনের বিপরীতে আবেদন করেন এক হাজার ২০১ জন। পাস করেন ৩৪৮ জন। অর্থাত্ প্রতি ৯ জনে একজন সরকারি মেডিক্যালে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন।
কম নম্বর পেয়েও ভর্তির জন্য নির্বাচিত
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিত্সা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. রুবীনা ইয়াসমীন কালের কণ্ঠকে বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা ১০০ নম্বরের মধ্যে ৪০ নম্বর পেয়েও প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। কারণ তাঁদের আসন এখনো ফাঁকা। অনেকে বেশি নম্বরও পেয়েছেন। সবোঁচ্চ কত পেয়েছেন, এটা জেনে বলতে হবে।
তিনি বলেন, ‘এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় কোটা থাকবে কি থাকবে না—এ সিদ্ধান্ত সরকারের, আমাদের নয়। ভর্তির বিজ্ঞপ্তির সময় কোটার বিষয় উল্লেখ ছিল, সেটিও সরকারের সিদ্ধান্তে। যেহেতু বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, আমরা তাঁদের তথ্য যাচাই করব। এই যাচাই প্রতিবছরই হয়ে থাকে। আগামী ২৭, ২৮ ও ২৯ জানুয়ারি বিষয়টি যাচাই করা হবে। যাচাই শেষে বলা যাবে, প্রকৃত অর্থে কতজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান।’
এদিকে কোটায় আবেদনকারীদের মধ্যে মেধাবীদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম থাকায় অনেকে ১০০ নম্বরের মধ্যে ৪০ নম্বর পেয়ে সরকারি মেডিক্যালে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। সাধারণ আসনের শিক্ষার্থীরা ৭৩ নম্বর পেয়েও প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হননি। এ নিয়ে গতকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে সমালোচনা করতে দেখা গেছে। প্রশ্ন উঠেছে, চাকরির ক্ষেত্রে কোটা থাকবে, কিন্তু সেটি মেডিক্যালে ভর্তির ক্ষেত্রে কেন? অনেকের প্রশ্ন, দেশ স্বাধীন হওয়ার ৫৪ বছর পর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান আসে কোত্থেকে?
কম নম্বর পেয়েও ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছেন—এমন বক্তব্য সমালোচনা করছেন কেউ কেউ। প্রকাশিত ফলকে ‘বৈষম্যমূলক’ দাবি করে রবিবার রাতেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিক্ষোভ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের একদল শিক্ষার্থী। তাঁরা ফল বাতিলের দাবি তোলেন।
এ বছর এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় পাস করেছেন ৬০ হাজার ৯৫ জন শিক্ষার্থী। পাসের হার ৪৫.৬২। গত রবিবার স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ বছর ৩৭টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজের পাঁচ হাজার ৩৮০টি আসনে এবং ৬৭টি অনুমোদিত বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের ছয় হাজার ২৯৩টি আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে।
বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত বছরের ২৩ জুলাই প্রকাশিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের স্মারক অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকবে। এই আসন শূন্য থাকলে মেধাক্রম অনুযায়ী পূরণ করা হবে।