কবি, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও উইলস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ আল ফারুক। ১৯৯৬ সালের ৭ ডিসেম্বর তিনি গুলশান থানাধীন প্লট নম্বর ৩, ব্লক-এনডব্লিউ (আই) রোড নম্বর ৫৪-এ ১৯ কাঠা ১৩ ছটাকের প্লট কেনেন। সেখানে ছয়তলা ইমারত তৈরি শুরু করেন তিনি। তখন মো. সিরাজুল হককে ভুয়া জমির মালিক সাজানো হয়।
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক মো. শফিউল আজম খান বলেন, ভুয়া দলিলদাতা সিরাজুল হক নিজে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।
২০১৭ সালের ৪ জানুয়ারি সৈয়দ আল ফারুক বাদী হয়ে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় মামলা করেন। সেখানে তিনি অভিযোগ করেন, আসামিরা ভুয়া দলিলপত্র খাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে দাতা, গ্রহীতা ও শনাক্তকারী সেজে তার মালিকানাধীন গুলশান এনডব্লিউ (আই) ব্লকের ৫৪ রোডের ৩ নম্বর প্লটটি দখলের পাঁয়তারা করছে। তদন্ত শেষে গত ৫ ডিসেম্বর সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক মো. শফিউল আজম খান আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামিরা দীর্ঘদিন ধরে জমির দালালির কাজ করেন। ২০১২ সালে মো. মিজানুর রহমান গুলশান এলাকায় জমি কিনতে চান। পরে মিজানুরের সম্বন্ধীর ছেলে মামুন তাঁর পক্ষে প্লটটি কিনতে আব্দুল গনি খোকার মাধ্যমে প্রস্তাব দেন।
দালালরা জালিয়াতির মাধ্যমে প্লটের কাগজপত্র তৈরি করে। তারা সিরাজুল হকের কাছে প্রস্তাব দেয়, প্লটটির মূল মালিক সেজে মিজানুর রহমানের বরাবরে দলিল করে দিলে সবাই আর্থিকভাবে লাভবান হবো। পরে মো. সিরাজুল হককে ভুয়া আব্দুল মালেক সাজিয়ে পাসপোর্ট, জন্ম নিবন্ধন তৈরি করে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ২০১২ সালের ২ অক্টোবর বায়না দলিল এবং জেনারেল পাওয়ার অব এটর্নি দলিল মূলে গ্রহীতা মো. মিজানুর রহমান বরাবরে দলিল দুটি রেজিস্ট্রি করে দেন। জাল দলিল দুটি রেজিস্ট্রি শেষে আসামিরা দলিল গ্রহীতা মিজানুর রহমানের বাসায় যান। মো. মিজানুর রহমান আসামি খোকার হাতে সাড়ে তিন কোটি টাকা বুঝিয়ে দেন। আসামি মিজানুর রহমানের প্লটটি দখলে নিয়ে রাজউকের প্ল্যান অনুযায়ী ছয়তলা বাড়ি বানিয়ে পরিবারসহ থাকছেন। এ ছাড়া আসামি মালেক নিজে অপরাপর আসামির সহায়তায় একাধিক ব্যক্তির নিকট একাধিক দলিল সৃজন করে দেন মর্মে তদন্তকালে দেখা যায়।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, মো. আব্দুল মালেক গুলশান থানাধীন ১৯ কাঠা ১৩ ছটাক জমির প্লট বেচার ঘোষণা দেয় এবং দাম নির্ধারণ করেন ৬৪ লাখ টাকা। ১৯৯৬ সালের ৭ ডিসেম্বর বাদী সৈয়দ আল ফারুকের কাছে থেকে আব্দুল মালেক ৬৩ লাখ ৯৫ হাজার টাকা নেন। পরে বায়না দলিল ও অপ্রত্যাহারযোগ্য আমমোক্তারনামা দলিল সম্পাদন ও রেজিস্ট্রি দিয়ে প্লটটির সব মূল দলিলপত্র তাঁর কাছে হস্তান্তর করে এবং সম্পত্তির খাসদখল বুঝিয়ে দেন। ১৯৯৯ সালের ৭ জানুয়ারি তাঁকে আমমোক্তারনামা দিতে রাজউকের চেয়ারম্যান ও পরিচালক (এস্টেট) দপ্তরে আবেদন করা হয়। প্লটটিতে ছয়তলা ইমারত নির্মাণের অনুমতি দেয় রাজউক। এই সম্পত্তি সৈয়দ আল ফারুক তাঁর কম্পানির সহযোগী প্রতিষ্ঠান ট্রিপল-এ লিমিটেডের বরাবরে হস্তান্তর করতে ২০০১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর রাজউক বরাবরে অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন। তখন আব্দুল মালেক প্রতারণার মাধ্যমে ফারুকের আমমোক্তারনামা বাতিল করেন। একই সঙ্গে খায়রুল কবির খোকনকে আমমোক্তারনামা দেন। পরবর্তী সময়ে আব্দুল মালেক আমমোক্তারনামা দলিল পেতে আবেদন করলে রাজউক দপ্তরের আইন উপদেষ্টা সিগমা হুদা একটি প্রতিবেদন দেন। যেখানে বলা হয়, আব্দুল মালেক বাদী সৈয়দ আল ফারুককে আমমোক্তার নিয়োগ করেছেন, যা রাজউক কর্তৃক ১৯৯৯ সালের ১১ মে অনুমোদিত হয়েছে। তাই এই আমমোক্তারনামা দলিল আদালতের আদেশ ছাড়া বাতিল করা যাবে না এবং খায়রুল কবীর খোকনের আমমোক্তারনামা দলিল গ্রহণ করা যাবে না। এরই মধ্যে জনৈক জাহিদ হোসেন শোভা জালিয়াতির মাধ্যমে মূল লিজ গ্রহীতা মোহাম্মদ ঈসা পিএসপির আমমোক্তার সেজে একটি আমমোক্তারনামা দলিল সৃজন করে দলিল রাজউক দপ্তরে দাখিল করায় বাদীর ট্রিপল-এ লিমিটেডে প্লটটির হস্তান্তর প্রক্রিয়া স্থগিত হয়। ২০১২ সালের ১৩ ডিসেম্বর রাত ৮টার দিকে মিজানুর রহমানের কতিপয় সন্ত্রাসী তাঁর নামে চার-পাঁচটি সাইন বোর্ড লাগিয়ে দেয় এবং প্লটটি অবৈধ ও বেআইনিভাবে দখলে নিয়ে তাঁকে (ফারুক) উচ্ছেদ করে।
মামলার বাদী সৈয়দ আল ফারুক বলেন, মুন গ্রুপের মিজানুর মুখোশধারী ভূমিদস্যু। তিনি জোরপূর্বক আমার জমি দখলে নিয়েছেন। রাজউক কর্তৃক এ জমি থেকে তাকে উচ্ছেদ করা হোক। সেই সঙ্গে জমি আমার দখলে বুঝিয়ে দেওয়া হোক।