ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এরই মধ্যে ২৩৭ আসনে দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে বিএনপি। ফাঁকা রাখা হয়েছে ৬৩টি আসন। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এর মধ্যে বিএনপির প্রার্থীদের জন্যও বেশ কিছু আসন রয়েছে। বাকি ৩৫-৪০টি আসন শরিকদের জন্য রেখেছে দলটি। অবশ্য সেটা মূলত নির্ভর করবে বিএনপির নেতৃত্বাধীন নির্বাচনী জোটের আকার কেমন হয়, তার ওপর। হাতেগোনা কয়েকজন বাদে জোট শরিকের অধিকাংশকেই এখন পর্যন্ত মনোনয়নের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়নি। সে কারণে জোটের প্রার্থীরা এক ধরনের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। বিএনপির প্রার্থিতা ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচনের মাঠে পূর্ণ উদ্যমে কাজ করতে দ্রুতই মনোনয়ন নিশ্চয়তা চান তারা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, মিত্রদের জন্য আসন ছাড়ের ক্ষেত্রে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী দলের প্রার্থী কারা, সেটি বিবেচনায় রেখেছে বিএনপি। এ ক্ষেত্রে সংশোধিত আরপিওর খসড়াও বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। সে হিসেবে বেশিরভাগ আসনে মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে পরীক্ষিত জোটভুক্ত দলের শরিক নেতারা, যারা ইমেজসম্পন্ন এবং বিজয়ী হয়ে আসার মতো, তাদের ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। জানা গেছে, আসন বণ্টনের ব্যাপারে মিত্রদের প্রার্থী তালিকা নিয়ে শিগগির আলোচনায় বসবে বিএনপি। তবে দিনক্ষণ এখনো ঠিক হয়নি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকের অভিমত, নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আসার মতো বিএনপি জোটের প্রভাবশালী প্রার্থীর সংখ্যা খুব বেশি নয়। তাই এটা নিয়ে বিএনপিকে খুব বেশি চ্যালেঞ্জে পড়তে হবে না।
এদিকে জোটগতভাবে বণ্টনের পর বাকি আসনে দলের অবশিষ্ট ত্যাগী নেতাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে। এর মধ্যে এমন কিছু আসন এখনো ফাঁকা রাখা হয়েছে, যেখানে একাধিক যোগ্য প্রার্থীর মধ্যে কাকে মনোনয়ন দিলে জিতে আসা সহজ হবে, সেটি আরও যাচাই করে দেখা হচ্ছে। আবার অনেক আসনে এখন একক প্রার্থী ঘোষণা করা হলে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি ঘটতে পারে, এমন আশঙ্কা থেকে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি বলে দলের নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো বলছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমাদের সঙ্গে যারা যুগপৎ আন্দোলন করেছেন, যেসব আসনে তারা আগ্রহী, সেসব আসনে আমরা কোনো প্রার্থী দিইনি। আমরা আশা করছি, তারা তাদের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করবেন, তখন আমরা চূড়ান্ত করব। ঘোষিত তালিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা হচ্ছে আমাদের সম্ভাব্য তালিকা, এখানে পরিবর্তন আসতে পারে। বিশেষ করে আমাদের যুগপৎ আন্দোলনে যারা শরিক দল আছে, তাদের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা কোনো কোনো আসনে পরিবর্তন আনতে পারি।
বিএনপির এই সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান। তিনি বলেন, ‘আমার যেটা মনে হয়েছে, মিত্র যারা ছিল তাদের জন্য স্পেস রাখা হয়েছে। নির্বাচনকেন্দ্রিক যেই অঙ্গীকারটা ছিল—সকলে মিলে একটা সরকার তৈরি করার চেষ্টা, তার একটা প্রতিফলন প্রাথমিকভাবে দেখা যাচ্ছে। বড় দল হিসেবে বিএনপির এই ছাড়টা অভিভাবকসুলভ হয়েছে। নির্বাচনের জন্য সবাইকে একত্রিত করতে হলে সবার ইচ্ছার কিছু প্রতিফলন ঘটাতে হয় এবং কিছু ছাড় দিতে হয়। সেটার প্রতিফলন এখানে আছে।’
দলীয় প্রার্থিতা চূড়ান্ত করার পাশাপাশি মিত্রদের জন্য আসন বণ্টন নিয়েও কিছুদিন ধরে কাজ করছে বিএনপি। এর অংশ হিসেবে বিএনপির চাওয়া অনুযায়ী অধিকাংশ মিত্র এরই মধ্যে জমা দিয়েছে তাদের প্রার্থী তালিকা। এখন পর্যন্ত বিএনপির কাছে ১০৩ জনের প্রার্থী তালিকা জমা দিয়েছে যুগপতের শরিকরা। এর মধ্যে ১২ দলীয় জোট ২১ জন, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ৯ জন, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য ১৯ জন, এলডিপি ১৩ জন, গণফোরাম ১৬ জন, এনডিএম ১০ জন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) পাঁচজন, বাংলাদেশ লেবার পার্টি ছয়জন এবং বাংলাদেশ পিপলস পার্টি (বিপিপি)) চারজনের প্রার্থী তালিকা দিয়েছে। তবে তালিকা জমা নেওয়ার পর শরিকদের কারও সঙ্গে এখনো বসেনি বিএনপি।
এদিকে এখনো প্রার্থী তালিকা জমা না দিলেও এ নিয়ে বিএনপির সঙ্গে ছয় দলীয় জোট গণতন্ত্র মঞ্চ এবং গণঅধিকার পরিষদের আলোচনা চলছে। বিএনপির সঙ্গে অর্ধশত আসনে ‘সমঝোতা’ চায় গণতন্ত্র মঞ্চ। গত ২৮ অক্টোবর প্রথম দফার বৈঠকে মঞ্চের শীর্ষ ছয় নেতার নির্বাচনী আসন অর্থাৎ তারা কে কোন আসন থেকে নির্বাচন করতে চান, সে ব্যাপারে জানতে চেয়েছে বিএনপি। গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা জানিয়েছেন, শীর্ষ ছয় নেতার আসনের ব্যাপারে সমঝোতা হলে বিএনপির সঙ্গে মঞ্চের বাকি প্রার্থী তালিকা নিয়ে আলোচনা হবে। এ ছাড়া গণঅধিকার পরিষদও শিগগির বিএনপিকে ৩০ জনের তালিকা দিতে পারে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
গণতন্ত্র মঞ্চভুক্ত বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক কালবেলাকে বলেন, গণতন্ত্র মঞ্চের অর্ধশত আসন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে তাদের আলোচনা চলছে। তবে বিএনপিকে তারা এখনো কোনো প্রার্থী তালিকা দেয়নি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপির সঙ্গে আমরা কোনো জোটের চিন্তা করছি না, হলে আসন সমঝোতা হবে।
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান কালবেলাকে বলেন, বিএনপি সরকার গঠন করলে ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের মিত্রদের নিয়ে ‘জাতীয় সরকার’ গঠনের কথা বলেছে। এ ব্যাপারে গণঅধিকার পরিষদ ইতিবাচক। আগামী নির্বাচন একসঙ্গে করার ব্যাপারে এখন বিএনপির সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে। এখনো পর্যন্ত চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তিনি আরও বলেন, বিএনপি আমাদের কাছে প্রার্থী তালিকা চেয়েছিল। আমরা এখন পর্যন্ত সে তালিকা প্রস্তুত করতে পারিনি। আশা করছি, তালিকাসহ শিগগির তাদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হবে।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে শরিকদের জন্য ৫৯টি আসন ছেড়েছিল বিএনপি। এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামীকে ২২টি, এলডিপিকে পাঁচটি, জাতীয় পার্টিকে (জাফর) দুটি, খেলাফত মজলিসকে দুটি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামকে চারটি, গণফোরামকে সাতটি, জেএসডিকে চারটি, নাগরিক ঐক্যকে চারটি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগকে চারটি; কল্যাণ পার্টি, লেবার পার্টি, এনপিপি, বিজেপি ও পিপিবিকে একটি করে আসন ছেড়ে দিয়েছিল বিএনপি।
আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকায় পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জামায়াতকেই বিএনপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মনে করা হচ্ছে। বিএনপি এখন বৃহত্তর নির্বাচনী জোট গঠনের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। জামায়াতের বাইরে থাকা অন্য ইসলামী দল ও আলেমদের পাশাপাশি বামপন্থি কিছু দলকেও পাশে চায় বিএনপি। গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে রাজনৈতিক যোগাযোগ রয়েছে তাদের।
বিএনপির ফাঁকা রাখা আসনগুলো হলো—ঠাকুরগাঁও-২, দিনাজপুর-৫, নীলফামারী-১ ও ৩, লালমনিরহাট-২, বগুড়া-২, নওগাঁ-৫, নাটোর-৩, সিরাজগঞ্জ-১, পাবনা-১; ঝিনাইদহ-১, ২ ও ৪; যশোর-৫, নড়াইল-২; বাগেরহাট-১, ২ ও ৩; খুলনা-১; পটুয়াখালী-২ ও ৩, বরিশাল-৩, ঝালকাঠি-১, পিরোজপুর-১, টাঙ্গাইল-৫, ময়মনসিংহ-১০; কিশোরগঞ্জ-১ ও ৫; মানিকগঞ্জ-১, মুন্সীগঞ্জ-৩; ঢাকা-৭, ৯, ১০, ১৩, ১৭, ১৮ ও ২০; গাজীপুর-১ ও ৬; নরসিংদী-৩, নারায়ণগঞ্জ-৪, রাজবাড়ী-২, ফরিদপুর-১, মাদারীপুর-২; সুনামগঞ্জ-২ ও ৪; সিলেট-৪ ও ৫; হবিগঞ্জ-১; ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও ৬; কুমিল্লা-২ ও ৭; লক্ষ্মীপুর-১ ও ৪; চট্টগ্রাম-৩, ৬, ৯, ১১, ১৪ ও ১৫ ও কক্সবাজার-২।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গণফোরামের জন্য ছাড় দিতে পারে ঢাকা-৭ ও নরসিংদী-৩ আসন। যেখানে সম্ভাব্য প্রার্থী হতে পারেন সুব্রত চৌধুরী ও জগলুল হায়দার আফ্রিক। ২০১৮ সালে গণফোরামকে সাতটির মধ্যে ঢাকা ৬ ও ৭ আসনও ছেড়েছিল বিএনপি। সেবার সুব্রত চৌধুরী ঢাকা-৬ আসন থেকে নির্বাচন করেছিলেন। এবারও বিএনপির কাছে তার জন্য এই আসন চেয়েছে গণফোরাম।
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরকে পটুয়াখালী-৩ আসন দেওয়া হতে পারে। আর ঝিনাইদহ-২ পেতে পারেন তার দলের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান।
চট্টগ্রাম-১৪ আসনে প্রার্থী হতে পারেন এলডিপির প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বা তার বড় ছেলে ওমর ফারুক। অলি এবার নির্বাচন নাও করতে পারেন। আর কুমিল্লা-৭ আসনে লড়বেন দলের মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ। এ ছাড়া চট্টগ্রাম-৩ আসনটি প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. জেনারেল (অব.) চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীর জন্য চেয়েছে এলডিপি।
এ ছাড়া পিরোজপুর-১ আসনে সবুজ সংকেত পেয়েছেন ১২ দলীয় জোটের প্রধান ও জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার। বগুড়া-২ আসনে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না এবং ঢাকা-১৭ আসনে বিজেপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থকে ছেড়ে দিতে পারে বিএনপি।
লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে লড়বেন জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রবের স্ত্রী তানিয়া রব। কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদাও গ্রিন সিগন্যাল পেয়েছেন। তবে বিএনপির কাছে এই আসনটি চেয়েছেন গণতন্ত্র মঞ্চভুক্ত বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ূমও।
বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থীদের পেছনে ফেলে ঢাকা-১৩ আসনে এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি এবং নড়াইল-২ আসনে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের আহ্বায়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ সবুজ সংকেত পেয়েছেন। এসব আসনে বিএনপি কাউকে প্রার্থী করেনি।
খালি আছে ঝালকাঠি-১ আসনও। এ আসন থেকে নির্বাচন করতে চান বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান। একইভাবে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহসভাপতি ও হেফাজত নেতা জুনায়েদ আল হাবিবের জন্য খালি আছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনটি। বিএনপির কাছে জমিয়তের যুগ্ম মহাসচিব রশিদ বিন ওয়াক্কাসের জন্য যশোর-৫ আসনটি চেয়েছে ১২ দলীয় জোট। এ আসনটিও খালি রয়েছে।
লক্ষ্মীপুর-১ আসনে এরই মধ্যে সবুজ সংকেত পেয়েছেন ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম। তিনি কালবেলাকে বলেন, ‘আমাকে অনেক আগেই মৌখিকভাবে কাজ করার জন্য বিএনপির উচ্চমহল থেকে সংকেত দেওয়া হয়েছে। আমি নির্বাচনী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি, লক্ষ্মীপুর-১ আসনে শেষ পর্যন্ত বিএনপির সমর্থন আমার ওপর থাকবে।’ তিনি আরও জানান, ২০১৮ সালেও বিএনপি জোটের প্রার্থী হিসেবে তিনি এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
এ দিকে গণতন্ত্র মঞ্চ জোট শরিক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকের জন্য ঢাকা-৮ আসন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা চাইলেও প্রধান শরিক বিএনপি এ আসন থেকে এরই মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে প্রার্থী করেছে।
এনসিপির সঙ্গেও আসন সমঝোতা নিয়ে বিএনপির আলোচনা চলছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সমঝোতা হলে তাদের ঢাকার দুটিসহ কয়েকটি আসন ছাড়তে পারে বিএনপি। এনসিপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা-১১ থেকে দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এবং ঢাকা-১৮ থেকে মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী নির্বাচন করতে চান।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান কালবেলাকে বলেন, ‘বিএনপি জোটে খুব বেশি কনফিডেন্ট প্রার্থী নেই। শরিক হলেও আপনাকে তো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখাতে হবে, এলাকায় নেটওয়ার্ক দেখাতে হবে, অর্থাৎ এলাকায় আপনার মোটামুটি একটা অবস্থান থাকতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি যে ৬৩টি আসন ফাঁকা রেখেছে, তার সব জোটের জন্য নয়, কিছু কিছু আসন দলের জন্যও রয়ে গেছে। যুগপৎ আন্দোলনের মিত্ররা কিংবা বিএনপির এখন যাদের সঙ্গে জোট করার আলোচনা চলছে, তাদের মধ্যে এত বেশি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নেই; যারা এলাকায় যথেষ্ট প্রভাবশালী এবং শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে। মূলত এলাকায় যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি করতে পারবে, তাদের সংখ্যা খুব বেশি নয়। ফলে সবাই প্রার্থিতা চাইবে না। প্রার্থী হতে হলে নির্বাচনে ন্যূনতম প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে হবে। তা ছাড়া একাদশ সংসদ নির্বাচনে একটি বড় দল বিএনপি জোটে ছিল। তাই আমার মনে হয়, এবার ২৫ থেকে ৩০টি আসন জোটের জন্য ছাড়তে পারে বিএনপি। সব মিলিয়ে শরিকদের সঙ্গে আসন বণ্টন নিয়ে বিএনপিকে খুব বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে না।’
এক প্রশ্নের জবাবে এ রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, ‘জোটের প্রার্থীর বিপরীতে দু-এক জায়গায় বিএনপির পক্ষ থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতেও পারে, তবে সেটা খুব বেশি হবে না। কারণ, দীর্ঘ অপেক্ষার পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিএনপির নেতাকর্মীরা এবার ক্ষমতায় আসার জন্য মুখিয়ে রয়েছে।’
এদিকে নানা কারণে বেশ কিছু আসন খালি রাখা হয়েছে, যেখানে দলীয় প্রার্থী করতে পারে বিএনপি। এর মধ্যে গাজীপুর-১ আসন থেকে দলের ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, কুমিল্লা-২ থেকে দলের কুমিল্লা সাংগঠনিক বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, টাঙ্গাইল-৫ থেকে দলের প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ঝিনাইদহ-৪ থেকে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ মনোনয়ন পেতে পারেন। এ ছাড়া সীমানা জটিলতায় মামলা বিচারাধীন থাকায় বাগেরহাট-১, ২ ও ৩ আসন খালি রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রার্থী তালিকা থেকে একজনের নাম স্থগিত : নির্বাচন সামনে রেখে সোমবার ২৩৭ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা ঘোষণার এক দিন পর গতকাল মঙ্গলবার মাদারীপুর-১ (শিবচর) আসনে দলীয় প্রার্থী কামাল জামান মোল্লার প্রার্থিতা স্থগিত করেছে বিএনপি। দলের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অনিবার্য কারণে ওই আসনে তার প্রার্থিতা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।