অনলাইন জুয়ায় আসক্ত ছিলেন মাহবুব নামের এক যুবক। স্ত্রীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে মামলা হয় তার বিরুদ্ধে। মামলার ১০ দিন আগে মাহবুবকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে তার স্ত্রীর পরিবারের অভিযোগ, তিনি নিজেই স্ত্রীকে খুন করেছেন। পরে ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে চালিয়েছেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, অনলাইন জুয়ায় আসক্ত মাহবুব স্ত্রী আকলিমা আক্তারকে (১৯) দিনের পর দিন শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন। নির্যাতনের বিষয়ে ভাইদেরও জানিয়েছিলেন তিনি। নির্যাতন করায় প্রায়ই কান্নাকাটি করতেন। ২৬ মে ঝুলন্ত অবস্থায় আকলিমার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
রংপুরে অনলাইন জুয়ার জন্য ১০ হাজার টাকা চেয়ে না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে দাদিকে গলা কেটে হত্যা করেন ১৯ বছর বয়সী অনিক হাসান হৃদয় নামের এক তরুণ। গ্রেফতারের পর আদালতে স্বীকারোক্তি দেন তিনি।
শহর থেকে গ্রাম- সব জায়গায় এখন অনলাইন জুয়া ছড়িয়ে পড়েছে। অনলাইনে লোভনীয় বিজ্ঞাপন দেখে কিংবা পরিচিতজনের মাধ্যমে মোবাইলে খেলা শুরু করে, যা অল্প দিনে নেশায় পরিণত হয়। অনলাইন জুয়ার সঙ্গে সহজেই জড়িয়ে পড়ছে যুবসমাজ ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
এছাড়া দেশে ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা ও স্মার্টফোনের ব্যাপক ব্যবহার তরুণদের মধ্যে অনলাইন জুয়ার আশক্তি বাড়িয়ে তুলেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি এখন নীরব মহামারিতে পরিণত হয়েছে, যা সমাজ ও পরিবারকে ভেঙে দিচ্ছে। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজপড়ুয়া ছাত্রদের মধ্যে বেটিং অ্যাপ ও অনলাইন ক্যাসিনোর প্রতি আগ্রহ বেড়েছে মারাত্মক হারে। কেউ কেউ শুরু করছে কৌতূহলবশে, কিন্তু দ্রুতই পড়ে যাচ্ছে আসক্তির ফাঁদে।
জাগো নিউজের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, আসক্তির ফাঁদে অনলাইন জুয়ায় যুক্ত হয়ে টাকা খোয়াচ্ছেন তরুণ-যুবকরা। ধারদেনা বাড়ছে একশ্রেণির তরুণ-যুবকদের। আবার টাকার জন্য আপনজনকে খুন ও নিজ বাসায় চুরি করতেও দ্বিধাবোধ করছেন এসব তরুণ-যুবক। জুয়ার প্রচারণায় কম্পিউটারের দোকানে বা ঘরে বসে কাজ করছেন স্থানীয় এজেন্টরা। অবৈধ টাকা আয় করে এজেন্টরা কোটিপতি বনে গেলেও জুয়াড়িরা লাখ লাখ টাকা হেরে নিঃস্ব হচ্ছে। জুয়ার নেশায় ব্যবসায়ী ব্যবসার মূলধন দিয়ে, কৃষকের সন্তান জায়গা-জমি, বসতবাড়ি পর্যন্ত বিক্রি করে জুয়া খেলছে।
মনোরোগ চিকিৎসকরা বলছেন, অনলাইন জুয়া আসক্তির একটি ভয়ংকর রূপ। এটি শুধু আর্থিক ক্ষতির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, মানসিক চাপ, বিষণ্নতা ও আত্মহত্যার প্রবণতাও বাড়ায়।
দেশে অনলাইন জুয়া আইনত নিষিদ্ধ হলেও ভিপিএন ও আন্তর্জাতিক অ্যাপসের মাধ্যমে সহজেই এসব প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করা যাচ্ছে। সাইবার অপরাধ দমন বিভাগ জানিয়েছে, এ বিষয়ে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে, তবে প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
অনলাইন জুয়া শুরু যেভাবে
এক সময় ‘জুয়া’ শব্দটি শুধুই বোর্ড বা তাসের খেলায় সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে স্মার্টফোন আর ইন্টারনেটের মাধ্যমে এ জুয়া পৌঁছে গেছে হাতের মুঠোয়। খেলার ফলাফলের ওপর বাজি ধরা, ভার্চুয়াল ক্যাসিনো, কার্ড গেম, স্লট মেশিন- এসব এখন এক ক্লিকেই হাতের নাগালে। ভিপিএনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বেটিং সাইট ব্যবহার করা যাচ্ছে অবলীলায়
তরুণ প্রজন্মের অনেকে এখন অনলাইন জুয়া বা বেটিংয়ে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। এই অভ্যাস শুধু ব্যক্তি নয়, পুরো পরিবারকেই অর্থনৈতিক ও মানসিক দিক দিয়ে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। দেশে অনলাইন জুয়ার ভয়াবহ বিস্তারগত কয়েক বছরে বাংলাদেশে অনলাইন জুয়ার বিস্তার বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে।
পরিসংখ্যান বলছে ভয়াবহ চিত্র
ঢাকা শহরের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১৮-৩০ বছর বয়সী অন্তত ৩২ শতাংশ তরুণ কোনো না কোনোভাবে অনলাইন জুয়ার সঙ্গে যুক্ত। প্রতি মাসে গড়ে একজন অনলাইন জুয়াড়ি ৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত হারাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেটিং টিপস পেজের সংখ্যা ৫০০’র বেশি, যেগুলো তরুণদের প্রতিনিয়ত উৎসাহিত করছে জুয়ায় নামতে।
জীবনভর আফসোস
ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের একজন মেধাবী ছাত্র ছিলেন রিফাত (ছদ্মনাম)। প্রথমে ইউরো কাপের সময় বন্ধুর মাধ্যমে বেটিং শুরু করেন। শুরুতে কিছু টাকা জিতে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। এরপর দেড় বছরে ৯ লাখ টাকা হারিয়ে ফেলেন। ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়লে পরিবারে বিবাদ শুরু হয়, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কয়েক সেমিস্টার ড্রপ দেন।
রিফাত বলেন, ‘আমি শুধু একবারেই জীবনটা শেষ করে ফেলেছি। জেতার নেশায় নিজের বিবেক হারিয়ে ফেলেছিলাম। অনলাইন জুয়ার ভয়াবহ প্রভাব শুধু অর্থনৈতিক নয়, এটি মানসিক স্বাস্থ্যকেও চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তরুণ সমাজ লোভে পড়ে এসব জুয়ার সঙ্গে আসক্ত যেন না হয়।’
জুয়া খেলেই নিঃস্ব
অনলাইন জুয়া খেলে নিঃস্ব ও পাগলপ্রায় হয়ে এখন মানসিক চিকিৎসকের পরামর্শ নিচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক ছাত্র।
সাবেক ওই ছাত্র জাগো নিউজকে বলেন, ‘শুরুতে ভেবেছিলাম শুধু মজা করে খেলব। এক বন্ধুর মাধ্যমে শুরু। কিন্তু একসময় দিনে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা হারাচ্ছিলাম। পরিবারের সঞ্চয়ও শেষ করেছি। একদিন খেলতে না পারলে পাগলের মতো মনে হতো। ঘরের জিনিসপত্রও চুরি করে বিক্রি করেছি। অনেকের কাছ থেকে ধারদেনাও করেছি।’
বিবাহ বিচ্ছেদ করেছেন স্ত্রী
ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ৮০ হাজারের বেশি বেতনে চাকরি করতেন সোহেল রানা (ছদ্মনাম)। অনলাইনভিত্তিক জুয়া ও ক্যাসিনো খেলতে গিয়ে ব্যাংকে জমানো ১৭ লাখ টাকা, স্ত্রীর গহনা বিক্রি করে ৫২ লাখ ও বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া ২০ লাখ টাকা খুইয়েছেন। মানসিক চাপে হয়েছেন মাদকাসক্ত। হারিয়েছেন চাকরি। এছাড়া আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব অনেকের কাছ থেকেই করেছেন ধার-দেনা। সবকিছুই খুইয়েছেন অনলাইন জুয়ায়। ঋণের চাপে বিক্রি করে দিয়েছেন ফ্ল্যাট। স্ত্রী তাকে তালাক দিয়ে চলে গেছেন। আজ তিনি নিঃস্ব, জীবন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।
সোহেল রানা বলেন, ‘আমি বুঝতে পারিনি আমাকে কী নেশায় পেয়েছিল। কেউ এ পথে পা দেবেন না। মৃত্যুর চেয়েও ভয়ংকর এ পথ।’
পরিবার জানে ফ্রিল্যান্সিং, ছেলে খেলেছে জুয়া
রাজধানীর মিরপুরের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাজ্জাদুর রহমান অনিক (ছদ্মনাম)। কথা হয় তার মায়ের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ভেবেছিলাম আমার একমাত্র ছেলে ফ্রিল্যান্সিং করে। অনেক টাকা উপার্জন করে মা-বাবাকে দিবে। কিন্তু ও খেলতো জুয়া। অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে বাসা থেকে টাকা চুরি করেছে, আমার গহনা নিয়ে বিক্রি করেছে।’
অনিকের মা আরও বলেন, ‘সরকারের উচিত অতি দ্রুত এই সমস্ত অনলাইন জুয়াসহ অবৈধ পথগুলো বন্ধ করা।’
প্রথমে লোভনীয় অফার, পরে সব শেষ
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজমুল হাসান সাগর (ছদ্মনাম)। তিনি বলেন, ‘আমার এক বন্ধু একদিন দেখিয়ে দিল। আমি দুই হাজার টাকা দিয়ে নয় হাজার টাকা জিতেছিলাম। পরে শুধু হেরেছি লাভের আশায়। আমার বাবা একদিন আমাকে দুই লাখ টাকা দিয়েছিল একটি ব্যাংকে জমা দেওয়ার জন্য। সেই টাকা অনলাইন ক্যাসিনোতে ব্যয় করে হেরে গিয়েছিলাম। আজ আমি অনুতপ্ত। আমাদের পরিবারের দুরবস্থার জন্য আমি দায়ী।’
অনলাইন জুয়ায় জড়িত হাজারের বেশি এমএফএস এজেন্ট
অনলাইন জুয়ার লেনদেনে জড়িত এক হাজারের বেশি মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) এজেন্টকে শনাক্ত করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তাদের ধরতে ঢাকাসহ সারাদেশে অভিযানে নেমেছে সংস্থাটি।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জাগো নিউজকে বলেন, জারি হওয়া সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫ অনুসারে অনলাইন জুয়া ও বেটিংয়ের বিরুদ্ধে সারাদেশে জোরদার অভিযান শুরু হয়েছে। এসব এজেন্টের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তাদের লাইসেন্স বাতিল ও অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করার লক্ষ্যে অপরাধে জড়িত এজেন্টদের তালিকা বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে।
জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করলে বিনা নোটিশে বন্ধ হবে পোর্টাল
অন্তর্বর্তী সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, সরকার সতর্ক করার পরও অনেক গণমাধ্যমের পোর্টালে এখনো জুয়া ও অনিরাপদ কনটেন্টের বিজ্ঞাপন প্রচার হচ্ছে। এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করলে যে কোনো মুহূর্তে বিনা নোটিশে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়া হবে।
অনলাইন জুয়া বন্ধে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরে তিনি জানান, সরকার ওয়েব ক্রলিং (ইন্টারনেট থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি) করে দেখেছে, কোনো কোনো এমএফএস (মোবাইলভিত্তিক আর্থিক লেনদেন সেবা) অ্যাকাউন্টের সঙ্গে জুয়ার সম্পর্ক আছে।
সামাজিক ব্যাধিতে রূপ নিয়েছে অনলাইনে জুয়া খেলা
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ওমর ফারুক জাগো নিউজকে বলেন, অনলাইনে জুয়া খেলাটা সামাজিক ব্যাধিতে রূপ নিয়েছে। তথ্য-প্রযুক্তির সহজলভ্যতার কারণে সর্বত্র যুবসমাজসহ সবার মধ্যে এই ব্যাধি ছড়িয়ে পড়েছে। এ থেকে উত্তরণে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি। এছাড়া সরকারের সাইবার ইউনিটের নজরদারি বাড়াতে হবে। জোরদার করতে হবে আইনের যথাযথ প্রয়োগ।
আইটি বিশেষজ্ঞ ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর (সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল) তানভীর হাসান জোহা জাগো নিউজকে বলেন, ইদানীং গ্রামগঞ্জে দেখা যাচ্ছে অনলাইনে লাভের আশায় জুয়া খেলে ভিটে-বাড়ি বিক্রি করে দিচ্ছেন। এসব অ্যাপস চীন ও নাইজেরিয়া থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। অনেক সময় বাংলাদেশ পুলিশ তাদের গ্রেফতারও করে। কিন্তু জামিন পেয়ে তারা অন্য দেশে গিয়ে এসব প্রতারণা করে। জামিন হওয়ার কারণ হলো পুলিশের দুর্বল তদন্ত। যদি ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় তাহলে জামিনের বদলে শাস্তি নিশ্চিত হয়। কিন্তু ৭২ মাসও গড়ায় এসব তদন্ত। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে এসব প্রতারণা কমে যাবে।
সচেতনতার বিষয়ে এ আইটি বিশেষজ্ঞ বলেন, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ওটিপি নিয়ে একটা সময় অনেক প্রতারণা হয়েছে। প্রচারণার জন্য ওটিপি নিয়ে এখন আর হ্যাক হয় না। এজন্য এসব অ্যাপসে প্রতারণা থেকে রক্ষা পেতে প্রচারণা বাড়াতে হবে।
সিআইডি সাইবার পুলিশ সেন্টারের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. জাহিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, বেটিং অ্যাপে জুয়ার ফাঁদ যে শুধু শহরকেন্দ্রিক তা নয়, শহর ছাপিয়ে তা এখন দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়েছে। অতি লোভে পড়ে জুয়ার ফাঁদে পা দিয়ে সর্বস্ব হারাচ্ছে সাধারণ মানুষ। অনলাইন জুয়ার কারণে দেশের বাইরে অর্থপাচারের আশঙ্কা বেড়ে যায়। বেশ কয়েকটি মামলা চলমান সিআইডির কাছে। এসব মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে বড় একটি ড্রাইভ দেওয়া হবে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, জুয়া প্রতিরোধ শুধু প্রযুক্তিগত নয়, এটি সামাজিক আন্দোলনও। তরুণদের মানসিকতা পরিবর্তন ও সচেতনতা বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে সাইবার নিরাপত্তা জোরদার করে এই অপরাধ ঠেকাতে হবে।
অনলাইন জুয়া বন্ধে কী করছে বিটিআরসি
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. এমদাদ উল বারী জাগো নিউজকে বলেন, অনলাইন জুয়া বন্ধে কোনো একটি এজেন্সি একা কাজ করতে পারবে না। কারণ বিটিআরসির দায়িত্ব পুলিশিং নয়, বিটিআরসি টেকনিক্যাল রেগুলেটর ও রেগুলেশন দিয়ে থাকে। বিটিআরসির টেকনিক্যাল সক্ষমতাও নেই। তবে অনলাইন জুয়া নিয়ে সম্প্রতি অন্য স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে মিটিং করা হয়েছে। যার যার স্থান থেকে সমন্বিতভাবে প্রয়াস দেওয়ার চেষ্টা করছি। বিভিন্ন ল’ এনফোর্সমেন্ট এজেন্সি (আইন প্রয়োগকারী সংস্থা) প্রথমে আইডেন্টিফাই করে কোথা থেকে জুয়া চলছে। তারা বিটিআরসিকে জানালে অপারেটরদের নির্দেশ দেওয়া হয় সাইট বন্ধ করার। সম্প্রতি এই কাজটি গুরুত্ব দিয়ে চলছে।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান আরও বলেন, দেশের সব মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের সঙ্গে বৈঠক করেছি। বৈঠকে ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধিরাও ছিলেন। অনলাইন জুয়া বন্ধে বিটিআরসির পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
জুয়ার শাস্তি কোটি টাকা জরিমানা
সাইবার স্পেসে জুয়া, জালিয়াতি ও প্রতারণার শাস্তি হবে দুই বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত। সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ-২০২৫ এর ২০ ধারা অনুযায়ী এই শাস্তির বিধান রয়েছে।