গুমের সঙ্গে নিজেদের সংশ্লিষ্টতা লুকাতে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই) গত ৫ আগস্টের পর ‘আয়নাঘরের’ প্রমাণাদি নষ্ট করেছে বলে জানিয়েছে গুমের ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিশন। সোমবার (২০ জানুয়ারি) গুম কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদনের একটি অংশ প্রকাশ করেছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
বিগত সরকারের আমলের গুমের ঘটনা তদন্তে অন্তর্বর্তী সরকার গত ১৫ সেপ্টেম্বর গুম তদন্ত কমিশন গঠন করে। ২৬ সেপ্টেম্বর কমিশন ডিজিএফআই কার্যালয়ের ভেতরে জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল (জেআইসি) পরিদর্শন করে। তখন মেজর জেনারেল মুহাম্মদ ফয়জুর রহমান ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালক ছিলেন। পরে ১৭ অক্টোবর তাকে বদলি করা হয়।
তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘৫ আগস্টের পর ডিজিএফআই সদর দপ্তরে ইন্টারোগেশন সেলের আংশিক পরিবর্তন করা হয়েছে, দেওয়ালে রং করা হয়েছে, যেখানে বন্দিরা অনেক কিছু লিখেছিলেন বলে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। কিছু প্রমাণ আমাদের পরিদর্শনের আগের দিনই নষ্ট করা হয়। পরিদর্শনের কথা জানানোর পরও আমরা পরিদর্শনের সময় দেওয়ালে কাঁচা রং দেখতে পেয়েছি। ভেজা রং এবং অসম্পূর্ণ কাঠামোগত পরিবর্তন স্পষ্টই তাড়াহুড়ো করে অপরাধ গোপনের চেষ্টার ইঙ্গিত দেয়।’
এতে বলা হয়, ‘যদিও তৎকালীন ডিজি শক্ত যুক্তি দিয়েছিলেন যে তিনি তার মেয়াদের আগে সংঘটিত অপরাধের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন না। প্রমাণ নষ্টের ক্ষেত্রে তার এমন তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দায়মুক্তির সংস্কৃতির জবরদস্তিমূলক ক্ষমতার প্রকাশ। আগেকার অপরাধীদের রক্ষা করার জন্য তার এমন উদ্যোগ ছিল ব্যক্তিগত স্বার্থে এবং পেশাগত সততার বিরুদ্ধে।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘শেখ হাসিনার শাসনামলে নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে দায়মুক্তির সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বেসামরিক ও সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমাদের আলোচনায় এটা স্পষ্ট যে তাদের বেশিরভাগই নিজেদের অপরাধের জন্য কখনও জবাবদিহি করবেন বলে আশা করেননি। তারা অবশ্য অপরাধকে অপরাধ হিসেবেও দেখেননি।’
নিরাপত্তা বাহিনী সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘উদাহরণ হিসেবে সন্ত্রাসী বলে অভিযুক্তদের গুম করা তুচ্ছ ঘটনা হিসেবে কমিশনের মনোযোগ আকর্ষণের বিষয় নয় বলে উপেক্ষা করা হয়। একইভাবে হেফাজতে নির্যাতনকে অপরাধ দমনে অপরিহার্য ভেবে স্বাভাবিক বিষয় হিসেবে বলা হয়েছে।’
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘প্রমাণ নষ্ট করার এবং অসহযোগিতার এমন ধরন শুধু ডিজিএফআই নয়, অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীগুলো গত ১৫ বছর ব্যবহার করেছে। এটি শুধু গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত যারা ক্ষমতায় ছিলেন এবং নিজেদের অপরাধ লুকাতে চেয়েছিলেন তারাই নন, পরবর্তীতে যারা বিভিন্ন শীর্ষপদে বসেছেন তারাও করেছেন।’
গুম ও নির্যাতনের শিকার বেশ কয়েকজনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার বর্ণনাও দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।