Image description
আ.লীগ সরকারের আমলে ব্যয় ছিল ৪২৮২.৭৬ কোটি টাকা, কমে দাঁড়িয়েছে ৪০৬৮.২২ কোটি টাকা * বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা ঘণ্টায় ৮ টিইউজ থেকে ৩৫ টিইউজ বাড়ার আশা |

মোংলা বন্দরে দুটি কনটেইনার জেটি নির্মাণের এক প্রকল্পে ব্যয় কমানো হলো ২১৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ওই প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪২৮২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। অন্তর্বর্তী সরকার ওই ব্যয় কমানোয় এখন খরচ দাঁড়িয়েছে ৪০৬৮ কোটি ২২ লাখ টাকায়। প্রকল্পটি হচ্ছে-‘মোংলা বন্দরের সুবিধাদির সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন’। ব্যয় কমানোর পর প্রকল্পটি সম্প্রতি অনুমোদনের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) পাঠিয়েছে নৌ পরিবহণ মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানতে চাইলে নৌ পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন যুগান্তরকে বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর সন্দেহভাজন প্রকল্পগুলো পুনরায় মূল্যায়ন করতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছি। অবাঞ্ছিত ব্যয় কমাতে বলেছি। এর একটি হচ্ছে মোংলা বন্দরের সুবিধাদি সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন প্রকল্প। আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির মাধ্যমে এর ব্যয় কমানো হয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমানে মোংলা বন্দর সক্ষমতার চেয়ে কম ব্যবহার হচ্ছে। এ দুটি জেটি নির্মাণ হলে জাহাজ চলাচল বাড়বে। বন্দরের সক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহার হবে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এ প্রকল্পের আওতায় মোংলা বন্দরে ১০ ও ১১ নম্বর জেটি নির্মাণের কথা রয়েছে। জেটি দুটি নির্মিত হলে গ্যান্ট্রি ক্রেনের মতো আধুনিক সরঞ্জামের মাধ্যমে বিদেশি জাহাজ থেকে পণ্যবাহী কনটেইনার লোড ও আনলোড করা যাবে। প্রতি ঘণ্টায় ৩৫ টিইউজ কনটেইনার (২০ ফুট দৈর্ঘ্যরে এক কনটেইনার এক টিইউজ) হ্যান্ডলিংয়ের সক্ষমতা অর্জন করবে। তারা জানান, বর্তমানে মোংলা বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের জন্য কোনো বিশেষায়িত জেটি নেই। বর্তমানে যে পাঁচটি জেটি আছে, সেগুলো পুরোনো এবং লোড বিয়ারিং ক্যাপাসিটি নেই। গ্যান্ট্রি ক্রেনের মতো আধুনিক যন্ত্রপাতি সেখানে ব্যবহারের সুযোগ নেই। ফলে এখানে কনটেইনারবাহী জাহাজ খুব একটা আসে না। যেগুলো আসে, তাদের ক্রেন দিয়ে কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা হয়। এতে প্রতি ঘণ্টায় মাত্র ৭-৮ টিইউজ কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা যায়। এতে জাহাজের টার্ন এরাউন্ড সময় বেশি । এতে আমদানি-রপ্তানিকারকদের ব্যয় বাড়ছে।

সূত্র জানায়, চীনের ঋণ সহায়তায় মোংলা বন্দরের সুবিধাদির সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন প্রকল্পটি ২০২৩ সালে একনেক সভায় তোলা হয়। তখন ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪২৮২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এরপর সেটি খুব একটা এগোয়নি। অন্তর্বর্তী সরকার প্রকল্পটি পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সাত সদস্যের কমিটি গঠন করে। ওই কমিটি প্রকল্পের ব্যয় কমিয়ে তা বাস্তবায়নের সুপারিশ করে।

সূত্র আরও জানায়, প্রকল্পের আওতায় ৩৬৮ মিটার দৈর্ঘ্যরে দুটি জেটি, লোড ও আনলোড কনটেইনার রাখার জন্য পৃথক দুটি ইয়ার্ড ও বিপজ্জনক পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের জন্য আলাদা জেটি নির্মাণের কথা রয়েছে। এছাড়াও গ্যান্ট্রি ক্রেনসহ বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম সংগ্রহ করা হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এ প্রকল্পের মোট চার হাজার ৬৮ কোটি ২২ লাখ টাকা ব্যয়ের মধ্যে তিন হাজার ৫৯২ কোটি ৮৯ লাখ টাকা চীন ঋণ দেবে। বাকি ৪৭৫ কোটি ৩২ লাখ টাকা দেবে বাংলাদেশ সরকার। প্রকল্প থেকে বেশকিছু অংশ বাদ দেওয়া হয়েছে, যেগুলো অপ্রয়োজনীয় ছিল। এছাড়া প্রয়োজনীয় কিছু অংশে কাটছাঁট করা হয়েছে। গাড়িসহ বিভিন্ন ধরনের সুবিধাদি বাদ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ডলারের দাম বাড়লেও তা সমন্বয় করা হয়নি। এসব কারণে ব্যয় কমেছে ২১৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।

বর্তমানে মোংলা বন্দরে পাঁচটি জেটি রয়েছে। পিপিপির আওতায় গত সরকারের সময় আরও দুটি জেটি নির্মাণ শুরু হয়। কিন্তু বর্তমানে নির্মাণ কাজ মন্থরগতিতে চলছে। জেটি দুটি সাইফ পাওয়ারটেক নির্মাণ করছে। এছাড়া ভারতের ঋণ সহায়তায় আলাদা দুটি জেটি নির্মাণের কথা থাকলেও সেগুলোর ব্যয় বেড়ে গেছে। ওই প্রকল্পটির ব্যয় পুনর্মূল্যায়ন করা হচ্ছে।