সাবেক সংসদ সদস্যদের (এমপি) জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা ৩০টি বিলাসবহুল গাড়ি নিয়ে চলমান বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। এসব গাড়ির শুল্কমুক্ত সুবিধা বাতিল হলেও এগুলোর নিলাম মূল্য বাবদ ১৭৫ কোটি টাকা রাজস্ব দাবি করেছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। এই রাজস্ব ও বন্দর চার্জ পরিশোধের দাবিই এখন সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরে (ডিওটি) গাড়িগুলো হস্তান্তরের সরকারি নির্দেশের পথে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে দুইবার নিলাম নিষ্ফল হওয়ার পর সরকারের বিশেষ সিদ্ধান্তও আপাতত স্থগিত।
গত মাসের শেষ দিকে সরকার সাবেক এমপিদের এই ৩০টি গাড়ি সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরে (ডিওটি) হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে লিখিত নির্দেশও আসে। তবে সম্প্রতি এনবিআর আরেকটি চিঠিতে সেই আদেশ স্থগিত করে দেয়। এনবিআরের স্থগিতাদেশের পরই সামনে চলে আসে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের শুল্ক ও চট্টগ্রাম বন্দরের ডেমারেজ ও বন্দর চার্জ পরিশোধের বিষয়টি।
কাস্টমসের দাবি, এই বিলাসবহুল গাড়িগুলো নিলামে বিক্রি হলে তারা প্রায় ১৭৫ কোটি টাকা রাজস্ব পেত। কাস্টম কর্তৃপক্ষ এখন এই অর্থ সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরের কাছে দাবি করেছে। একই সঙ্গে বন্দরের চার্জ ও ডেমারেজও পরিশোধ করতে হবে। এই আর্থিক দাবির কারণে গাড়িগুলো রাষ্ট্রায়ত্ত যানবাহনে যাওয়ার রাস্তা আপাতত বন্ধ।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপকমিশনার (নিলাম) মো. রাসেল আহমেদ বলেন, এমপিদের জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা ৩০টি গাড়ি রাষ্ট্রায়ত্ত যানবাহন অধিদপ্তরে হস্তান্তরের চিঠি পেয়েছি। পরে সেই চিঠির আদেশ স্থগিত করে আরেকটি চিঠিও পেয়েছি। শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা ৩০টি গাড়ি রাষ্ট্রায়ত্ত যানবাহন অধিদপ্তরে যাওয়ার প্রক্রিয়া আপাতত বন্ধ। তিনি যোগ করেন, এখানে আইনগত কিছু বিষয় রয়েছে। নিয়ম ও বিধি অনুসারে শুল্ক ও বন্দর চার্জ পরিশোধ করতে হবে, অন্যথায় গাড়িগুলো সরকারের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করতে হবে।
এর আগে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি গাড়িগুলোর ই-নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু একটি সিন্ডিকেট কারসাজি করে নামমাত্র দর দিয়ে (১০ কোটি টাকা মূল্যের গাড়ির দাম মাত্র ৫০ হাজার থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত) এগুলো হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। প্রথম নিলামে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা ২৪টি বিলাসবহুল গাড়িসহ মোট ৪৪টি গাড়ি নিলামে দেয় কাস্টম হাউস।
নিলামে কাস্টম কর্মকর্তারা দেখেন, ১০ কোটি টাকার বেশি দামের ব্র্যান্ডের গাড়ির দাম বলা হচ্ছে নামমাত্র। কোনো কোনো গাড়ির দাম দেওয়া হয়েছে মাত্র ৫০ হাজার টাকা। নিলামের শর্ত অনুযায়ী, ভিত্তিমূল্যের ৬০ শতাংশ পূর্ণ না হলেও দ্বিতীয় নিলামে প্রথম নিলাম থেকে সামান্য বেশি দর দিলেই গাড়িগুলো বিক্রি হয়ে যেত। এই সুযোগ কাজে লাগাতে চেয়েছিল সিন্ডিকেট। কারসাজি আঁচ করতে পেরে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস এবং এনবিআর নিলাম কার্যক্রম স্থগিত করে এবং সরকারি দপ্তরে হস্তান্তরের উদ্যোগ নেয়।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের ফলে দ্বাদশ সংসদের সাবেক সদস্যরা এসব গাড়ি শুল্কমুক্ত সুবিধায় খালাস করতে পারেননি। সংসদ ভেঙে দেওয়ায় ‘কপাল পুড়েছে’ ওই সাবেক এমপিদের। গাড়িগুলোর মধ্যে রয়েছে ২৬টি টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার এবং চারটি টয়োটা হ্যারিয়ার। এর মধ্যে ২০২৪ সালে জাপানে তৈরি ৩৩৪৬ সিসি ল্যান্ড ক্রুজার জেডএক্স মডেলের ব্র্যান্ড নিউ গাড়ি রয়েছে ২৪টি, যার প্রতিটির সংরক্ষিত মূল্য প্রায় ৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। এগুলো আমদানি করেছিলেন সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক এমপি তারানা হালিম এবং মুহাম্মদ সাদিক, এ বি এম আনিসুজ্জামান, মজিবুর রহমান, জান্নাত আরা হেনরী, মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, সানজিদা খানম, এস এম কামাল হোসেন, মো. আসাদুজ্জামানসহ আরো কয়েকজন সাবেক সংসদ সদস্য।